আমেরিকা নয়া শুল্কনীতি ঘোষণার পরে দর কষাকষির চেষ্টা শুরু করেছে বিভিন্ন দেশ। হোয়াইট হাউসের অর্থনৈতিক কাউন্সিলের অধিকর্তা কেভিন হ্যাসেট জানিয়েছেন, ৫০টিরও বেশি দেশ আমেরিকার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। ট্রাম্পের শুল্কনীতির প্রভাব আমেরিকার বাজারেও পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে। বিশেষ করে ‘পাল্টা শুল্কের’ জেরে আমেরিকার বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে সেই সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দিয়েছেন হোয়াইট হাউসের এই আধিকারিক। আমেরিকার অর্থনৈতিক কাউন্সিলের অধিকর্তার দাবি, ওই দেশগুলি ট্রাম্পের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এবং দর কষাকষি করতে চাইছে। ওই দেশগুলি বুঝতে পেরেছে যে তারা বেশি কর নিচ্ছে, তাই যোগাযোগ করছে।
সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, আগামী বুধবার দেশের বিভিন্ন রফতানি সংস্থাগুলির সঙ্গে বৈঠকে বসতে পারেন ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল। আমেরিকার শুল্কনীতি সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা হতে পারে ওই বৈঠকে। বস্তুত ভারতের মোট রফতানির প্রায় ১৮ শতাংশ যায় আমেরিকার বাজারে। আমদানির ক্ষেত্রে দেশীয় বাজারের ৬.২২ শতাংশ মার্কিন পণ্য। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য হয় ১০.৭৩ শতাংশ। সম্প্রতি নয়া মার্কিন শুল্কনীতিতে আমেরিকার বাজারে ভারতীয় পণ্য রফতানির জন্য ২৬ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প। এই সিদ্ধান্তের ফলে চিংড়ি, কার্পেট, চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং সোনার গহনা রফতানিকারকেরা ধাক্কা খেতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে সরকার যাতে কোনও আর্থিক সুবিধা দেয়, নরেন্দ্র মোদীর সরকারের কাছে ইতিমধ্যে সেই অনুরোধ জানিয়েছে রফতানি সংস্থাগুলি।
ভারত এবং আমেরিকার বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আগেই দু’দেশের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। মার্কিন প্রতিনিধিরা ঘুরে গিয়েছেন ভারত থেকে। তবে ভারত সরকারের আধিকারিক সূত্রকে উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ট্রাম্পের ২৬ শতাংশ শুল্কের পরে কোনও মার্কিন পণ্যে ‘পারস্পরিক শুল্ক’ চাপানোর পরিকল্পনা নেই মোদী সরকারের।
ঘটনাচক্রে রবিবারই ব্লুমবার্গের একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, আমেরিকার পণ্যের উপর থেকে সব শুল্ক প্রত্যাহার করার ভাবনাচিন্তা করছে ভিয়েতনাম। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, তাইওয়ানও একই ধরনের পদক্ষেপের কথা ভাবছে। তারা চাইছে নিজেদের দেশে মার্কিন সংস্থাগুলি আরও বেশি বিনিয়োগ করুক। কোন কোন দেশ শুল্কের বিষয়ে আমেরিকার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, তা অবশ্য খোলসা করেননি হোয়াইট হাউসের আধিকারিক।
আরও পড়ুন:
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ইতিমধ্যে আমেরিকাকে চিঠি পাঠাতে উদ্যোগী হয়েছে। সে দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম রবিবার জানিয়েছেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তারা আমেরিকায় দু’টি চিঠি পাঠাবে। তার মধ্যে একটি চিঠি ইউনূস পাঠাবেন ট্রাম্পকে। অন্যটি বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রক থেকে পাঠানো হবে আমেরিকার বাণিজ্য দফতরে। আমেরিকার বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের উপর ৩৭ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক চাপানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
বস্তুত, নয়া শুল্কনীতি ঘোষণার সময়ে ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, ৫ এপ্রিল থেকে বিভিন্ন দেশের পণ্যের উপর ১০ শতাংশ ন্যূনতম শুল্ক কার্যকর হবে। ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ওই ন্যূনতম শুল্ক নেওয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে। আমেরিকার বিভিন্ন সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর এবং শুল্ক (কাস্টম্স) গুদামে ওই একতরফা শুল্ক নিতে শুরু করেছেন মার্কিন আধিকারিকেরা।