Advertisement
E-Paper

একশোরও বেশি জেলায় খরা, নষ্ট হচ্ছে ফসল

৭১ বছর আগে এই রকম তাপমাত্রা ছিল। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের কয়েক বছর পরে। তখন দেশ ছিল গরিব। আয়োজনের এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিল সীমিত। 

শর্মিলা রায় পোমো

শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৯ ০৩:০৪
রুক্ষ: খরায় ফুটিফাটা মাটি। ফ্রান্সের করসিকায়। এএফপি

রুক্ষ: খরায় ফুটিফাটা মাটি। ফ্রান্সের করসিকায়। এএফপি

২০০৩ সালে ফরাসিদেশে এই রকম না হলেও বেশ ‘ভাল গরম’ পড়েছিল। তখন বেশ কয়েক হাজার বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা প্রাণ হারান নিজেদের বাড়িতে অথবা বৃদ্ধাবাসে। এ বছর উত্তরাঞ্চলের ৪২ থেকে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা হবে— আগে থেকে জানা ছিল বলে প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হয়েছে। নিন্দুকেরা অবশ্য অন্য কথাও বলছেন। জরুরি-চিকিৎসা বা ইমার্জেন্সি সেবা যে ডাক্তারেরা করেন, উপযুক্ত ওষুধ, রোগীদের রাখার উপযুক্ত ব্যবস্থার অভাব, চিকিৎসকের অভাব ইত্যাদি কারণে সম্প্রতি তাঁরা দেশ জুড়ে ধর্মঘট ও রাস্তায় মিছিল করেন। দেশজোড়া এই অসন্তোষের সময়ে সরকারের শুভ বুদ্ধি ও কর্মতৎপরতার নজির রাখতে সাহায্য করল এই ‘শুষ্ক তাপ’।

আমার কয়েক জন প্রাচীন বন্ধু জানালেন, ৭১ বছর আগে এই রকম তাপমাত্রা ছিল। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের কয়েক বছর পরে। তখন দেশ ছিল গরিব। আয়োজনের এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিল সীমিত।

আমার মনে পড়ল ১৯৭৬ সালের কথা। সদ্য তখন বৃত্তি নিয়ে পড়তে এসেছি। বেশ জমিয়ে গরম পড়েছিল দেখে ভারী আশ্বস্ত লেগেছিল আমা হেন বীরভূমের বিটির। ওই বছর গরমে ব্রিটানি অঞ্চলে একটি দ্বীপে ‘সরবন’ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য তৈরি বিশাল ছাত্রাবাসে ছুটি কাটাতে গেলাম। জানলাম যে গরমে দুপুরে সমুদ্রস্নান বারণ। দ্বীপের অধিবাসীরা, অধিকাংশই মৎস্যজীবী, আমাদের আনাজ, ফল ও মাছ দিতেন বিনা পয়সায়। চোখ কুঁচকে বলতেন, ‘‘গরম হলে তো ভাল, আঙুরের রস জমবে বেশ। তাই মদ-ও হবে ভাল।’’ আমি দেশের জন্য মন কেমন করে ভাবতাম, এই গরমেই তো আমাদের শিক্ষক গুরুদেব জোব্বা পরে বারান্দায় বসে লিখতেন কত গান, কত কবিতা! ১৯২৭-এর শান্তিনিকেতনে লেখা সেই আশ্চর্য গানটি গুনগুনিয়ে উঠত মনে, ‘মধ্যদিনে যবে গান বন্ধ করে পাখি...।’

এ বছরের গরম কয়েকটি কারণে অনেককেই ভাবিয়ে তুলেছে। অতীতে ভূমধ্যসাগরের উপকূলবর্তী ও দক্ষিণ ফ্রান্সেই আবহাওয়া গরম হত, বনে আগুন লাগত বা এখনও লাগে, সবাইকে সতর্ক করা হয় তাই। তবে এ বছর গরমের প্রকোপ উত্তরাঞ্চলে। ১০০-র বেশি জেলায় খরা ঘোষণা করা হয়েছে। খেতখামারে আগুন ধরছে, শস্য নষ্ট হচ্ছে বৃষ্টির অভাবে। সকাল ১০টা থেকে থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খেতে জল দেওয়া নিষিদ্ধ। কারণ, খুব গরমে মাটি তাড়াতাড়ি জল শুষে নেয় এবং দিনের বেলা অন্য কাজে জলের ব্যবহার বেশি।

প্রকৃতিদেবী আসলে মাথা নেড়ে জানিয়ে দিয়েছেন যে এখন জেগে ওঠার সময়, অনেক সময় নষ্ট হয়েছে পৃথিবীতে, নানা ভাবে শুধুমাত্র মুনাফার জন্য জমিতে দেওয়া হয়েছে পোকামাকড় মারার যে ওষুধ, তার ফলে ফ্রান্সের উত্তর-পশ্চিম, ইংল্যান্ডের কর্বি অঞ্চলে হাত অথবা পা-হীন শিশু জন্মেছে, বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারে কৃষকেরা, গ্রামের মানুষেরা মারা যাচ্ছেন। পরমাণু কেন্দ্রগুলি আশপাশের জলকে দূষিত করছে, কারখানাগুলি চারপাশের আবহাওয়াকে বিষাক্ত করছে, সর্বোপরি এত গাড়ির ব্যবহারে কার্বনডাইঅক্সাইড গ্যাস তৈরি হয়ে আমাদের বাতাস দূষিত।

এই গরমের মধ্যেই ২৩ তারিখ তিনটি খুব কম বয়সি ছেলেমেয়ে ফরাসি সরকারের দফতরে এক সভায় দৃপ্ত গলায় ঘোষণা করল, ‘‘আমরা তোমাদের ছেলেপুলে, নাতিনাতনি, আমাদের বাঁচতে দাও।’’ তাদের পুরোধা ১৬ বছরের একটি মেয়ে—গ্রেটা থুনবার্গ। সুইডেনের এই স্কুলের পড়ুয়া পরিবেশের সঙ্কট সম্পর্কে সকলকে সচেতন করছে। বড় সংস্থার মালিক, সাংবাদিক, বিশেষ করে রাজনৈতিক জগতের রথীমহারথীদের সতর্ক করছে এদের সংগঠন, ‘ইউথ ফর ক্লাইমেট’। ফ্রান্সের বিজ্ঞানীরা আলোচনায় বসছেন এদের সঙ্গে। পরিবেশসচেতন বিজ্ঞানী, অধ্যাপক, কৃষিজীবী, শিল্পী ও মহাকাশ বিজ্ঞানীও এঁদের পাশে। মহাকাশ বিজ্ঞানী অরেলিয়ান বারো কয়েক দিন আগে বলেছেন, ‘‘ডায়নোসোরাসরা জানত না ওরা মারা যাবে, আমরাও জেনেশুনে কিছু করছি না।’’

প্রকৃতিদেবী হয়তো গুনগুন করছেন: ‘চলে গেলে জাগবি যবে ধন রতন বোঝা হবে বহন করা হবে যে দায়।’

লেখক শিল্পী ও শিক্ষক

Environment Heatwave France
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy