অগ্নিগ্রাসে: নিউ সাউথ ওয়েলসে দাবানল নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় দমকলকর্মী। বুধবার। এএফপি
শহরে দাবানল। তাই ঘর ছেড়ে সৈকতে ঠাঁই নিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার মাল্লাকুটার বাসিন্দারা। তবে ভাবেননি যে শেষমেশ সেই ঠাঁইটুকুও হারাতে হবে।
মঙ্গলবার রাতে আচমকা আগুন এতটাই বেড়ে যায় যে আতঙ্কে নৌকায় বাকি রাতটা কাটাতে বাধ্য হয়েছেন ঘরছাড়ারা। তাঁদেরই এক জন মার্ক ট্রেগেলাস। ভিক্টোরিয়া প্রদেশের মাল্লাকুটার এই বাসিন্দা বলেছেন, ‘‘তখন অনেক রাত। হঠাৎ আকাশটা যেন দপ করে জ্বলে উঠল। চারপাশের অন্ধকারটা ফিকে হয়ে গেল এক লহমায়। বুঝলাম, আগুন এ বার আমাদের দিকেই ধেয়ে আসছে। পালাবার সব পথ বন্ধ। সৈকতে তখন নৌকায় ওঠার হুড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছে। নৌকায় বসেই দেখতে পেলাম, আকাশ গনগনে লাল। হাওয়ার সঙ্গে নেমে আসছে ছাই আর কাঠকয়লার অজস্র জ্বলন্ত টুকরো। ঠিক যেন আগ্নেয়গিরি ফেটে পড়েছে।’’
তবে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হাওয়া গতিপথ বদলানোয় বেঁচে গিয়েছেন মার্কেরা। আগুন থমকে গিয়েছে। তবু আতঙ্ক কাটছে না। পরিস্থিতি সামাল দিতে মঙ্গলবার রাতে সেনা নামিয়েছে প্রশাসন। তারা বিচ্ছিন্ন এলাকাগুলি থেকে বিমান ও নৌকার মাধ্যমে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন। একই ভাবে চলছে জল, খাবার ও অন্যান্য রসদ পৌঁছনোর কাজ। তবে সপ্তাহের শেষে আগুন ফের বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে প্রশাসন।
নিউ সাউথ ওয়েলসে (এনএসডব্লিউ) বুধবার আরও এক জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। পুলিশ জানিয়েছে, গাড়ির মধ্যেই দগ্ধ হয়ে মারা গিয়েছেন ওই ব্যক্তি। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১৫। মঙ্গলবার রাতে লেক কনজোলায় পুড়ে গিয়েছে অন্তত ৫০টি বাড়ি ও বেশ কিছু গাড়ি। স্থানীয় বাসিন্দা ৭২ বছরের এক বৃদ্ধের খোঁজ মিলছে না বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বুধবার শুধু এনএসডব্লিউ-তে নতুন করে ১০০টি আগুন লাগার খবর পেয়েছে প্রশাসন। গত তিন মাস ধরে দাবানলে অস্ট্রেলিয়ার যে চারটি প্রদেশ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম এনএসডব্লিউ আর ভিক্টোরিয়া।
প্রশাসনের তরফে এখনও পর্যন্ত যে ক্ষয়ক্ষতির খতিয়ান প্রকাশ করা হয়েছে তাতে জানা গিয়েছে, আগুনে পুড়ে খাক ৫০ লক্ষ হেক্টর জমি। হাজারেরও বেশি বাড়ি ভস্মীভূত। স্তন্যপায়ী, সরীসৃপ, কীটপতঙ্গ মিলিয়ে অন্তত ১২ কোটি বন্যপ্রাণী মারা গিয়েছে। মৃত্যু হয়েছে কয়েক হাজার কোয়ালার। বাসভূমি হারিয়েছে আরও কয়েক লক্ষ। কালো ধোঁয়ায় ঢেকেছে রাজধানী ক্যানবেরার আকাশ। সেখানে বাতাসে দূষণের মাত্রা বিপদসীমার ২১ গুণ বলে সতর্ক করেছেন পরিবেশবিদরা! বুধবার নিউজিল্যান্ড থেকেও দেখা গিয়েছে সেই কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী।
পরিবেশবান্ধব নীতি না নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন ইতিমধ্যে সমালোচিত। দেশ জুড়ে দাবানল নিয়ন্ত্রণে সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে বার বার। এ বার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে সর্বোচ্চ পর্যায়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ান গ্রিন পার্টির নেতা রিচার্ড ডি নাটালি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy