বাংলাদেশে কি মেয়েরা আর খেলতেও পারবে না? এ কোন পথে এগোচ্ছে বাংলাদেশ? বাংলাদেশবাসীর উদ্দেশে অডিয়োবার্তায় সেই প্রশ্ন তুলে দিলেন সে দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার আওয়ামী লীগের সমাজমাধ্যমের পাতা থেকে তাঁর অডিয়োবার্তা সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। সেখানে একটি পর্যায়ে হাসিনা বলেন, “আমাদের দেশে মেয়েরা (ফুটবল) খেলতে পারছে না। কেন? মেয়েদের খেলার অধিকার নেই কেন!”
বাংলাদেশে মহিলা ফুটবল দলে সম্প্রতি কোচের সঙ্গে কয়েক জন সিনিয়র ফুটবলারের মনোমালিন্য তৈরি হয়েছে। মহিলা ফুটবলারদের ড্রেসিং রুমের সেই উত্তাপের আঁচ পাওয়া গেল বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হাসিনার গলাতেও। মহিলা ফুটবলারদের আবেগকে নতুন মোড়কে হাসিনা তুলে ধরলেন তাঁর ৫২ মিনিটের অডিয়োবার্তায়। শুধু বাংলাদেশের মহিলা ফুটবলারদেরই নয়, ছুঁয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেন সে দেশের আপামর নারী সমাজকেই। বাংলাদেশে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে নারী-পুরুষে ভেদাভেদের অভিযোগও উস্কে দিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’র প্রতিবেদন অনুসারে, সে দেশের মহিলা ফুটবল দলের ১৮ জন ‘বিদ্রোহ’ ঘোষণা করেছেন কোচ পিটার বাটলারের বিরুদ্ধে। কোচ বাটলারের সঙ্গে তাঁরা অনুশীলন ‘বয়কট’ করেছেন বলে শোনা যাচ্ছে। ফলে মাঠে অনুশীলনের সময়েও তাঁদের দেখা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে নিজেদের অবস্থানের কথাও জানিয়ে দিয়েছেন ‘বিদ্রোহী’ ১৮ ফুটবলার। এই জটিলতার মধ্যে বাংলাদেশি মহিলা ফুটবলারদের হুমকির মুখেও পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ। বাংলাদেশি ফরওয়ার্ড মাতসুশিমা সুমাইয়া সমাজমাধ্যমে দাবি করেছেন, গত কয়েক দিনে অসংখ্যবার ধর্ষণ এবং খুনের হুমকি পেয়েছেন তিনি।
বুধবার বাংলাদেশের মহিলা ফুটবল দলের প্রসঙ্গ টেনে নারী-পুরুষ সমানাধিকারের পক্ষেও সওয়াল করেন হাসিনা। তিনি বলেন, “আমাদের সময়ে ক্রিকেট, ফুটবল, হকিতে ছেলে-মেয়ে উভয়েই সুযোগ পেত। আমাদের সময়ে প্রাথমিক স্কুলে মেয়েদের জন্য বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ টুর্নামেন্ট এবং ছেলেদের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব গোল্ডকাপ টুর্নামেন্ট চালু করা হয়। ছোট্টবেলা থেকেই যাতে তারা খেলতে পারে সেই সুযোগ আমরা করে দিয়েছি।”
এ কথা বলার পরেই বাংলাদেশের সে কাল-এ কালের ফারাক বোঝানোর চেষ্টা করেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “আজ কী দুর্ভাগ্য আমাদের! মেয়েরা ফুটবল খেলে অনেক দেশে জয়ী হয়ে এসেছে। বাংলাদেশের সুনাম করে এসেছে। আজ আমাদের দেশে তাঁরা খেলতে পারছে না। কেন? মেয়েদের খেলার অধিকার নেই কেন!”
বাংলাদেশের মহিলা ফুটবলারদের খেলতে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ তোলেন আওয়ামী লীগের নেত্রী। বাংলাদেশে মেয়েদের ‘অবমাননা’ করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ তাঁর। হাসিনার কথায়, “মায়ের পেটেই সন্তান জন্ম নেয়। সেই মায়ের জাতিকে অবমাননা কেন? খেলাধুলো, সাহিত্য, সংস্কৃতিচর্চা তো সকলের অধিকার। এতে তো নারীপুরুষের ভেদাভেদ থাকতে পারে না। ইসলাম কখনও সে কথা বলে না।”
আওয়ামী লীগের সরকারের পতনের ছ’মাস অতিক্রান্ত হল বুধবার। ঠিক সেই দিনেই ৫২ মিনিটের এই অডিয়োবার্তায় ফুটবল-কাণ্ডের পাশাপাশি বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথাও তুলে ধরেন হাসিনা।