বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং এবং বাংলাদেশ পুলিশের ধৃত আইজি চৌধুরী আবদুল্লা আল মামুনের বিরুদ্ধে জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সোমবার রায় ঘোষণা করেছে পুনর্গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল। টানা চার মাস সাত দিনের শুনানিপর্বের শেষে ঘোষিত রায়ে হাসিনা ও কামালকে মৃত্যুদণ্ড এবং মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
তবে আইনি প্রক্রিয়ায় এখনও এটি শেষ ধাপ নয়— পরবর্তী পর্যায়ে রয়েছে আরও কয়েকটি পদক্ষেপ। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী পরবর্তী ধাপ হচ্ছে আপিল। আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩ অনুসারে, ট্রাইবুনালের রায়ের বিরুদ্ধে যে কোনও দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করতে পারেন। একই ভাবে রাষ্ট্র বা অভিযোগকারী পক্ষও রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারে। তবে পলাতক সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে প্রথমে আত্মসমর্পণ করতে হবে। তার পরেই তাঁর পক্ষে আইনজীবী আপিল করতে পারবেন।
আরও পড়ুন:
সোমবার কিন্তু আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল পাঁচটি অভিযোগের ক্ষেত্রে মোট তিনটি ধারায় হাসিনাকে ‘দোষী’ ঘোষণা করে ফাঁসির রায় ঘোষণার সময় জানিয়ে দিয়েছেন, বিদেশে থাকার কারণে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী আপিলের সুযোগ পাবেন না। একই কারণে সুযোগ পাবেন না আসাদুজ্জামানও। যদিও জেলবন্দি মামুন আপিলের সুযোগ পাবেন। আইন অনুযায়ী আত্মসমর্পণ বা গ্রেফতারের পর আসামিপক্ষ ট্রাইবুনালের বিচারপদ্ধতির ত্রুটি, অসংগতি বা প্রমাণ উপস্থাপনায় ভুল-ত্রুটি তুলে ধরে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের সুযোগ পান। সেই সুযোগ পাবেন তিনি।
রায়ের ৩০ দিনের মধ্যে আপিল দায়ের করতে হয় এবং ৬০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির বিধান রয়েছে বাংলাদেশের আইনে। আপিলের পরে রয়েছে রিভিউ (পুনর্বিবেচনা আবেদন)—যা বিচার প্রক্রিয়ার শেষ আইনি ধাপ। এখানেও আসামি আপিল রায়ের আইনি ত্রুটি বা ভুল ব্যাখ্যা তুলে ধরতে পারেন। বাংলাদেশের ইতিহাস বলছে আপিল বিভাগে আর্জি খারিজের পরেও রিভিউ প্রক্রিয়ায় সাজা হ্রাস এমনকি, সাজা মকুবও হয়েছে অপরাধীর! এ ছাড়া শেষ ধাপে রয়েছে প্রাণভিক্ষার আবেদন। ভারতের মতোই বাংলাদেশেও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে পারেন। সে দেশের সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি সাজা কমানো, স্থগিত বা পুরোপুরি মকুব করতে পারেন।