গাজ়ায় যুদ্ধ বন্ধ করতে ২০ দফা প্রস্তাব দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকের পর হোয়াইট হাউসে একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন ট্রাম্প। সেখানেই তিনি ইজ়রায়েল-হামাস সংঘাত বন্ধ করতে ২০ দফা প্রস্তাবের কথা জানান। ইতিমধ্যেই ট্রাম্পের প্রস্তাবকে সমর্থন করেছে ইজ়রায়েল। তবে এখনও পর্যন্ত প্যালেস্টাইনি সশস্ত্র সংগঠন হামাসের তরফে এই বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। হামাস জানিয়েছে, ‘ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে’ তারা এই প্রস্তাব খতিয়ে দেখছে।
২০ দফা প্রস্তাবের মূল বিষয়গুলি
১
প্যালেস্টাইনিদের গাজ়া ছে়ড়ে যেতে হবে না। আপাতত গাজ়ায় একটি অস্থায়ী অরাজনৈতিক সরকার তৈরি হবে। এই সরকারের অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন প্যালেস্টাইনি এবং বিশ্বের নানা প্রান্তের বিশেষজ্ঞরা।
২
হামাস যদি এই প্রস্তাবে রাজি থাকে, তা হলে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তাদের সমস্ত ইজ়রায়েলি পণবন্দিকে ছেড়ে দিতে হবে। সংবাদ সংস্থা এপি জানিয়েছে, বর্তমানে হামাসের হেফাজতে রয়েছেন ৪৮ জন পণবন্দি, যাঁদের মধ্যে ২৮ জন আর জীবিত নেই বলে মনে করা হচ্ছে। প্রস্তাব মানলে জীবিত এবং মৃত, সমস্ত পণবন্দিকেই ইজ়রায়েলের হাতে তুলে দিতে হবে হামাসকে।
৩
হামাস যদি ট্রাম্পের প্রস্তাবে রাজি হয়, তা হলে ধাপে ধাপে গাজ়া থেকে সেনা সরিয়ে নেবে ইজ়রায়েল। তা ছাড়া ইজ়রায়েলের জেলে বন্দি যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ২৫০ জন প্যালেস্টাইনিকে ছেড়ে দেবেন নেতানিয়াহু। ছেড়ে দেওয়া হবে যুদ্ধের পর গাজ়া থেকে আটক হওয়া ১৭০০ জনকেও। এক জন ইজ়রায়েলি বন্দির দেহের বিনিময়ে ১৫ জন প্যালেস্টাইনিকে মুক্তি দেবে ইজ়রায়েল।
৪
দু’পক্ষ প্রস্তাবে সম্মত হওয়ার পর যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা হবে। যুযুধান দু’পক্ষ যাতে শান্তিপূর্ণ ভাবে সহাবস্থান করতে পারে, তার জন্য আলোচনার বন্দোবস্ত করবে আমেরিকা।
৫
ট্রাম্পের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে গাজ়ার প্রশাসনিক ব্যবস্থায় হামাসের কোনও ভূমিকা থাকবে না।
৬
প্রস্তাবের শর্তগুলি মানা হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য তৈরি হবে ‘বোর্ড অফ পিস’। এই বোর্ডের চেয়ারম্যান হবেন ট্রাম্প স্বয়ং। সদস্য হিসাবে থাকছেন ব্রিটেনের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার। বাকি সদস্যদের নাম পরে জানানো হবে।
কী বললেন নেতানিয়াহু
গাজ়ায় যুদ্ধ বন্ধ করতে ২০ দফা প্রস্তাব দেওয়ার জন্য ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানান নেতানিয়াহু। বলেন, “গাজ়ায় যুদ্ধ বন্ধ করতে আমি আপনার (ট্রাম্প) পরিকল্পনাকে সমর্থন করছি। এটা আমাদের সব বন্দিকে ইজ়রায়েলে ফিরিয়ে আনতে এবং হামাসের সামরিক ক্ষমতা ধ্বংস করতে সহায়ক হবে।” একই সঙ্গে হুঁশিয়ারির সুরে ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, হামাস ট্রাম্পের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে কিংবা প্রথমে গ্রহণ করে, পরে তার বিরোধিতা করলে ইজ়রায়েল নিজেই তার জবাব দেবে। সহজ বা কঠিন, যে কোনও উপায়ে এই জবাব দেওয়া হবে বলে দাবি করেছেন নেতানিয়াহু। এই প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, “যদি হামাস প্রস্তাব খারিজ করে, তা হলে তাদের হারাতে ইজ়রায়েলের প্রতি আমার পূর্ণ সমর্থন থাকবে।”
কী বলল হামাস
কাতারের প্রধানমন্ত্রী এবং মিশরের গোয়েন্দা প্রধান ট্রাম্পের প্রস্তাবের বিষয়ে হামাসের প্রতিনিধিদের অবহিত করেন। যুদ্ধ বন্ধ করতে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নেওয়া দুই দেশ কাতার এবং মিশরকে হামাসের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, তারা এই প্রস্তাব খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত জানাবেন।
প্রসঙ্গত, হামাস নেতাদের নিশানা করে সম্প্রতি কাতারে হানা দিয়েছিল ইজ়রায়েলি সেনা। এর ফলে সে দেশে এক জনের মৃত্যু হয়। সোমবার হোয়াইট হাউসের তরফে জানানো হয়েছে, কাতারে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর জন্য দুঃখপ্রকাশ করেছে ইজ়রায়েল। ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না-হওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন নেতানিয়াহুরা।