রাষ্ট্রপুঞ্জের ভরা সভায় ভর্ৎসিত পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি আসিম ইফতিকার আহমেদ। ইজ়রায়েলের প্রতিনিধি ড্যানি ড্যানন তাঁকে তুলোধনা করেছেন। মনে করিয়ে দিয়েছেন ওসামা বিন লাদেনের হত্যার কাহিনি। জানিয়েছেন, সন্ত্রাসবাদীকে যে পাকিস্তান আশ্রয় দিয়েছিল, সেই সত্য তাঁরা অস্বীকার করতে পারেন না।
কী নিয়ে হঠাৎ বিতণ্ডা? কেন ইজ়রায়েল এবং পাকিস্তানের প্রতিনিধিরা বচসায় জড়িয়ে পড়লেন?
গত বৃহস্পতিবার আমেরিকার ৯/১১ হামলার ২৪তম বার্ষিকী উপলক্ষে নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের একটি বৈঠক আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে সন্ত্রাসবাদ এবং তার মোকাবিলার প্রসঙ্গ ওঠে। সম্প্রতি প্যালেস্টাইনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের নেতাদের নিশানা করে কাতারে হামলা চালিয়েছে ইজ়রায়েল। কাতার উভয়পক্ষের মধ্যস্থতাকারী দেশ হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তার উপরে হামলার নিন্দা হয়েছে সর্বস্তরে। ভারতও কাতারকে সমর্থন করেছে। কাতারের আমিরকে ফোন করে পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রাষ্ট্রপুঞ্জের বৈঠকে কাতারে হামলার সপক্ষে যুক্তি সাজাতে গিয়ে ৯/১১-র দৃষ্টান্ত টানেন ইজ়রায়েলের দূত। অনিবার্য ভাবে আসে পাকিস্তানের প্রসঙ্গ।
আরও পড়ুন:
ইজ়রায়েলের স্থায়ী প্রতিনিধি পাকিস্তানের আসিমের দিকে আঙুল তুলে ক়ড়া গলায় বলেন, ‘‘যখন পাকিস্তানে গিয়ে ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করা হয়েছিল, কেউ তো এই প্রশ্ন তোলেননি যে, কেন বিদেশের মাটিতে সন্ত্রাসবাদীকে নিশানা করা হচ্ছে? কেউ জানতে চাননি। সকলে এটাই জানতে চেয়েছিলেন যে, কেন এমন এক জন সন্ত্রাসবাদীকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল? একই প্রশ্ন তোলা উচিত এ ক্ষেত্রেও। বিন লাদেনের জন্য কোনও সুরক্ষা থাকতে পারে না। হামাসের জন্যেও নয়।’’
ইজ়রায়েলের প্রতিনিধির এই বক্তব্যের প্রতিবাদে গর্জে উঠেছিলেন পাকিস্তানি দূত। কাতারে কোনও উস্কানি ছাড়াই ইজ়রায়েলের আগ্রাসনকে ‘বেআইনি’ বলে উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, ‘‘গাজ়ায় আগ্রাসনের মাধ্যমে বার বার আন্তর্জাতিক আইন ভাঙছে ইজ়রায়েল। সিরিয়া, লেবানন, ইরান, ইয়েমেনেও হামলা চালানো হচ্ছে। সেটা চাপা দিতে এখন ইজ়রায়েল এই কাউন্সিলকেও অসম্মান করছে।এটা প্রথম নয়। অন্যদের দিকে আঙুল তুলে ভিত্তিহীন অভিযোগ করে নিজেদের বেআইনি কাজকে আড়াল করতে চাইছে।’’
এর পরেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সুর আরও চড়ান ইজ়রায়েলের প্রতিনিধি। বলেন, ‘‘লাদেনকে পাকিস্তানে হত্যা করা হয়েছিল। তখন আমেরিকার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলেনি। এটা বাস্তব। যখন এই কাউন্সিলের অন্যান্য দেশ সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে হামলা চালায়, কেউ প্রতিবাদ করে না। এটা দ্বিচারিতা। ইজ়রায়েলের ক্ষেত্রে এক রকম নিয়ম আর বাকিদের ক্ষেত্রে আলাদা! এটাই সমস্যা।’’
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের মে মাসে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের অ্যাবটাবাদে লাদেনকে হত্যা করেছিল আমেরিকার বাহিনী। ৯/১১ হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন তিনি।