রাশিয়ার কাছাকাছি দু’টি পরমাণু অস্ত্রবাহী ডুবোজাহাজ মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সমাজমাধ্যমে নিজেই সে কথা জানিয়েছেন। রাশিয়া এবং আমেরিকার সাম্প্রতিক সম্পর্কের প্রেক্ষিতে ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ উত্তাপ বাড়িয়ে দিয়েছে। পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়েছে মস্কোও। রুশ পার্লামেন্ট ডুমার সদস্য ভিক্টর ভোডোলাটস্কি শুক্রবার রাশিয়ার সরকারি সংবাদ সংস্থা ‘তাস’-কে বলেছেন, ‘‘বিশ্বের বিভিন্ন মহাসাগরে আমেরিকার চেয়ে বেশি ডুবোজাহাজ মোতায়েন করা রয়েছে রাশিয়ার।’’ ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের আবহে আমেরিকার পরমাণু হুঁশিয়ারি এবং মস্কোর পাল্টায় ভূরাজনীতিবিদেরা উদ্বিগ্ন। তবে পরিস্থিতি চূড়ান্ত পর্যায়ের দিকে এগোনোর সম্ভাবনা আপাতত নেই বলে মনে করা হচ্ছে।
কিন্তু কেন এই পরিস্থিতি তৈরি হল? ভারত এবং পাকিস্তান, দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে সংঘর্ষ থামিয়েছেন বলে দাবি করেন যে ট্রাম্প, তিনি কেন হঠাৎ রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাতে ‘পরমাণু’ শব্দ পর্যন্ত পৌঁছে গেলেন? কী কারণে তাঁর ক্ষোভ?
আরও পড়ুন:
ট্রাম্পের এই ক্ষোভের নেপথ্যে রয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ দিমিত্রি মেদভেদেব। ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। বর্তমানে রাশিয়ান ফে়ডারেশনের নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান। ২০১২ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত তিনি রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর পদেও ছিলেন। সম্প্রতি তাঁর একটি ‘উস্কানিমূলক’ মন্তব্যেই ট্রাম্প ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
ট্রাম্প তাঁর সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, ‘‘ভীষণ রকম উস্কানিমূলক কথাবার্তার উপর ভিত্তি করে আমি দু’টি পরমাণু ডুবোজাহাজ নির্দিষ্ট স্থানে মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছি।’’ এই বোকা বোকা এবং উস্কানিমূলক মন্তব্য যাতে বার্তার আকারেই সীমাবদ্ধ থাকে, তা নিশ্চিত করতে এই নির্দেশ, জানিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘‘আমরা কী বলছি, তা খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রায়ই তা অযাচিত পরিণতি ডেকে আনতে পারে। আশা করি এ ক্ষেত্রে তা হবে না।’’
বিতর্কের সূত্রপাত ট্রাম্প ভারতের উপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা করা এবং রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে নয়াদিল্লিকে খোঁচা দেওয়ার পর। ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র এবং খনিজ তেল কেনার কারণে ভারতকে ‘জরিমানা’ দিতে হবে। বলেছিলেন, ‘‘ভারত রাশিয়ার সঙ্গে কী বোঝাপড়া করছে, তা নিয়ে আমি ভাবিত নই। একসঙ্গে তারা তাদের মৃত অর্থনীতিকে আরও অধঃপতনে নিয়ে যেতে পারে।” ট্রাম্পের এই মন্তব্যের পর মেদভেদেব টেলিগ্রামে লেখেন, ‘‘ট্রাম্পই তো চূড়ান্ত খেলাটি খেলছেন। ওঁর (ট্রাম্পের) মনে রাখা উচিত, আমাদের দেশ শক্তিশালী।’’ এর পর তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের ‘ডেড হ্যান্ড’ (নিষ্প্রাণ হাত)-এর কথা মনে করিয়ে দেন। ঠান্ডা লড়াইয়ের সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন যে স্বয়ংক্রিয় বা আধা-স্বয়ংক্রিয় পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা তৈরি করেছিল, তাকে ‘ডেড হ্যান্ড’ বলা হত।
মেদভেদেবকে আক্রমণ করে পাল্টা ট্রাম্প তাঁকে ‘ব্যর্থ প্রেসিডেন্ট’ বলে উল্লেখ করেন। বলেন, ‘‘উনি রাশিয়ার ব্যর্থ প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট। উনি নিজেকে এখনও প্রেসিডেন্ট মনে করেন। উনি কিন্তু ভয়ঙ্কর জায়গায় পা রাখছেন।’’ ট্রাম্প-মেদভেদেব বিতর্কের কয়েক ঘণ্টা আগে পুতিন নিজে জানিয়েছেন, ওরেশনিক হাইপারসোনিক মিসাইল ব্যাপক হারে বানাতে শুরু করেছে মস্কো, যা পরমাণু অস্ত্র ধারণে সক্ষম। চলতি বছরের শেষের দিকে ওই ক্ষেপণাস্ত্র বেলারুস এলাকায় মোতায়েনের পরিকল্পনাও রয়েছে পুতিনের।
ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে আমেরিকা এবং রাশিয়ার দ্বন্দ্ব প্রকট হয়েছে। তবে পর্যবেক্ষকদের মতে, এখনই পরমাণু অস্ত্র নিয়ে আশঙ্কার কারণ নেই। আপাতত ওয়াশিংটন এবং মস্কোর পরমাণু আলোচনা হুঁশিয়ারির পর্যায়েই সীমাবদ্ধ। রাশিয়ার কাছে ঠিক কোথায় পরমাণু ডুবোজাহাজ মোতায়েন করা হয়েছে, তা স্পষ্ট করেননি ট্রাম্প। রাশিয়ার কতটা নিকটে তা রয়েছে, সে বিষয়েও ধন্দ রয়েছে। অনেকে বলছেন, পরমাণু ডুবোজাহাজ বলতে ট্রাম্প কী বুঝিয়েছেন, তা-ও স্পষ্ট নয়। যেগুলি মোতায়েনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সেগুলি আদৌ পরমাণু অস্ত্রবাহী না পরমাণু শক্তি দ্বারা চালিত ডুবোজাহাজ, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ। তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ।