Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Business News

বড় চুক্তির জন্য দর কষা শুরু

কোটি কোটি টাকা খরচ করে আয়োজিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারত সফরে লাভের লাভ কী হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বিরোধীরা।

ছবি: পিটিআই।

ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:৩৫
Share: Save:

বাণিজ্য চুক্তি না-ই বা হল এ বার। কিন্তু খুব শীঘ্রই ভারত ও আমেরিকার মধ্যে ‘মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি’ নিয়ে আলোচনা শুরু হতে চলেছে। কোটি কোটি টাকা খরচ করে আয়োজিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারত সফরে লাভের লাভ কী হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বিরোধীরা। মঙ্গলবার ট্রাম্পকে পাশে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করলেন, ‘‘আমরা একটা বৃহত্তর চুক্তি নিয়ে দর কষাকষি শুরু করতে সম্মত হয়েছি। আমরা আত্মবিশ্বাসী এতে উভয় পক্ষেরই লাভ হবে।’’

কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল বলেন, ‘‘সীমিত বাণিজ্য চুক্তির খুঁটিনাটি দিক প্রায় চূড়ান্ত। দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানই বৃহত্তর মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এতে দু’দেশের সম্পর্ক নতুন স্তরে চলে গেল।’’ স্থির হয়েছে, আমেরিকার ‘ইন্টারন্যাশনাল ডেভলপমেন্ট ফিনান্স কর্পোরেশন’ ভারতে স্থায়ী অফিস খুলবে। এ সবের ফলে পাঁচ বছরে দু’দেশের বাণিজ্যের অঙ্কটা ১৬ হাজার কোটি থেকে ৫০ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছে যেতে পারে বলে মনে করছেন গয়ালরা। কিন্তু বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থনীতিতে ঝিমুনি চলছে। বাণিজ্য চুক্তি হলে কি ভারতের অর্থনীতির ঝিমুনি কাটবে?

বিদেশসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলার মন্তব্য, ‘‘আমেরিকার সঙ্গে নির্দিষ্ট ভাবে বিশেষ কিছু বাণিজ্য চুক্তি হবে। কালই সব কিছুই হয়ে যায়, এমন নয়। কিন্তু দু’দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ পাঁচ বছরে ৫০ হাজার কোটি ডলারে নিয়ে যাওয়ার ভিত্তিপ্রস্তর তৈরি হল আজই।’’ শিল্পপতি বিক্রম কির্লোস্কর বলেন, ‘‘যে কোনও ধরনের বাণিজ্য, লগ্নিই অর্থনীতির জন্য ভাল। বাণিজ্য বাড়লে চাকরি বাড়বে। আমেরিকা থেকে পণ্য এলেই যে ভারতের বাজারে দেশীয় পণ্য হারিয়ে যাবে, এমন নয়।’’

আরও পড়ুন: ফিরল পেনশন বিক্রির সুযোগ, কর্মী পিএফ নিয়ে বিজ্ঞপ্তি শ্রম মন্ত্রকের

মোদী সরকার যখন ভারতে আরও বেশি মার্কিন লগ্নির আশা করছে, তখন মার্কিন প্রেসিডেন্টও তাঁর দেশে আরও বেশি ভারতীয় শিল্পপতিদের লগ্নির আহ্বান জানিয়েছেন। মোদীর সঙ্গে বৈঠকের পর এ দেশের প্রথম সারির শিল্পপতিদের সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাম্প। তাঁর প্রতিশ্রুতি, আমেরিকা লগ্নির ক্ষেত্রে নানা রকম বাধা দূর করছে।

কী হল বাণিজ্যে

• খুঁটিনাটি পাকা, তবু সীমিত বাণিজ্য চুক্তি সই ঝুলেই
• ট্রাম্প চান, শুল্কে ভারতের উদারতা, ভারতীয় লগ্নি
• ভারতের দাবি, বাজার আরও খুলুক আমেরিকা
• বৃহত্তর মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে কথা শুরুর সিদ্ধান্ত
• লক্ষ্য, বাণিজ্য বাড়িয়ে ৫০ হাজার কোটি ডলার করা

রিলায়্যান্স গোষ্ঠীর কর্ণধার মুকেশ অম্বানী ট্রাম্পকে রিলায়্যান্সের ভারতে ও আমেরিকায় লগ্নি সম্পর্কে জানান। ট্রাম্প উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে বলেন, ‘‘আপনারা দারুণ কাজ করেছেন। ধন্যবাদ।’’ অম্বানী জানান, আমেরিকায় জ্বালানি ক্ষেত্রে তাঁরা ৭০০ কোটি ডলার লগ্নি করছেন। ট্রাম্প বলেন, ‘‘৭০০ কোটি ডলার। বড় অঙ্ক।’’ ফোর-জি-র পরে অম্বানীরা ফাইভ-জি-তে লগ্নি করছেন কি না, তা-ও জানতে চান ট্রাম্প। অম্বানী বলেন, রিলায়্যান্স জিও-ই গোটা বিশ্বে একমাত্র পরিষেবা, যাদের পরীক্ষামূলক ফাইভ-জি পরিষেবায় কোনও চিনা সংস্থা নেই। মুকেশ ছাড়াও আনন্দ মাহিন্দ্রা, আজিম প্রেমজি, কুমার মঙ্গল বিড়লা, ইনফোসিস-এর সিইও সলিল পারেখ, টাটা সন্সের চেয়ারম্যান এ চন্দ্রশেখরন বৈঠকে হাজির ছিলেন। মজা করে ট্রাম্প বলেন, ‘‘আমি যত দিন প্রেসিডেন্ট রয়েছি, তত দিন ভারতীয় সংস্থার ব্যবসা করতে অসুবিধা হবে না। মার্কিন সংস্থা অধিগ্রহণও দ্রুত গতিতে হবে। কিন্তু ভুল কেউ নির্বাচিত হলে, সব থমকে যাবে। আপনাদের বেকারত্বের হার ৮, ৯ বা ১০ শতাংশে পৌঁছে যাবে। আরও অনেক খারাপ ঘটনা ঘটবে।’’

কিন্তু এ বারই বাণিজ্য চুক্তি হল না কেন? শিল্প নীতি ও উন্নয়ন দফতরের সচিব গুরুপ্রসাদ মহাপাত্রের ব্যাখ্যা, ‘‘কিছু ক্ষেত্রে আমাদের জন্য আমেরিকার বাজার আরও বেশি করে খুলে দিতে হবে। তা নিয়েই আলোচনা চলছে।’’ মোদীর দাবি, ‘‘আলোচনায় যে সব বিষয় চূড়ান্ত হয়েছে, তাকে এ বার আইনি ভাষা দেওয়া হবে।’’

ট্রাম্প বিকেলের সাংবাদিক বৈঠকে মনে করিয়ে দিয়েছেন, ভারত বিভিন্ন মার্কিন পণ্যে চড়া শুল্ক বসিয়ে রেখেছে। আর একটু উদারতা দেখাতে হবে ভারতকে। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘ভারত থেকে যখন মার্কিন মোটরবাইক যায়, প্রায় কোনও শুল্কই দিতে হয় না। কিন্তু আমাদের মোটরবাইক এলে বিপুল শুল্ক বসে। আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি কমতে কমতেও ২৪ বিলিয়ন ডলার রয়ে গিয়েছে। আরও কমাতে হবে।’’

এত দিন মোদী সরকারের অবস্থান ছিল, ইউপিএ জমানার মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিগুলিতে ক্ষতি হয়েছে দেশের অর্থনীতির। ওই চুক্তির শর্ত খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে মোদী সরকার। কিছু ক্ষেত্রে দশ বছর দর কষাকষির পর সই হয়েছিল ওই সব বাণিজ্য চুক্তি। আমেরিকার সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি কবে সই হবে? বাণিজ্যমন্ত্রী গয়ালের দাবি, আমেরিকার সঙ্গে ঢের দ্রুত ও আরও বড় বাণিজ্য চুক্তি করা সম্ভব। দু’দেশেরই অর্থনীতি যথেষ্ট স্বচ্ছ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Donald Trump Donald Trump in India Narendra Modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE