Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

‘ভয়ে আছি’, মাথা নেড়ে বললেন কন্ডাক্টর

বুধবার বিকেলে ডানলপ-গড়িয়া রুটের বাসটিকে চেষ্টা করেও থামানো গেল না রাসবিহারীর মোড়ে।

দূরত্ব: বাসযাত্রায় পাশাপাশি বসছেন না যাত্রীরা। বুধবার। নিজস্ব চিত্র

দূরত্ব: বাসযাত্রায় পাশাপাশি বসছেন না যাত্রীরা। বুধবার। নিজস্ব চিত্র

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০২০ ০৫:২১
Share: Save:

ফুরফুরে হাওয়া। জানলার ধার। এবং চওড়া আসন। মাস তিনেক আগে ভরদুপুরে শহরের বাসে এত কিছু পেয়ে যাওয়াটা লটারির টিকিট পাওয়ার মতোই সৌভাগ্য ছিল। এই মে শেষের নিদাঘ বিকেলে এমন প্রাপ্তিযোগের মধ্যে তবু এক করুণ বাস্তবতা কাজ করছে।

বুধবার বিকেলে ডানলপ-গড়িয়া রুটের বাসটিকে চেষ্টা করেও থামানো গেল না রাসবিহারীর মোড়ে। কারণ, ২০ জন হয়ে যাওয়ায় কন্ডাক্টর দরজা এঁটে রেখেছেন। তবে হাওড়া থেকে যাদবপুর রুটের বাসে ঠাঁই মিলল। মুখে রুমাল, তারও উপরে মাস্ক-আঁটা কন্ডাক্টরমশাই হুঁশিয়ারি দিলেন, ‘যান, পিছনে জায়গা খালি আছে। এক সিটে দু’জন বসবেন না।’ গোপনীয়তা বুভুক্ষু কলকাতা শহরে একদা দু’জনে পাশাপাশি বসার সিটের অন্তরঙ্গতাটুকু কত দুর্লভ ছিল, তা বোধহয় আজকের ৪০ ছুঁইছুঁইরাও খানিকটা জানেন। দু’দশক আগে সুমনও গানে-গানে বাসের রডে বাঁধা ঝুলনদোলনার খোঁজ করেছেন। এই কোভিড-যুগের শহুরে বাসে বাদুড়ঝোলা কসরতে জীবনযুদ্ধ দূরে থাক, বাসের রড ধরে পারতপক্ষে দাঁড়ানোর কেউ নেই। তবু এই অতিমারির সঙ্কটে বাস সফরেও জীবনযুদ্ধের অন্য রং উঠে আসে!

মালুম হল, কন্ডাক্টর টিকিট চাওয়ার সময়ে যাত্রীদের স্মার্টফোন থেকে মুখ তুলে পুরনো ‘দিচ্ছি দিচ্ছি’ অভ্যাসটা পাল্টায়নি। বাস যাদবপুর থানার কাছাকাছি আসতেই গেটের মুখে খানিক ভিড়। ‘‘ভয়ে আছি! সামাজিক দূরত্ব অত সোজা নয়, কবে যে সব আগের মতো হবে!’’— বিমর্ষ ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে বললেন কন্ডাক্টর সন্তোষকুমার রায়। সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত বাস চলছে। ট্রিপের সংখ্যা আগের অর্ধেক— জানালেন সন্তোষবাবু।

যাত্রীদের মধ্যে বেশ কয়েক জন রেলকর্মী। লিলুয়া ওয়ার্কশপের কর্মী রিনা মণ্ডল, পীযূষকান্তি শাঁখারি, দীপককুমার সাহারা বসেছেন ছাড়া-ছাড়া ভাবে। সবাই থাকেন যাদবপুরের কাছে-পিঠে। দীপকবাবু বলছিলেন, ‘‘এত দিন কর্মীদের স্পেশাল ট্রেনে অফিস যাচ্ছিলাম। সেটা এখনও আছে। তবে শিয়ালদহ হয়ে দুনিয়া ঘুরে যাদবপুরের দিকে আসতে ঘণ্টা তিনেক লাগাত!’’ এ দিন ওঁরা খুশি, বিকেল চারটেয় অফিস ছুটির পরে ঘণ্টা দেড়েকেই বাড়ি পৌঁছে যাবেন। যাদবপুর ৮বি-র কাছের বাসিন্দা এক বৃদ্ধ বাসের সৌজন্যেই তিন মাস বাদে বেরিয়েছেন। তবে খুশি নন!

‘‘যাদবপুর ডাকঘরে একটা কাজ হচ্ছে না-দেখে জিপিও গিয়েছিলাম। সেখান থেকেও খালি হাতে ফিরছি। যত পণ্ডশ্রম!’’— তিতকুটে স্বরে বললেন তিনি। বিক্রমগড়ের বাসিন্দা শৈবাল হালদার এ দিন স্বস্তিতে যে তিনি হাওড়ার চার্টার্ড ফার্মের কর্মস্থলে যেতে পেরেছেন।

৮বিতে নেমে বাঘা যতীনের রবি রায়ের সঙ্গে আলাপ হল। হেঁটে এসে করুণাময়ীগামী এস-নাইনে উঠছেন সেক্টর ফাইভের কর্মী। ‘‘আমি আইটি অফিসের হাউজ়কিপিং দেখি। আমার তো ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ নেই। কাজে ফিরতে পেরে বাঁচলাম।’’— বলে গেলেন তিনি। যেন কথা বলছে, বাসের চাকায় ছন্দে ফিরতে মরিয়া লকডাউন-ধ্বস্ত কলকাতা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE