ঐতিহ্য: আমপানেও থমকায়নি পরির গতি। ফাইল চিত্র
কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা-সহ একাধিক এলাকায় আমপান ধ্বংসলীলা চালালেও ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের ‘আইকনিক’ পরির বিন্দুমাত্র ক্ষতি হয়নি। বরং আমপানের তীব্র হাওয়ার গতি পরোক্ষে পরির ‘বল বেয়ারিং’ ব্যবস্থাকে নতুনের মতোই করে দিয়েছে। পরির স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল সূত্রে এমনটাই জানানো হয়েছে।
এমনিতে সাধারণ ঝড়-বৃষ্টির পরেই স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে চলে যান পরির ‘ডাক্তারবাবু’ মন্টু দাস। সেখানে আমপানের তাণ্ডবলীলার পরে পরির স্বাস্থ্য কেমন, তা নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই দুশ্চিন্তা ছিল ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল কর্তৃপক্ষের। সেই মতো সম্প্রতি পরিকে দেখতে গিয়েছিলেন জেসপের প্রাক্তন ইঞ্জিনিয়ার মন্টুবাবু। বছর এগারো ধরে তিনিই পরির স্বাস্থ্যের দেখভাল করে এসেছেন।
পরীক্ষার পরে মন্টুবাবু জানাচ্ছেন, পরি একদম ঠিক আছে। বরং প্রবল ঝোড়ো হাওয়ায় পরি যে ঘোরার সুযোগ পেয়েছিল, তাতে ঘূর্ণন আরও সহজ হয়ে গিয়েছে। পরির ঘূর্ণনের প্রযুক্তি ব্যাখ্যা করে মন্টুবাবু জানাচ্ছেন, যখন নতুন গিয়ার বাক্স তৈরি হয়, তখন ২৪ ঘণ্টার জন্য সেখানে ঘূর্ণনের প্রক্রিয়া চালু রাখতে হয়। যাতে পরবর্তীকালে ঘোরার সময়ে কোনও শব্দ না হয়। এবং ঘূর্ণনও সহজে হয়। মন্টুবাবুর কথায়, ‘‘আমপানের কারণে যান্ত্রিক ভাবে নয়, বরং প্রাকৃতিক কারণেই পরি ঘোরার একটা সুযোগ পেয়েছিল। ফলে যেটুকু বল বেয়ারিং-এ ‘জ্যাম’ ছিল, তা কেটে গিয়ে পরি এখন দিব্যি ঘুরছে।’’
আরও পড়ুন: ঝড়ে ধ্বস্ত লোকালয়ের ত্রাতা পাড়ার ব্রাত্য যুবকেরাই
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল সূত্রের খবর, যে গম্বুজের উপরে পরিটি বসানো রয়েছে, তার উচ্চতা মাটি থেকে ৫৬ মিটার। পরির উচ্চতা হল ৫.৯ মিটার। ‘বায়োডেটা অব দি এঞ্জেল’ নামে পরি সংক্রান্ত ভিক্টোরিয়ার পুরনো নথি এ-ও বলছে, ১৯২১ সালে প্রায় সাড়ে ছ’টন ওজনের ওই পরিকে যখন ভিক্টোরিয়ার মাথায় বসানো হয়েছিল, তখন তার ঘুরতে ঘণ্টায় ১৫ কিলোমিটার গতির হাওয়া দরকার হত। পরবর্তী কালে বল-বেয়ারিং পুরনো হওয়ার কারণে পরি ঘুরতে বেশি বেগের হাওয়া লাগত। কিন্তু আমপানের পরে পরি আপাতত ঘণ্টায় সেই ১৫-২০ কিলোমিটার হাওয়া দিলেই ঘুরছে। মন্টুবাবুর কথায়, ‘‘শুধু ঘোরাই তো নয়। এত বড় ঝড় গেল, তাই আর্থিং পরীক্ষার দরকার ছিল। তা-ও করা হয়েছে। সেখানেও কোনও ত্রুটি দেখা যায়নি।’’
ভিক্টোরিয়া সূত্রের খবর, পরির নীচে দু’টি পাত্র রয়েছে। একটি পারদের এবং অন্যটি গিয়ার তেলের। বজ্রপাতের সময়ে ওই পারদ ‘আর্থিং’-এর কাজ করে। বাজ পড়তে থাকলে পাত্র থেকে পারদের ছিটকে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তখন সেই পাত্র ফের পারদ দিয়ে পূরণ করতে হয়। আরও একটি পাত্রে সাত-আট লিটার তেল থাকে। ওই তেল বল-বেয়ারিং সচল রাখতে সাহায্য করে। আমপান-পরবর্তী সময়ে পাত্রে নতুন করে পারদ দেওয়া হয়েছে বলে জানাচ্ছেন মন্টুবাবু।
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের কিউরেটর-সেক্রেটারি জয়ন্ত সেনগুপ্তও জানাচ্ছেন, পরি সম্পূর্ণ ঠিক আছে। তবে আমপানের জন্য ভিক্টোরিয়ার বাগানে বারোটির মতো গাছ উপড়ে পড়েছে। সে কারণে, আজ, শুক্রবার বিশ্ব পরিবেশ দিবসে বেশি সংখ্যক গাছ লাগানোর কথা ভাবা হয়েছে বলে জানাচ্ছেন তিনি। জয়ন্তবাবুর কথায়, ‘‘অন্য বার ৬০-৭০টি গাছ লাগানো হয়। তবে এ বছর আমরা একশোটির মতো গাছ লাগানোর পরিকল্পনা করেছি।’’ রাজ্যপালও সেই বৃক্ষ রোপণে অংশ নেবেন বলে ভিক্টোরিয়া সূত্রের খবর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy