ফাইল চিত্র।
এ যেন ‘প্যান্ডোরার বাক্স’, যার মুখ অতর্কিতে খুলে গিয়েছে। আর গলগল করে বেরিয়ে পড়ছে এত দিনের জমে থাকা যত
অভাব-অভিযোগ-ক্ষোভ। যার হাত থেকে নিস্তার পাচ্ছেন না ‘প্রভাবশালীদের’ একাংশও!
যেমন, গত বুধবার বেআইনি বাড়ি নির্মাণ প্রসঙ্গে উঠে এসেছে এক মন্ত্রীর নাম। আগামী দিনে অতর্কিতে আর কী কী উঠে আসতে পারে, তা নিয়েই এখন প্রমাদ গুনছেন পুরকর্তাদের একাংশ। কারণ প্রকাশ্যে শুধু নির্দিষ্ট কোনও দফতরই নয়, রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের নামও উঠে আসছে এই ‘টক টু মেয়র’ অনুষ্ঠানে। পুরকর্তাদের একাংশের মধ্যে তাই ইতিমধ্যেই গুঞ্জন শুরু হয়েছে, কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরিয়ে পড়তে পারে যে কোনও মুহূর্তে। মেয়র ফিরহাদ হাকিম অবশ্য জানিয়েছেন, কে প্রভাবশালী আর কে নন, সে সম্পর্কে বাছ-বিচার করা হবে না। নাগরিকেরা পুর পরিষেবা পাচ্ছেন কি না, সেটাই একমাত্র পাখির চোখ হবে পুরসভার।
কিন্তু তাতেও স্বস্তিতে নেই পুরকর্তাদের একাংশ। কারণ, এত দিন পুরসভার বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকদের মধ্যে ‘কাজ না-করার’ মানসিকতা পুরোদমে বর্তমান থাকলেও তা কখনও সে ভাবে প্রকাশ্যে আসেনি। নাগরিকেরা পুর পরিষেবা সংক্রান্ত অভাব-অভিযোগ জানাতে চাইলেও তা গ্রহণ করার রেওয়াজ তৈরি হয়নি অনেক জায়গায়। এমনও হয়েছে যে নাগরিকেরা পুরসভায় এসে দিনের পর দিন উদভ্রান্তের মতো ঘুরেছেন, তবু কাজ হয়নি। কিন্তু ‘টক টু মেয়র’ এক ঝটকায় সে সমস্তকে প্রকাশ্যে এনে দিয়েছে। কর্মক্ষেত্রে পুর আধিকারিকদের একাংশের দীর্ঘসূত্রতা অথবা নাগরিকদের সঙ্গে সহযোগিতা না-করার মনোভাবকেও সকলের সামনে এনে দিয়েছে। পুরকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, ‘টক টু মেয়র’ চলাকালীন অনেকেই মনে মনে প্রমাদ গোনেন, এ বার হয়তো তাঁর দফতর নিয়ে কোনও অনিয়মের অভিযোগ সামনে আসবে। তবে অনেকেই মানছেন, এটার দরকার ছিল। কারণ, কোন আধিকারিকেরা সত্যিই কাজ করেন আর কারা করেন না, তা আলাদা করার ছাঁকনিই এতদিন ছিল না পুরসভায়। ‘টক টু মেয়র’ সেই বিভাজন স্পষ্ট করে দিচ্ছে। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘টক টু মেয়র কতটা সফল হবে, সেটা সময়ই বলবে। কিন্তু এই কর্মসূচি যে মৌচাকে ঢিল ছুড়েছে, সে নিয়ে কোনও সংশয় নেই।’’
মেয়র পর্যন্ত পৌঁছতে পেরে পুর নাগরিকদের একাংশের সাহসও বেড়েছে। ফলে তাঁরা প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতেও পিছপা হচ্ছেন না। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘প্রভাবশালী নেতা বা কাউন্সিলর হলে তাঁদের বিরুদ্ধেও যে কিছু বলা যায়, সেটাই এতদিন জানতেন না কেউ। ‘টক টু মেয়র’ সেই পরিস্থিতিটুকু অন্তত তৈরি করে দিতে পেরেছে। কিন্তু একই সঙ্গে কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরিয়ে আসার পরিস্থিতিও তৈরি হয়েছে।’’ আর এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘বিরোধীরা একে রাজনৈতিক চমক বলছেন। বলার কারণও থাকছে। কিন্তু ‘টক টু মেয়র’ যে সত্যিই নাগরিক পরিষেবা পৌঁছে দিচ্ছে, তা প্রমাণ হবে যখন কোনও প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে অভিযোগের ক্ষেত্রে পুরসভা কী অবস্থান গ্রহণ করছে, তা স্পষ্ট ভাবে মানুষ জানতে পারবেন। কারণ, শুধু মৌখিক আশ্বাসে চিঁড়ে ভেজে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy