Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
SSKM Hospital

ভাতের চিন্তা ভুলে আস্থা অঙ্গদানে

শনিবার পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম বছর পঁয়তাল্লিশের স্বপন হাজরার ব্রেন ডেথ ঘোষণা করেন এসএসকেএমের চিকিৎসকেরা।

স্বপন হাজরা

স্বপন হাজরা

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২০ ০৬:৫২
Share: Save:

টানাটানির সংসারে প্রতিদিনের আয়ের সংস্থান কী ভাবে হবে, সেই ভেবে দিন কেটে যেত পাঁচ সন্তানের পিতা পেশায় রাজমিস্ত্রি স্বপন হাজরার। আকস্মিক পথ দুর্ঘটনা প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল পরিবারের একমাত্র রোজগেরের। স্বামীর মৃত্যুর পরে পাঁচ সন্তানের মুখে কী ভাবে অন্ন তুলে দেবেন, এখনও জানেন না স্ত্রী নমিতা হাজরা। তবুও অঙ্গদানে সম্মতি দিতে পিছপা হননি। পূর্ব মেদিনীপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের মহিলার সিদ্ধান্তে মৃত্যুকে হারিয়ে জিতল মানবিকতা।

শনিবার পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম বছর পঁয়তাল্লিশের স্বপন হাজরার ব্রেন ডেথ ঘোষণা করেন এসএসকেএমের চিকিৎসকেরা। মৃত্যুর পরেও যে জীবন সম্ভব, সে বিষয়ে গ্রামের বাসিন্দা স্বপনের ভাই সুরজিৎ হাজরাকে বোঝানো হয়। দেওরের কাছে বিষয়টি জানার পরে আপত্তি করেননি মৃতের স্ত্রী। বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। মেজো জন উচ্চ মাধ্যমিক দেবে। সেজো মেয়ে ষষ্ঠ এবং ছোট মেয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী। চার মেয়ের পাশাপাশি সাড়ে তিন বছরের একটি ছেলেও রয়েছে ওই দম্পতির। চিকিৎসকদের মতে, সংসার কী ভাবে চলবে সেই প্রশ্নটি যখন একটি পরিবারের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তখন চারটি জীবন বাঁচানোর অঙ্গীকারের সিদ্ধান্ত প্রশংসনীয়।

স্বপনের হৃৎপিণ্ড এবং কিডনি পেয়েছেন এসএসকেএমে চিকিৎসাধীন তিন রোগী। হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপিত হয়েছে মেটিয়াবুরুজের বধূ মসলিমা বিবির (৩৮) শরীরে। দু’টি কিডনি পেয়েছেন হলদিয়ার বাসিন্দা সুচেতা মাইতি (৩০) এবং ভদ্রেশ্বরের সৌরভ নাথ (২৫)। লিভার পেয়েছেন বেসরকারি হাসপাতাল মেডিকা-য় চিকিৎসাধীন বেহালার শকুন্তলা পার্কের বাসিন্দা বছর চল্লিশের এক ব্যক্তি। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন মসলিমা। বেঙ্গালুরুতে চিকিৎসা করানোর পরে মাস তিনেক আগে এসএসকেএমে এলে হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দেন কার্ডিও ভাস্কুলার বিভাগের চিকিৎসকেরা।

আরও পড়ুন: বিরোধী যুক্তি মানে কলহ নয়, নবনীতা স্মরণে অমর্ত্য

নমিতার সিদ্ধান্তে খুব একটা অপেক্ষা করতে হয়নি। মেডিকা-য় চিকিৎসাধীন ওই ব্যক্তির বোন বাবলি সাউ জানান, তাঁর দাদা লিভারের সমস্যায় ভুগছিলেন। বছরখানেক আগে হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানান, লিভার প্রতিস্থাপন করতে হবে। এ দিন বাবলি বলেন, ‘‘আমার দাদাকে যিনি লিভার দিলেন, তাঁর পরিবারের কাছে কৃতজ্ঞ।’’ আর মসলিমার স্বামী নাজিমুদ্দিন মণ্ডলের কথায়, ‘‘মানুষে মানুষে ভেদাভেদের যে কোনও মূল্য নেই, সেটাই বুঝিয়ে দিল দাতার পরিবার। এটাই তো মানবিকতা।’’

গত ৯ জানুয়ারি ব্যাঙ্কে যাবেন বলে বাড়ি থেকে সাইকেল নিয়ে বেরিয়েছিলেন মারিচদা থানার অন্তর্গত ভাজাচাউলি গ্রামের বাসিন্দা স্বপন। কিন্তু গ্রামের কাছাকাছি যে ব্যাঙ্ক রয়েছে, সেখানে টাকা তোলা যায়নি। তাই সাইকেল নিয়ে কাঁথি যাচ্ছিলেন টাকা তোলার জন্য। মাঝপথে ভরত রানা নামে এক পরিচিতের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। তিনিও কাঁথি যাচ্ছিলেন। সাইকেল রেখে স্বপনকে তাঁর মোটরবাইকে যাওয়ার জন্য বলেন ভরত। ব্যাঙ্কের কাজ সেরে বাড়ি ফেরার পথে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে লরির সঙ্গে ধাক্কা লেগে বাইক থেকে ছিটকে পড়েন দু’জনে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় বাইকচালক ভরতের। স্বপন ছাড়াও বাইকে আর এক আরোহী ছিলেন। স্বপন মারাত্মক জখম হলেও পিন্টু দাস নামে ওই ব্যক্তির আঘাত গুরুতর ছিল না। সেই থেকে এসএসকেএমের ট্রমা কেয়ারে চিকিৎসাধীন ছিলেন স্বপন।

এ দিন মৃতের ভাই সুরজিৎ বলেন, ‘‘সংসার কী ভাবে চলবে, তা সত্যিই জানি না। কিন্তু দাদার জন্য আরও চারটে প্রাণ বাঁচবে জানার পরে বৌদি আপত্তি করেনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Organ Donation SSKM Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE