Advertisement
E-Paper

এখনও শিক্ষা না নিলে সামনে আরও বড় বিপদ

গোরক্ষপুর খোদ আদিত্যনাথের গড় হিসাবে পরিচিত। উত্তরপ্রদেশের হার অতএব অত্যন্ত তাত্পর্যপূর্ণ ঘটনা। বিজেপির জন্য তাত্পর্যপূর্ণ তো বটেই। তাত্পর্যপূর্ণ বার্তা দিয়ে গেল এই নির্বাচন গোটা রাজনৈতিক শিবিরকেই।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৮ ০০:৩৬
যোগী আদিত্যনাথের নিজের গড় গোরক্ষপুরেই হার বিজেপির।

যোগী আদিত্যনাথের নিজের গড় গোরক্ষপুরেই হার বিজেপির।

যোগী আদিত্যনাথ বললেন, তিনি জনতার রায় মাথা পেতে নিচ্ছেন। বললেন, শিক্ষা নিতে হবে পরাজয় থেকে।

সাধু! বোধোদয় যদি হয়ে থাকে, তবে সাধু। কিন্তু শুধু যোগী আদিত্যনাথের বোধোদয়ে কি সত্যিই কিছু যায় আসে?

উত্তরপ্রদেশ এবং বিহারে উপনির্বাচনের ফলাফল থেকে বিজেপি আদৌ শিক্ষা নেবে কি না, তা স্থির করার মালিক এখনও যোগী হয়ে ওঠেননি। বিজেপি তার পরাজয়কে জনতার দরবারে প্রত্যাখ্যান হিসাবে দেখবে, নাকি আরও আগ্রাসী হয়ে বিরোধীদের কোণঠাসা করার কৌশল অবলম্বন করতে চাইবে, তা স্থির করার যাবতীয় অধিকার এখনও পর্যন্ত দুই শীর্ষ ক্ষমতাবানের হাতেই সংরক্ষিত। গুজরাত থেকে দিল্লিতে পাড়ি জমানো সেই দুই শীর্ষ ক্ষমতাবানের গায়ে কি প্রত্যাখ্যানের আঁচটা লাগল? যে হিন্দি বলয়ে তুফান তুলে ঐতিহাসিক জয় হাসিল হয়েছিল ২০১৪ সালে, সেই হিন্দি বলয়ের প্রাণকেন্দ্রে এই পরাজয়ের ধাক্কাটা কি দিল্লিকে কাঁপাতে পারল? প্রশ্নটা সেখানেই।

বিহারে নীতীশ কুমারকে কংগ্রেস এবং লালুর হাত থেকে প্রায় ছিনিয়ে নিয়েছে বিজেপি। দখল নিয়েছে সরকারের। উপনির্বাচনের ফল বলল, তাতে আখেরে লাভ কিছু হয়নি। বিজেপির হাতে ছিল যে বিধানসভা আসনটি, তা বিজেপি ধরে রেখেছে। কিন্তু নীতীশকে ভাঙিয়ে এনেও লালুর তালুকে কোনও ভাঙন ধরানো যায়নি।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

উত্তরপ্রদেশে আরও শোচনীয় পরিস্থিতি। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং উপমুখ্যমন্ত্রীর ছেড়ে যাওয়া কেন্দ্রে হার হয়ে গিয়েছে রাজ্যের শাসক দলের। এর মধ্যে ফুলপুর কোনও কালেই গেরুয়া ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত নয়। কিন্তু গোরক্ষপুরের রং দশকের পর দশক ধরে গেরুয়া। গোরক্ষপুর খোদ আদিত্যনাথের গড় হিসাবে পরিচিত। উত্তরপ্রদেশের হার অতএব অত্যন্ত তাত্পর্যপূর্ণ ঘটনা। বিজেপির জন্য তাত্পর্যপূর্ণ তো বটেই। তাত্পর্যপূর্ণ বার্তা দিয়ে গেল এই নির্বাচন গোটা রাজনৈতিক শিবিরকেই।

গোবলয়ে বিজেপির এই পরাজয় অপ্রত্যাশিত কিছুটা ছিল হয়ত। কিন্তু এই হার অকারণে যে হয়নি, সে কথা তো বলাই বাহুল্য।

আরও পড়ুন: ‘প্রেস্টিজ’ লড়াইয়ে হেরে যোগী বললেন রায় শিরোধার্য

অসন্তোষ যে ক্রমশ দানা বাঁধছে, বিশেষত গ্রামীণ ভারতের ক্ষোভ যে দিন দিন বাড়ছে, সদ্য তার প্রমাণ মিলেছে মহারাষ্ট্রে। কয়েক মাস আগে প্রমাণ মিলেছিল গুজরাতেও। বিজেপির প্রথম বিপদ এই ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ বা অসন্তোষ।

বিপদ আরও রয়েছে। বিপদ রয়েছে বিরোধীদের মধ্যে এক ছাতার তলায় আসার মরিয়া প্রবণতায়। এক দিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বার বার আঞ্চলিক শক্তিগুলির যৌথ লড়াইয়ের কথা বলছেন। বিজেডি, টিআরএস, শিবসেনা, আপ, এনসিপি-সহ বিভিন্ন দলের সঙ্গে নিরন্তর যোগাযোগ রেখে চলছেন। আর এক দিকে শরদ পওয়ারের মতো প্রবীণ নেতা বিরোধী জোটের জন্য উদ্যোগী হয়ে রাজ্যে রাজ্যে দূত পাঠাচ্ছেন। সে সবের মাঝেই কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী ২০টি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে সঙ্গে নিয়ে নৈশভোজ আয়োজন করছেন।

আরও পড়ুন: যোগীর ঘরে সপা-র বাসা

পরিস্থিতি অনেকটা যেন ১৯৭৭ সালের মতো। কংগ্রেসকে হারাতে ঐকবদ্ধ ছিল সব দল যেমন সে বার, এ বার বিজেপির বিরুদ্ধেও যেন তেমনই ঐক্যের বাতাবরণ। সপা-বসপার মতো দুই ঘোর প্রতিদ্বন্দ্বীও এক হয়ে গেল উত্তরপ্রদেশে। লক্ষ্য— বিজেপি-কে হারানো। ফলও মিলল হাতেনাতে।

সারকথা অতএব তিনটে। প্রথমত, বিজেপি-কে বুঝতে হবে, গ্রামীণ ভারতের অসন্তোষের কারণ কী? দ্বিতীয়ত, বিজেপি-কে জেনে নিতে হবে, বিরোধীরা হাত মিলিয়ে লড়লে বড্ড কঠিন হয়ে দাঁড়াবে লড়াই। তৃতীয়ত, বিজেপি-কে খুঁজে বার করতে হবে, কী সেই কারণ যা বিরোধীদের একত্র করছে? কী সেই কারণ, যা বিজেপি বিরোধিতার প্রশ্নে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীকেও পরস্পরের সঙ্গে হাত মেলাতে বাধ্য করছে?

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর যদি খুঁজে নিতে পারে বিজেপি এবং পদক্ষেপ করতে পারে যদি সেই মতো, তা হলে বুঝতে হবে, শিক্ষা নিয়েছেন নেতৃত্ব। আর যদি তা না হয়, তা হলে ভবিষ্যতে আরও অনেক ধাক্কা অপেক্ষায়।

Newsletter Yogi Adityanath BJP Samajwadi Party Akhilesh Yadav অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় Anjan Bandyopadhyay যোগী আদিত্যনাথ Uttar Pradesh বিজেপি By-Poll
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy