Advertisement
E-Paper

সাদা রংয়ের রামধনু!

তাঁর মতো এত রংদার ক্রিকেট চরিত্র চট করে আসে না। পরিশ্রম, প্যাশন, শরীরীভাষা, সাহস, কৃচ্ছ্রসাধন, একাগ্রতা এবং সংকল্পের সাত রং ঝলমল করত তাঁর সাদা জার্সিতে। সেই সাত রংয়ের মিশেলে তৈরি হয়েছিল সাদা রংয়ের এক অত্যাশ্চর্য রামধনু। যা টেস্ট ক্রিকেটের দিগন্তে আর দেখা যাবে না।

অনিন্দ্য জানা

অনিন্দ্য জানা

শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০২৫ ০৮:৫৩
A rainbow in white jersey: colour of Virat Kohli in Test Cricket & an extraordinary ground philosophy

তখনও জানতেন না। সাদা পোশাকে সিডনির এই ম্যাচই তাঁর জীবনের শেষ টেস্ট হয়ে থাকবে। ছবি: রয়টার্স।

একটু দেরিই হয়ে গেল। তিনি আর টেস্ট ম্যাচ খেলবেন না, বিরাট কোহলির এমত ঘোষণার ধাক্কায় দেশের (এবং ক্রিকেটবিশ্বের) বিস্ময়-সমুদ্রের তলদেশে যে ভূমিকম্প হয়েছে, তজ্জনিত আবেগ-সুনামির ঢেউ কূল ছাপিয়ে এসে পড়েছিল। তাতে একটু টালমাটাল লাগছিল। কিন্তু ঠিকঠাক দেখতে গেলে তো খানিক দূরে সরে যেতে হয়। সময়ের চেয়ে বড় দূরত্ব আর কী আছে!

অতএব এই বিলম্ব।

অদ্যপি জগৎ-চরাচর চোখের জল-টল মুছে খানিক থিতু হয়ে বসেছে। সমাজমাধ্যমের ক্রিকেট দিগ্‌গজদের আঙুল সাময়িক বিশ্রামে গিয়েছে (রূপকার্থে কলমের কালি ফুরিয়েছে) পরের বিষয়টা নিয়ে লেখার জন্য মকশো করতে। মনে হল, এখন টেস্ট-সন্ন্যাসী বিরাট কোহলিকে যদি একটু ফিরে দেখা যায়।

তাঁকে যে প্রথম থেকেই দারুণ লাগত, তা নয়। বরং মনে হত, অ্যাড্রিনালিন কি বেশি পড়িয়াছে? সামান্য উদ্দীপকেই এত লম্ফঝম্প, এত লপচপানির কী আছে? এর চেয়ে অনেক বেশি কীর্তি স্থাপন করেও তো উচ্ছ্বাস অনেক কম মাত্রার হতে দেখেছি। অনেককে অনেক বেশি স্থিতধী থাকতে দেখেছি। কীর্তিমানেরা যেমন হন। তুঙ্গ সাফল্যে আবেগের একটা বিস্ফোরণ হয় বটে। কিন্তু তার খানিক পরে সুইচ টিপে সেটা নিবিয়েও দেওয়া হয়। বড় অ্যাথলিটদের স্নায়ুর উপর নিয়ন্ত্রণ অধীত অভ্যাস। বস্তুত, সেটা তাঁদের সর্বকালীন ‘হল অফ ফেম’-এ জায়গা পাওয়ার সূচকও বটে।

বিরাট কোহলির মধ্যে সেটা দেখিনি। মনে হয়েছে, তিনি টিপিক্যাল দিল্লির ছেলে। সবকিছুই চড়াদাগের। মাত্রাছাড়া। নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ নেই। সেই সঙ্গেই অবধারিত ভাবে মনে হয়েছে, সাফল্যে যাঁর আস্ফালন এতখানি, তিনি ব্যর্থ হলে তো অবসাদের অতলান্ত কুয়োয় নিমজ্জিত হবেন। আর কে না জানে, জীবনের মতো (অথবা নাগরদোলার মতো। কিংবা সাইকেলের চাকার স্পোকের মতো) ক্রিকেটও এক আশ্চর্য ভারসাম্য রক্ষা করে। উপরে উঠলে নীচে নামতে হবে। নামতেই হবে। তখন কী হবে?

অনেকদিন আগে এক সাক্ষাৎকারে তাঁর ক্রিকেটদর্শনের কথা পড়েছিলাম— দেয়ার ইজ় নো পয়েন্ট কম্পিটিং ইফ ইউ ডোন্ট ওয়ান্ট টু বি দ্য বেস্ট! শ্রেষ্ঠ হতে না-চাইলে প্রতিযোগিতায় নাম দেওয়াটাই অর্থহীন। মনে হয়েছিল, এই যাঁর ভাবনা, তাঁর মধ্যে সাধনার সঙ্গে সঙ্গে কোথাও কি একটা নিজের জন্য নির্মম নির্দয়তাও থেকে যায়? বা একটা অহং, যে আমি মাঠে নামলে ম্যাচটা নিয়ে যেতেই নামব। নয়তো মাঠে নেমে লাভ নেই। এটা কি একটা ফালতু চাপ নয়? ব্যর্থ হলে তো মাথায় আকাশ ভেঙে পড়বে! সেই ব্যর্থতা পিছনে ফেলে পরবর্তী সোপানের দিকে এগোব কী করে?

কিন্তু পরে মনে হয়েছে, ওই দর্শনটাই বিরাট কোহলির মোটিভেশন। প্রেরণা। তিনি নিজের উপর চাপ ক্রমাগত বাড়িয়েছেন। হাই জাম্পারের মতো ‘বার’-এর উচ্চতা বাড়িয়ে গিয়েছেন। তার পরে সেই উচ্চতা টপকানোর চেষ্টা করে গিয়েছেন। নিজের জন্য নতুন নতুন শৃঙ্গ নিজেই ঠিক করেছেন। সেই শৃঙ্গ জয় করার পরমুহূর্তেই পরের উচ্চতা মাপতে শুরু করেছেন। সেঞ্চুরির পরে সাদা জার্সি-ট্রাউজ়ার্সের বিরাট কোহলি যখন এক হাতে ব্যাট, অন্য হাতে হেলমেটটা নিয়ে দু’হাত ছড়িয়ে আকাশের দিকে মুখ তুলে তাকাতেন, মনে হত একটা সাদা অ্যালবাট্রস পাখি স্বপ্নের উড়ান শেষ করে সবুজ ঘাসে খানিক জিরেন নিতে দাঁড়িয়েছে। একটু পরেই আবার উড়ে যাবে পরের শৃঙ্গের দিকে। মুখ তুলে সেই শিখরটা দেখে নিচ্ছে শুধু।

A rainbow in white jersey: colour of Virat Kohli in Test Cricket & an extraordinary ground philosophy

২৪ নভেম্বর, ২০২৪। অস্ট্রেলিয়ার পার্‌থে টেস্ট জীবনের শেষ (৩০তম) সেঞ্চুরি করার পর বিরাট কোহলি। ছবি: গেটি ইমেজেস।

তাঁর কৃচ্ছ্রসাধনের কথা লোকগাথার পর্যায়ে চলে গিয়েছে। রাতারাতি চিকেন ফ্রায়েড রাইস-চিলি চিকেন এবং নিজের প্রিয়তম ছোলে-ভাটুরেকে ত্যাগ দিয়েছিলেন (এখন সামনে থাকলে একটু শুঁকে দেখে নেন শুধু। বিজ্ঞজনেরা তো বলেই গিয়েছেন, ঘ্রাণেন অর্ধভোজনং)। ২০১২ সালে আইপিএলের সময়েও নাকি দিনে তিন প্যাকেট করে লজেন্স খেতেন। সেই টুর্নামেন্টের পরেই তাঁর বোধোদয় হয়। আয়নায় নিজেকে দেখে বলেছিলেন, এটা কোনও দীর্ঘমেয়াদি কেরিয়ারকে ধাওয়া-করা অ্যাথলিটের চেহারা হতে পারে না। পরদিন থেকেই যাবতীয় অভ্যাস বদলে ফেলেন। এমন কড়া ডায়েট (সম্পূর্ণ তেল-মশলা বিবর্জিত সেদ্ধ খাবার) করেছিলেন যে, মাস ছয়েকের মধ্যে দুবলা হতে হতে প্রায় রুগ্নত্বে পৌঁছে যান। পেশির শক্তি কমে যায়। বড় হিট নিতে গেলে সমস্যা হচ্ছিল। তখন নিজে নিজেই লেখাপড়া করে ঠিক করেন নিজের দৈনিক মেনু। পরামর্শ নেন ফিটনেস ট্রেনারের। জন্ম নেয় বিরাট কোহলি ২.০।

কেমন সেই দ্বিতীয় সংস্করণ? ২০১৪ সালে ফর্ম খারাপ থাকাকালীন তাঁকে সহানুভূতিসূচক টেক্সট পাঠিয়েছিলেন সতীর্থ দীনেশ কার্তিক। এসব ক্ষেত্রে ওপাশ থেকে শুকনো ধন্যবাদ-টন্যবাদ আসে। কিন্তু বিরাট কোহলি বিস্ময়কর জবাব দিয়েছিলেন, ‘‘কয়েকটা মাস সময় দাও। দ্যাখো আমি কী করি!’’ হতভম্ব কার্তিক পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘‘তুমি কি এই আত্মবিশ্বাসটা সঙ্গে নিয়েই জন্মেছিলে? না কি এটা অর্জন করেছ?’’ বিরাট বলেন, ‘‘আমি এই রকমই। আমার এই জার্নির নেপথ্যের কাহিনিটা তো কেউ জানে না। আমি ৮ বছর বয়স থেকে এখনও পর্যন্ত একজন কোচের কথাই শুনে আসছি। রাজকুমার শর্মা। আমি জানি, খ্যাতি এবং অর্থের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের আশেপাশে কিছু লোক বাড়তে থাকে। তখন অনেকে নিজের ভিতরের মানুষটাকে ভুলে যায়। কিন্তু আমি সেটা হতে দিইনি।’’ আশ্চর্য নয় যে, তাঁর শুরুর লক্ষ্য ছিল, কেউ কোনও ম্যাচে সেঞ্চুরি করলে তাঁকে সেই ম্যাচে ২০০ করতে হবে। নইলে তাঁর দিকে লোকে তাকিয়েও দেখবে না। সম্ভ্রম হয়, যখন তিনি বলেন, ‘‘আমি বরাবর সেটাই করে এসেছি। এত এত রান করেছি, যে কেউ আমায় উপেক্ষা করতে পারেনি।’’

অতঃপর সেই বছরেই অস্ট্রেলিয়া সফরে মহা প্রত্যাবর্তনে কীর্তিমান বিরাট কোহলির আবির্ভাব। প্রতিটি সেঞ্চুরির পরে যখন তিনি ব্যাট তুলছিলেন, তখন কি মনে মনে আউড়েছিলেন নিজেরই বলা বাক্য, ‘‘আমি যখনই মাঠে ঢুকেছি, নিজের ১২০ শতাংশ দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আমার কাছে প্রতিটা বল একেকটা ইভেন্ট। সে আমি ফিল্ডিং করলেও। আসলে আমাদের কেরিয়ার তো খুব ছোট। বড়জোর ২০ বছর। তাই যতক্ষণ কেরিয়ারটা থাকবে, ততক্ষণ চেটেপুটে নিতে হবে।’’ কে জানে!

একটা পডকাস্টে বলেছিলেন, ‘‘অনেক সময় ঝাঁপিয়ে-টাপিয়েও এক-একটা ক্যাচ ফস্কে যায়। ধারাভাষ্যকারেরা বলেন, অহো! কী অসাধারণ চেষ্টা! ট্রিমেন্ডাস এন্ডেভর! কেউ মনে রাখেন না যে, সেই ফিল্ডার মাত্র ১ সেকেন্ড আগে বলের কাছে পৌঁছোলে ওই ক্যাচটাই অনায়াসে নিতে পারত। আমার যাবতীয় পরিশ্রম ওই ১টা সেকেন্ডের জন্য! যাতে ১ সেকেন্ড আগে পতনশীল বলটার কাছে পৌঁছতে পারি। তা হলে আর সেটা দুর্দান্ত চেষ্টা হয়ে থেকে যায় না। ক্যাচটা হয় আর আমার টিম একটা উইকেট পায়।’’

মাত্র ১টা সেকেন্ড? শুনে তাজ্জব লেগেছিল! কিন্তু মনে হয়েছিল, এই লোকেরই বলা সাজে যে, সেরা হতে না-পারলে দৌড়ে লাভ নেই।

সেই তিনি টেস্টে ১০ হাজার রানের মাইলফলকের আগেই আচম্বিতে যাত্রা শেষ করে দিলেন! ৫০-এর নীচে গড় রয়ে গেল। সচিন তেন্ডুলকরকে ছোঁয়া হল না। কোনও বিদায়ী টেস্ট ম্যাচ হল না। ঠিকই। কিন্তু ক্রিকেট দুনিয়া জুড়ে অমোঘ হাহাকার উঠল— এখনই কেন? আরও অন্তত দু’বছরের টেস্ট ক্রিকেট তো রয়ে গেল! ওটাই বিরাট কোহলির টেস্ট ক্রিকেটের বিদায়গাথা।

দুম করে কেন টেস্ট ম্যাচ থেকে সরে গেলেন, তা নিয়ে বিবিধ জল্পনা রয়েছে। তার মধ্যে একটা হল, রোহিত শর্মা টেস্ট ম্যাচ থেকে অবসর নেওয়ার পরে তিনি ইংল্যান্ড সিরিজ়ে অধিনায়কত্ব চেয়েছিলেন। তা নাকচ হয়ে যাওয়াতেই অভিমান। অবসরের সিদ্ধান্ত সেই ক্ষোভসঞ্জাত যে, ক্যাপ্টেনসির নিকুচি করেছে। তোদের আমাকে নেওয়া বা না-নেওয়ার জায়গাতেই আর নিজেকে রাখব না! স্বাভাবিক, তিনি তো মনে করেন, আউট হলেও নিজের টার্মসে হবেন।

এ জল্পনা সত্য হতেও পারে। না-ও পারে। কিন্তু এ নিয়ে কোনও জল্পনা নেই যে, ভারতীয় টেস্ট দলে বিরাট কোহলি এমন এক ক্রিকেট সংস্কৃতি তৈরি করেছিলেন, যেখানে প্রত্যেকে শ্রেষ্ঠ হতে চাইবে। চাইতে হবে। তিনি অধিনায়ক থাকাকালীন সতীর্থদের কয়েকজনের সেটা বাড়াবাড়ি মনে হয়েছে ঠিকই। তাঁর একদা সতীর্থ রবিন উত্থাপ্পা সম্প্রতি যেমন বলেছেন, ‘‘অধিনায়ক বিরাট চাইত, টিমের সকলেই ওর মতো হোক। ওর মতো একাগ্র, একমুখী হয়ে থাকুক। সকলের পক্ষে তো সেটা সম্ভব নয়। সকলে বিরাট কোহলি হতে পারে না।’’ ঠিকই। বিরাট কোহলি হওয়ার চেষ্টা করাও মূর্খামি। এমন নয় যে, বিরাট কোহলি নিজে সেটা জানেন না। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি সবসময় নিজের মতো থেকেছেন। নিজের উপর কোনও বাঁধন রাখেননি। কোনও ফিল্টার লাগাননি। কারও সেটা পছন্দ হয়েছে। কারও হয়নি। কিন্তু তাতে তাঁর কিছু যায়-আসেনি। তিনি সবসময় ভেবেছেন, তিনি যখন মাঠে নামবেন, তখন তিনিই সেরা। কাউকে ছোট করার কারণে নয়। নিজেকে মোটিভেট করার কারণে।

বিরাট কোহলি প্রতিভাবান নন। তিনি কঠোর পরিশ্রমী। তিনি ক্রিকেটশ্রমিক। তিনি ক্রিকেটসাধক। তিনি ক্রিকেটতপস্বী। টানা তপস্যা করতে করতে যে মাস্‌ল মেমরি তিনি তৈরি করেছেন, তা ট্যাবলেটের মতো জলে গুলে খাইয়ে দেওয়া যায় না। সেখানেই তিনি সকলের চেয়ে আলাদা। সেখানেই তাঁর প্রভাব। তাঁর প্রতিপত্তি।

এতদিন পরে বিরাট কোহলির টেস্ট কেরিয়ারের দিকে ফিরে তাকাতে গিয়ে মনে হচ্ছে, চুলোয় যাক তাঁর মোট রান বা টেস্টের গড়। মহাকালের খাতায় সাদা জার্সিতে লাল বলের শাসক বিরাট কোহলি শুকনো পরিসংখ্যানকে ছাপিয়ে অনেক দূরে চলে গিয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে, তাঁর জন্য আমরা টেস্ট ক্রিকেটকে আবার ভালবাসতে শিখেছিলাম। ঘ্যানঘেনে, বিরক্তিকর, মন্থর, একঘেয়ে এবং ‘আগে বাঁচো’ ক্রিকেটের গহ্বর থেকে টেস্ট ক্রিকেট বেরিয়ে এসে রোমাঞ্চকর হয়েছিল বিরাট কোহলির জন্য। নিজস্ব এক পাগলাটে ওয়ার্ক এথিক্স, সোয়্যাগ, স্ট্রিট ফাইটার, শৃঙ্খলা, প্যাশন সমস্ত মণ্ড পাকিয়ে টেস্ট ক্রিকেটের দর্শকের পাতে উৎকৃষ্ট দধিকর্মা পরিবেশন করেছিলেন বিরাট কোহলি।

ধ্রুপদী ক্রিকেটের দুনিয়ায় যে জলছাপ তিনি রেখে গেলেন, তা কোনও টি টোয়েন্টির রোদ্দুরে শুকিয়ে যাবে না। তা বিরল। বিরল বলেই এত মহার্ঘ। টেস্ট ক্রিকেটের বিরাট কোহলি মানে অব্যর্থ বক্স অফিস। যে ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ে যেতে যেতেও আস্তিন গুটিয়ে প্রতিপক্ষকে বলে, ‘‘আয়! দেখে যা, টেস্ট ক্রিকেটটা এই ভাবেও খেলা যায়!’’

বিরাট কোহলি ছিলেন টেস্ট ক্রিকেটের আধুনিক মশালবাহক। আপাতদৃষ্টিতে মরা টেস্ট ম্যাচেও তাঁর উপস্থিতিটাই ছিল টাটকা বিদ্যুৎবাহী তারের মতো। গ্যালারির ৫০ হাজার দর্শক যখন ভাবতেন, এই ম্যাচ আর জেতা যাবে না, তখন বিরাট কোহলি ভাবতেন, আমি এই ম্যাচটাই জিতে দেখাব। আর কী আশ্চর্য, যখন তিনি সেটা ভাবতে শুরু করতেন, তখন সেটা ঘটতেও শুরু করত! কারণ, তিনি বিশ্বাস করতেন, যখন দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যায়, তখন সামনে এগোন ছাড়া আর কোনও রাস্তা থাকে না। তা-ই তাঁর উপস্থিতিতে ভারতীয় দল ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলা শুরু করেছিল। ভয়ঙ্কর সমস্ত টিকা-টিপ্পনির সামনে গুটিয়ে যায়নি। স্লেজ়িংয়ের নির্মম দুনিয়ায় অকুতোভয়ে ঢুকে পড়েছে এবং নির্দ্বিধায় ইটের বদলে পাটকেল ছুড়ে মেরেছে।

বিরাট কোহলি এর পরেও একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলবেন। সাদা বলের ক্রিকেটে তিনি স্বরাট। কিন্তু আমরা, কাকভোরে অ্যালার্ম দিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট সিরিজ় দেখতে-বসা দর্শকেরা তাঁকে সাদা জার্সিতে বড্ড মিস্‌ করব।

কারণ, আমরা জানি, বিরাট কোহলি আর আসবেন না। তাঁর মতো এত রংদার ক্রিকেট চরিত্র চট করে আসে না। পরিশ্রম, প্যাশন, শরীরীভাষা, সাহস, কৃচ্ছ্রসাধন, একাগ্রতা এবং সংকল্পের সাত রং ঝলমল করত তাঁর সাদা জার্সিতে। সেই সাত রংয়ের মিশেলে তৈরি হয়েছিল সাদা রংয়ের এক অত্যাশ্চর্য রামধনু। যা আর টেস্ট ক্রিকেটের দিগন্তে দেখা যাবে না।

আমাদের মতো ঘোর অবিশ্বাসীরা ভাবব, ধুস্, সাদা রংয়ের রামধনু আবার হয় নাকি! তার পরে আমাদের মতো ঘোর বিশ্বাসীরা ভাবব, কে বলল, হয় না? হয়েছিল তো একবার। কিন্তু আর হবে না।

Virat Kohli test cricket Test captaincy Indian Cricket
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy