Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: জীবাণু বশীকরণ

বিভিন্ন গণমাধ্যমে, ট্রেনে, বাসে দেখতে পাই, ‘অব্যর্থ বশীকরণ’-এর বিজ্ঞাপন।

শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২০ ০০:০০

এখন বৈশাখ মাস, প্রচুর বিয়ে। এর মধ্যে অনেক বিয়ের দিনই নিশ্চয়ই রাশিফল, জন্মছক, কুণ্ডলী ইত্যাদি মিলিয়ে তার পর নির্ধারণ করা হয়েছিল। করোনাভাইরাসের আক্রমণে বিয়ে লাটে উঠেছে। খুব জানতে ইচ্ছে করে, ভাগ্যবক্তারা তখন এই ভাইরাসটিকে কোনও ছকে খুঁজে পাননি? পাত্র-পাত্রীর হাতের রেখা মিলিয়ে যখন বিয়ের দিন স্থির করছিলেন, বিয়েটা যে ওই দিনে হতেই পারে না, তা ধরতে পারেননি? সারা দেশের বোর্ড এগজ়াম স্থগিত, আবার কবে শুরু হবে এখনও কেউই জানি না। আচ্ছা, পরীক্ষা শুরুর আগে মাদুলি, তাগা, মন্ত্রপূত কলম আনতে যাঁরা ছুটেছিলেন ওই ভাগ্য প্রস্তুতকারীদের কাছে; তাঁরা এখন কি পরবর্তী পরীক্ষার সময়সূচি পেয়ে গিয়েছেন ওঁদের কাছ থেকে?

বিভিন্ন গণমাধ্যমে, ট্রেনে, বাসে দেখতে পাই, ‘অব্যর্থ বশীকরণ’-এর বিজ্ঞাপন। বিশ্বের বিজ্ঞানীগণ দিনরাত এক করেও এখনও ত্রাসসৃষ্টিকারী ভাইরাসটিকে বশ করার কোনও টিকা তৈরিতে ব্যর্থ। আচ্ছা, এখন ওই বশীকরণের ওস্তাদদের কাছে গেলে কেমন হয়? মাত্ৰ ‘তিন দিন’ বা ‘তিন ঘণ্টা’ বা ‘তিন মিনিটেই’ (পুরো 5G স্পিডে) তাঁরা বশ করে নিতেন ভাইরাসটিকে!

অবশ্য শিলনোড়া দিয়ে, থালাবাটি বাজিয়ে ভাইরাস-দূরীকরণ পুজো আমরা করে ফেলেছি। কিন্তু পুজোটায় কিছু ঘাটতি হয়েছে,তাই করোনা বাবাজি সন্তুষ্ট হননি।

সকল ধর্মের দরজা আজ বন্ধ। না হলে কবেই করোনা দূরীকরণ মহাযজ্ঞের আয়োজন করে তাকে ভাগিয়ে দেওয়া যেত। ওঁদেরও একটু সুযোগ দেওয়া উচিত, তাই নয় কি? সত্যিই আমরা মূর্খ ,তাই হা-পিত্যেশ করে বসে আছি বিজ্ঞানীদের দিকে তাকিয়ে। জানি, অনেকের বিশ্বাসেই আঘাত দিলাম; তবুও বলব, এখন তো অঢেল সময়, একটু হাতের সঙ্গে ব্রেনটাকেও ‘স্যানিটাইজ়’ করুন। সুচরিতা হাজরা

সহ শিক্ষিকা, উল্টাডাঙ্গা গভঃ স্পন্সর্ড হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল ফর গার্লস

টিকিট বাতিল
ভারতীয় রেলওয়েকে ধন্যবাদ, তারা টিকিটের মূল্য খুব দ্রুততার সঙ্গে ফেরত দিচ্ছে। এমনকি কেউ আগে থেকে ওই সময়ের টিকিট বাতিল করে থাকলে বাতিলের জন্য যে মূল্য কেটে নেওয়া হয়, তাও ফেরত দিচ্ছে। কিন্তু ঠিক উল্টো পথে চলছে বিমান সংস্থাগুলো। রিফান্ডের নামে তারা ক্রেডিট ভাউচার ধরাচ্ছে। তার অর্থ, ওই একই নামে ভবিষ্যতে টিকিট কাটলে, ওই টাকা ‘অ্যাডজাস্ট’ হবে। যাত্রীকে তখনকার বর্ধিত মূল্য তো দিতেই হবে, এ ছাড়া যে টাকা কনভিনিয়েন্স ফি হিসাবে এ বার কম দেওয়া হল, পরে তা আবার লাগবে।
আমার জানা নেই, ওই একই পথে টিকিট ব্যবহার করতে হবে কি না, আর কত দিনের জন্যেই বা তা প্র‌যোজ্য। রিফান্ডের মোড়কে আমাকে আবার বিমান-ভ্রমণে বাধ্য করাই বা হবে কেন? আমি তো বিশেষ তাগিদেই বিমানের টিকিট কেটেছিলাম। ভবিষ্যতে কে কোন অবস্থায় থাকব, তা আমরা কেউই জানি না। এক বার ভাবুন, এই কায়দায় কত কোটি টাকা তাদের কাছে পড়ে থাকল, যখন আমাদের টাকার প্রয়োজন আছে। অপর দিকে, পরবর্তী সময়ে এই ধরনের ‘অনিচ্ছুক’ যাত্রী ও প্রকৃত যাত্রীদের মিলিত চাহিদায় টিকিটের দামও বেড়ে যাবে।
প্রদীপ ঘোষ
কলকাতা-৩৯

রেশন বিভ্রাট
মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে রোজগারহীন মানুষদের জন্য রেশন দোকানে রেশন কার্ডের বিনিময়ে, এমনকি যাঁদের রেশন কার্ড নেই তাঁদেরও বিনা মূল্যে রেশন দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। সকাল থেকে কাতারে কাতারে মানুষ নির্দিষ্ট দূরত্বের তোয়াক্কা না করে, প্রায় জীবন বাজি রেখে লাইনে দাঁড়িয়ে পড়ছেন তাঁদের কাঙ্ক্ষিত রেশন পাওয়ার আশায়। কিন্তু অনেকের কপালে রেশনের শিকে ছিঁড়ছে না, হয়তো রেশন কার্ডের কোনও না কোনও ত্রুটি, বা রেশনে ডিলারের তৈরি নিজস্ব নিয়মের কারণে। করোনা পর্বের ঠিক আগে আগে, রেশন কার্ডের সংশোধন নিয়ে বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন কমবেশি সবাই হয়েছেন। আর সেই সুযোগটাই কাজে লাগিয়ে অনেক রেশন ডিলার সাধারণ উপভোক্তাদের সমস্যার সৃষ্টি করছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, অসহায় মানুষদের বেঁচে থাকার জন্য যখন রেশন দেওয়ার উদ্যোগ, তখন তাঁদের কেন যে কোনও কারণ দেখিয়ে রেশন দেওয়া থেকে বঞ্চিত করা হবে? সরকারের নির্দিষ্ট দফতরগুলোকে অত্যন্ত লক্ষ রাখতে হবে, যাতে অসহায় মানুষদের বঞ্চিত করে কেউ আখের গোছানোর সুযোগ না পায়।
উজ্জ্বল গুপ্ত
কলকাতা-১৫৭

বদলে যাবে
প্রকৃতির নিয়মেই এক সময় হয়তো করোনার প্রকোপ কমে যাবে, কিন্তু এই ভাইরাস মানুষের মধ্যে যে অবিশ্বাসের ভাইরাস বুনে দিল, তা কি কখনও নাশ হবে? হয়তো আত্মীয় বা বন্ধুদের আর বাড়ির অন্দরে জায়গা হবে না, বাড়ির সামনে একটা লক্ষ্মণরেখা থেকে বিদায় করে দেব। বড় বড় হোটেলের ডিনার পার্টিতে যেতে মানুষ আর সাহস পাবে না। বাড়ির মেয়েটার জন্মদিন কিংবা বিয়ের অনুঠানের নিমন্ত্রণপত্রের তলায় হয়তো ছাপাতে হবে ‘দেশের করোনা বিধি প্রযোজ্য’ কিংবা ‘নিমন্ত্রিতদের করোনা নেই এই সার্টিফিকেট ছাড়া অনুষ্ঠানে আসা যাবে না’। পাচক কিংবা হোম ডেলিভারি-পার্সনদের অর্ডার দেওয়ার আগে, করোনা-রিপোর্ট দেখে নেওয়া হবে। দেশবিদেশের বিমানে নিজস্ব লোগোর নিচে সতর্কীকরণ লেখা থাকবে। ব্রিগেড এ বার হাঁপ ছেড়ে বাঁচবে, জমায়েত হবে না। ক্রিকেট খেলায় বোলার থুতু দিয়ে বলের চমক আনছে দেখলেই ম্যাচ বাতিল। পৃথিবীর বৃহৎ রাষ্ট্রেরা তাদের পরমাণু বোমা ও মিসাইল বানাবার পরিকল্পনা মুলতুবি রেখে, কারখানাগুলোয় স্যানিটাইজ়ার আর মাস্ক তৈরি করবে। তবে এ সবের মধ্যেও কারণবারির ব্যবসা ভালই চলবে, কারণ তা নাকি করোনা-নাশক!
সুব্রত কুমার দে
কলকাতা-১২

জিন্দা লাশ
নববর্ষের বিকেলে মুম্বইয়ের বান্দ্রায় পুলিশের নির্বিচার লাঠির মুখে পড়তে দেখলাম একপেট খিদে নিয়ে থাকা হতভাগ্য শত শত দিনমজুরকে। আমরা কি ভুলে গিয়েছি, এঁরা আমাদেরই সহনাগরিক? বেঁচে থাকার তাগিদেই এক দিন তাঁরা নিজেদের বাড়ি ও প্রিয়জনদের ছেড়ে ভিন রাজ্যের বাসিন্দা হয়েছিলেন। এল করোনা। কোনও কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘোষিত হল দেশজোড়া লকডাউন। সারা দেশে সব যানবাহন স্তব্ধ। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। মালিক বিতাড়িত করল কর্মস্থল থেকে। তাঁরা কাজ হারালেন, আজ তাঁরা শুধুই ‘পরিযায়ী’! আচ্ছা, পরবাসী হওয়া সচ্ছল সুবিধাভোগীদের কাউকে কি আমরা ‘পরিযায়ী’ বলে ডাকি?
করোনায় আক্রান্ত দেশের সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করছে। তা হলে এই অসহায় লোকগুলোকে ন্যূনতম সম্মান দিয়ে, তাঁদের থাকা-খাওয়ার সাময়িক ব্যবস্থা করতে কেন এতটাই অপারগ? খিদের জ্বালায় জ্বলছে নিজের পেট। দূর রাজ্য থেকে ফোনে ভেসে আসছে ক্ষুধার্ত শিশু সন্তানের কান্নার আওয়াজ। একই কলরব অভুক্ত মা-বাবা, স্ত্রীর! এ অবস্থায় মাস্ক, গ্লাভস, সোশ্যাল ডিসট্যান্স, আইসোলেশন, কোয়রান্টিন ইত্যাদি গালভরা শব্দগুলোকে তাঁদের উদ্ভট মনে হয়! করোনায় আর নতুন করে তাঁদের কী ভাবে মারবে? তাঁরা যে প্রকৃত পক্ষে এক এক জন জিন্দা লাশ! এই সময় নেতাদের অমৃতভাষণ ও নিদানকে কেবল বাহুল্য ও ঘৃণার দংশন মনে হয়। মনে হয়, ‘ভদ্র’ ভারত তাঁদের দিকে তাকিয়ে বলছে, ‘আরে, তোরা মরিস মরবি, ভদ্রলোকদের কেন মারবি?’
কাজি মাসুম আখতার
কলকাতা-৩৯

Coronavirus COVID-19
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy