E-Paper

শান্তির খোঁজে

তবে তাবড় রাষ্ট্রনেতারাও জানেন এই অঞ্চলে শান্তি বজায় রাখা সহজ কাজ নয়, বিশেষত ইজ়রায়েল এবং হামাসের মধ্যে আস্থার ঘাটতির জেরে। যা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে গাজ়ার ‘অসামরিকীকরণ’-এর ব্যাখ্যার অস্পষ্টতার কারণে।

শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০২৫ ০৪:২৬

চিনের সামরিক কৌশলবিদ সুন জ়ু একদা বলেছিলেন, দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ থেকে কোনও জাতিই লাভবান হয় না। সাম্প্রতিক কালে গাজ়া তার জ্বলন্ত উদাহরণ। আশার কথা, আপাতত সেখানে কার্যকর হয়েছে আন্তর্জাতিক শান্তি উদ্যোগ। উদ্যোগের সুবাদে বন্দি বিনিময়ের পাশাপাশি, নিজেদের ঘরে ফিরছেন লক্ষ লক্ষ ঘরছাড়া প্যালেস্টাইনি। যদিও সে ঘরও আজ ধ্বংসস্তূপে পর্যবসিত। তবে ধ্বংসের পাশাপাশি এই অঞ্চলের ক্রমবর্ধমান মানবিক সঙ্কট শুধু প্রতিবেশী দেশগুলিকেই নয়, বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী রাষ্ট্র আমেরিকাকেও বাধ্য করে শেষে ইজ়রায়েলকে শান্তি উদ্যোগের জন্য চাপ দিতে। সংঘর্ষ-বিরতির ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের গুরুত্বপূর্ণ অবদান থাকলেও, যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে শান্তি ফেরাতে মিশর, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহির ভূমিকাও উল্লেখযোগ্য। লক্ষণীয়, উভয় পক্ষই ট্রাম্প প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি উদ্যোগে একমত হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি, পণবন্দি ও বন্দি বিনিময়, গাজ়া থেকে ইজ়রায়েলি বাহিনী প্রত্যাহার, গাজ়ার অসামরিকীকরণ এবং এই অঞ্চলের শান্তিপূর্ণ উত্তরণ ও পুনর্গঠন নিশ্চিত করার জন্য একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীল বাহিনী মোতায়েন।

তবে তাবড় রাষ্ট্রনেতারাও জানেন এই অঞ্চলে শান্তি বজায় রাখা সহজ কাজ নয়, বিশেষত ইজ়রায়েল এবং হামাসের মধ্যে আস্থার ঘাটতির জেরে। যা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে গাজ়ার ‘অসামরিকীকরণ’-এর ব্যাখ্যার অস্পষ্টতার কারণে। আমেরিকান প্রেসিডেন্টের শান্তি প্রস্তাবে ‘অসামরিকীকরণ’ কী ভাবে সংজ্ঞায়িত হচ্ছে এবং কে তা পর্যবেক্ষণ করবে— এ সব এখনও অজানা। অনেকের মতে, ইজ়রায়েল সরকার এই যুদ্ধবিরতি এবং গাজ়া থেকে তাদের সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করে নেওয়ার বিষয়টিকে পণবন্দিদের ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের মূল্য হিসাবে দেখছে। এই চুক্তির মাধ্যমে নেতানিয়াহু এবং তাঁর সরকারের চরমপন্থীরা গাজ়া এবং ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে তাঁদের ঘোষিত সম্প্রসারণবাদী পরিকল্পনা পরিত্যাগ করতে চেয়েছেন, এমন প্রমাণ এখনও মেলেনি। হামাসের অন্তর্বর্তিকালীন সময়ের শর্তাবলি মেনে নিতে অস্বীকৃতি, সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণ, অথবা যে কোনও সহিংস ঘটনাই তাদের কাছে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অজুহাত হতে পারে। গত মার্চেই যুদ্ধবিরতি ভেঙে নেতানিয়াহু দেখিয়েছেন, চুক্তি লঙ্ঘনের জন্য তাঁর খুব কম অজুহাতের প্রয়োজন। অন্য দিকে, গত দুই বছরের অভিজ্ঞতার পর হামাস গাজ়ার উপরে তাদের আধিপত্য বা অস্ত্র সংবরণের দাবি মেনে নেবে, সে সম্ভাবনাও কম। বস্তুত, যুদ্ধবিরতির পরেও দু’তরফের বিরুদ্ধেই প্যালেস্টাইনিদের হত্যার অভিযোগ উঠেছে। ফলে পরিস্থিতি এখনও যথেষ্ট ভঙ্গুর।

আর একটি চ্যালেঞ্জ হল গাজ়ার পরিকাঠামো পুনর্নির্মাণের জন্য তহবিলের জোগাড়। গাজ়ার জনগণের মানবিক সাহায্যের খুবই প্রয়োজন। তবে তার আগে প্রয়োজন পুনর্গঠন। লক্ষ লক্ষ টন ধ্বংসস্তূপের মধ্যে, ইজ়রায়েলি আগ্রাসনে ভেঙে পড়া বাড়িঘর, স্কুল, হাসপাতাল, মসজিদ এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান পুনরুদ্ধারে সাহায্যের আশু প্রয়োজন। সাম্প্রতিক শান্তি উদ্যোগ রক্তপাত বন্ধ করেছে ঠিকই, কিন্তু সামনের পথটি কঠিন। প্যালেস্টাইন সমস্যার সমাধান এবং ইজ়রায়েলি দখলদারির অবসান না হলে, গাজ়ার পুনর্গঠনের ঘোষণাগুলি ফাঁকা আওয়াজই থেকে যাবে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Israel-Hamas Conflict Israel-Palestine Conflict gaza

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy