দীর্ঘ টানাপড়েনের পর শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মীদের বদলির ক্ষেত্রে রাজ্যকে নিয়ম শিথিল করার প্রস্তাব দিল স্কুল সার্ভিস কমিশন। স্কুলশিক্ষা দফতরকে চিঠি দিয়ে মিউচুয়াল ট্রান্সফার চালু করার কথা জানাল এসএসসি। আবেদন করেও দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে আটকে রয়েছে এই বদলির প্রক্রিয়া। বার বার সরকারের কাছে আবেদন করেও লাভ হয়নি শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মীদের। এ বার রাজ্যকে চিঠি দেওয়ায় কিছুটা হলেও আশার আলো দেখছেন অপেক্ষারত শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মীরা।
স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার বলেন, “নিয়োগের ক্ষেত্রে ‘মিউচুয়াল ট্রান্সফার’-এর প্রভাব পড়ে না। ছাত্র ও শিক্ষকের অনুপাতেরও কোন বদল ঘটে না, তাই মিউচুয়াল ট্রান্সফার চালুর ক্ষেত্রে কোন বাধা নেই। আমরা সরকারকে আমাদের তরফ থেকে মিউচুয়াল ট্রান্সফার চালুর জন্য চিঠি দিয়েছি।”
আরও পড়ুন:
২০২০ সালে প্রথম অনলাইনের মাধ্যমে মিউচুয়াল ট্রান্সফার চালু করা হয়। সেই সময় এই ট্রান্সফারের অনুমতি নিতে হত কমিশনারের দফতর থেকে। ঠিক তার পরের বছর ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটের পর ‘উৎসশ্রী’ পোর্টাল চালু করা হয়। আর সেখান থেকেই সরাসরি অনলাইনের মাধ্যমে মিউচুয়াল ও জেনারেল ট্রান্সফারের আবেদন করতে পারতেন রাজ্যের শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মীরা। এই পোর্টাল চালু হওয়ার পর সুপারিশের দায়িত্ব দেওয়া হয় স্কুল সার্ভিস কমিশনকে। আর ট্রান্সফারের অর্ডার ইস্যু করত মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি, নিয়োগের আপডেট ভ্যাকেন্সি সিট নিয়ে আন্দোলন এবং আইনি মামলা শুরু হওয়ার পরেই ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সরকারের তরফ থেকে ঘোষণা করা হয়, বদলির যে পোর্টাল চালু ছিল তা বন্ধ করা হচ্ছে। ছয় মাসের জন্য বন্ধ করার কথা হলেও দীর্ঘ দেড় বছর সময় অতিক্রান্ত হয়ে গিয়েছে কিন্তু এখনও এই পোর্টাল বন্ধ রয়েছে।
বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, “মিউচুয়াল ট্রান্সফার এত দিন ধরে আটকে রাখার কোন যৌক্তিকতা ছিল না। এটি একটি আশার খবর যে, এসএসসি শিক্ষা দফতরকে চিঠি দিয়েছে পুনরায় মিউচুয়াল ট্রান্সফার চালু করার জন্য। শিক্ষা দফতরের উচিত দ্রুত এ বিষয়টি কার্যকর করা।”
আরও পড়ুন:
শিক্ষক মহলের একটা বড় অংশের বক্তব্য শুধু মিউচুয়াল ট্রান্সফার নয়, ২০২২ সাল থেকে জেনারেল ট্রান্সফারের যে সমস্ত আবেদন রয়েছে সেটাও গুরুত্ব দিয়ে বিচার করা উচিত।
যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পার্থপ্রতিম বৈদ্য বলেন, “দু’জন শিক্ষক যখন পারস্পারিক সমঝোতার ভিত্তিতে বদলির আবেদন করেন এই বিষয়ে কোনো বাধা থাকা উচিত নয়। এই বিষয়টি দ্রুত চালু হলে শিক্ষক-শিক্ষিকারা উপকৃত হবেন।”
প্রসঙ্গত, পোর্টাল বন্ধ থাকার জন্য মিউচুয়াল ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে প্রায় ৩৫০ আবেদন দেড় বছর ধরে পড়ে আছে যার অনুমোদন এখনও দেওয়া হয়নি। এ ছাড়াও জেনারেল ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে পোর্টাল বন্ধের আগে পর্যন্ত আবেদনের সংখ্যা ছিল প্রায় ২০০০। স্কুল সার্ভিস কমিশন সরকারকে এই চিঠি দেওয়ার পর লোকসভা ভোট ঘোষণার আগেই ‘উৎসশ্রী’ পোর্টাল খোলার সম্ভাবনা দেখছেন রাজ্যের শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মীরা।