প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে কার্যত অন্ধকারে রেখেই রাজ্যের বাকুড়া, পুরুলিয়া এবং পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ গরমের কারণে স্কুলের সময় পরিবর্তনের জন্য নির্দেশিকা জারি করেছিল। নির্দেশিকায় বলা হয়েছিল দুপুরের বদলে সকালেই জেলার সরকার এবং সরকার পোষিত প্রাথমিক স্কুলে ক্লাস নেওয়া হোক। যে খবর সবার আগে প্রকাশ্যে আনে আনন্দবাজার ডট কম। সেই সময়ে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি গৌতম পালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনও উত্তর দেননি। খবর প্রকাশের কয়েক ঘণ্টা পর কিছু ক্ষণ আগেই একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। যেখানে জেলার নির্দেশিকা বাতিল করে দেওয়া হয়েছে এবং বলা হয়েছে, স্কুলের নির্ধারিত সময় পর্ষদের পরামর্শ ছাড়া এখনই পরিবর্তন করা যাবে না।
জ্যৈষ্ঠের গরমে নাজেহাল বঙ্গবাসী। এ দিকে দীর্ঘ ছুটির পর সোমবার খুলেছে রাজ্যের সরকারি এবং সরকার পোষিত স্কুলগুলি। কিন্তু ঘটনা হল, গরমের দাপট কমেনি। বরং বেলা বাড়লেই রোদ চড়ছে, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তাপমাত্রার পারদ। তাই ক্লাসের সময় এগিয়ে আনার নির্দেশিকা জারি করল পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষাসংসদ। ওই সব এলাকার স্কুলগুলিতে ক্লাস হবে সকাল সকাল।
এ বছর রাজ্যের স্কুলগুলিতে গরমের ছুটি পড়েছিল ৩০ এপ্রিল। তা শেষ হয়েছে ৩১ মে। গ্রীষ্মাবকাশ শেষে সোমবার অর্থাৎ ২ জুন সরকারি এবং সরকার পোষিত স্কুলগুলিতে পঠনপাঠন শুরু হয়েছে। কিন্তু হাওয়া অফিসের খবর অনুযায়ী, দক্ষিণবঙ্গে এখনই কমবে না তীব্র দাবদাহ। আপাতত বৃষ্টিরও কোনও সম্ভাবনা নেই। ইতিমধ্যেই পশ্চিমের জেলাগুলিতে তৈরি হয়েছে তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি। তাই বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুরের মতো বেশ কিছু জেলায় স্কুলের সময় পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওই সব জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষাসংসদের চেয়ারম্যানের তরফে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে এ বিষয়ে।
আরও পড়ুন:
জানা গিয়েছে, ৩ বা ৪ জুন থেকেই সকালের দিকে ক্লাস করানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলার স্কুলগুলিতে। সপ্তাহে পাঁচ দিন সকাল সাড়ে ৬টা থেকে ১১টা পর্যন্ত এবং শনিবার সকাল সাড়ে ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত চলবে পঠনপাঠন। একইসঙ্গে বলা হয়েছে, তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি কমলে দুপুরের নির্ধারিত সময়েই নেওয়া হবে সমস্ত ক্লাস।
সোমবার বাঁকুড়া জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষাসংসদের তরফে সময়সূচি বদল সংক্রান্ত এই নির্দেশিকা জারি করা হয়। মঙ্গলবার পুরুলিয়া এবং পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায়ও এই নির্দেশিকা জারি হয়। এ দিকে জেলায় জেলায় নির্দেশিকা জারি হওয়া নিয়ে উষ্মা তৈরি হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদে। ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের চেয়ারম্যান গৌতম পাল নিজেই মনে করছেন, তাঁকে না জানিয়ে এ ভাবে নির্দেশ দিতে পারে না জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষাসংসদের চেয়ারম্যানেরা। যদিও এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চানননি।
সরকারি এবং সরকার পোষিত স্কুলগুলিতে ছুটি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে শিক্ষক মহলেও। অনেকেই মনে করছেন, গ্রীষ্মাবকাশ এগিয়ে বা পিছিয়ে দেওয়ার ফলে আদতে অসুবিধায় পড়ছে পড়ুয়ারা। এ প্রসঙ্গে বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, “যখন গরমের দাপট কম ছিল, তখন সরকার গরমের অজুহাতে স্কুল বন্ধ রেখেছিল। আর এখন যখন অসহ্য গরম, তখন স্কুল খোলা হল। আমাদের রাজ্যে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে গরমের দাপট বাড়ে, সঙ্গে থাকে আর্দ্রতা জনিত অস্বস্তি। গ্রীষ্মকালীন ছুটি ব্রিটিশ আমল থেকেই চলে আসছে। বর্তমান সরকারের উচিত খামখেয়ালিপনা বন্ধ করে, স্কুলগুলির হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া।”
আরও পড়ুন:
তবে শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, “দূরবর্তী শিক্ষক-শিক্ষা কর্মীদের ক্ষেত্রে মর্নিং স্কুল অসুবিধাজনক হলেও এই তীব্র দাবদাহে ছাত্রছাত্রীদের দিকে তাকিয়ে তীব্র গরমে নাজেহাল জেলাগুলিতে মর্নিং স্কুল চালু করা উচিত। আজ বিদ্যালয় শুরুর দিনে বিদ্যালয় গুলিতে মাত্র কয়েক জন করে ছাত্রছাত্রী উপস্থিত ছিল। পঠনপাঠনের সুবিধার্থে সমস্ত বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে মর্নিং শিফট চালু করা হোক।”
চলতি শিক্ষাবর্ষের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, এ বছর স্কুলগুলিতে গরমের ছুটি পড়ার কথা ছিল মে মাসের ১২ থেকে ২৩ তারিখ পর্যন্ত। তবে এপ্রিলের শুরুতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, ৩০ এপ্রিল থেকে রাজ্যের প্রাথমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলগুলিতে গরমের ছুটি পড়ে যাবে। যে হেতু এ বছর গরম বেশি, সেই কারণে পড়ুয়া এবং শিক্ষকদের কথা ভেবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানান তিনি। তার পরেই স্কুলশিক্ষা দফতরের তরফে জানানো হয়, ২ জুন থেকে রাজ্যের সরকার পোষিত এবং ভারপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতে ক্লাস শুরু করতে হবে।