বাঁ পায়ের চোট পুরোপুরি সেরে ওঠার আগেই প্রচারে নেমে পড়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী ১৯-২০ মার্চ যেখানে তিনি বিধানসভা ভোটের প্রার্থী হয়েছেন, সেই নন্দীগ্রামে আসার কর্মসূচি আপাতত বাতিল করা হচ্ছে। তবে, প্রথম দু'দফায় পূর্ব মেদিনীপুরের ১৬টি আসনের বিধানসভা ভোট।
তাই, তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভা ভিত্তিক নয়টি জনসভা করবেন বলে জেলা তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে। এর মধ্যে উত্তর এবং দক্ষিণ কাঁথি যেমন রয়েছে তেমনি খেজুরি, পটাশপুর, এগরা, হলদিয়া, নন্দকুমার, তমলুক, পাঁশকুড়ায় জনসভা করবেন মমতা। ইতিমধ্যে ওই সব বিধানসভা এলাকায় তৃণমূল নেত্রীর জনসভার প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গিয়েছে। আগামী ১৯ মার্চ থেকে প্রত্যেকদিন জেলায় তিনটি করে জনসভা করবেন এবং প্রতিদিন কলকাতায় ফিরে যাবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে।
নন্দীগ্রামে প্রার্থী হলেও মমতার নজরে কাঁথিও। এখানে উত্তর এবং দক্ষিণ কাঁথি বিধানসভা রয়েছে। কয়েক দশক ধরে এই এলাকা অধিকারী পরিবারের হাতে নিয়ন্ত্রিত। এবার উত্তর কাঁথিতে তরুণ জানা এবং দক্ষিণ কাঁথিতে জ্যোতির্ময় করকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। আগামী ২১ মার্চ কাঁথি শহরের পাশ্ববর্তী ঘাটুয়া এবং উত্তর কাঁথির লোকাল বোর্ড এলাকায় মমতা সভা করবেন। তার জন্য বুধবার দু'জায়গাতেই দলীয় নেতৃত্ব সভাস্থল পরিদর্শন করেন। একই দিনে নন্দকুমারের দলীয় প্রার্থী সুকুমার বেরার সমর্থনে তৃণমূল নেত্রী সভা করবেন বলে জানা গিয়েছে। ১৯ মার্চ তমলুকে তৃণমূল প্রার্থী সৌমেন মহাপাত্রর সমর্থনে মেচেদায়, পটাশপুরে দলীয় প্রার্থী উত্তম বারিকের সমর্থনে এবং এগরায় তরুণ মাইতির সমর্থনে বালিঘাইতে জনসভা করবেন মমতা। ইতিমধ্যে মঞ্চ তৈরির কাজ প্রায় শেষের পথে। বুধবার হেলিকপ্টার এসেও মহড়া দিয়েছে। ২০ মার্চ পাঁশকুড়া, খেজুরি এবং হলদিয়ায় জনসভা করবেন নেত্রী।
সভামঞ্চ তৈরি হচ্ছে। এগরার বাইঘাইতে। নিজস্ব চিত্র
দশ বছর পরে ফের পটাশপুরে আসছেন তৃণমূল নেত্রী। তাই প্রার্থী নিয়ে দলের অন্দরে ক্ষোভ থাকলেও নেত্রীর আগমনে উজ্জীবিত তৃণমূল শিবির। জোর কদমে চলছে সভার প্রস্তুতি। গত দুবারের বিধায়ক জ্যোতির্ময় করকে এবার পটাশপুর থেকে সরিয়ে দক্ষিণ কাঁথি কেন্দ্রে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। পরিবর্তে কাঁথি থেকে উত্তম বারিককে পটাশপুরে প্রার্থী করায় তৃণমূলে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। এগরা বিধানসভায় গত লোকসভা ভোটে বিজেপি দশ হাজার ভোটে এগিয়ে রয়েছে। পুরসভার চোদ্দোটি ওয়ার্ডের মধ্যে বারোটিতেই জয়ী হয় বিজেপি। তৃণমূলের সেই সঙ্কটে ফের আসরে তৃণমূল নেত্রী। শুক্রবার পটাশপুর দাইতলা বাজার মাঠে এবং এগরা বালিঘাই ময়দানে জনসভা করবেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর আসায় দলীয় কোন্দল ভুলে একজোট তৃণমূল। পটাশপুর-১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি মৃণালকান্তি দাস বলেন, ‘‘পটাশপুরে নেত্রীর জনসভা গত বারের জনসমাবেশকে ছাপিয়ে যাবে। পঞ্চাশ হাজার ভোটে পটাশপুর থেকে তৃণমূল প্রার্থী জিতবে।’’
রাজনৈতিক উত্তেজনাপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত ময়নার বাকচা নিয়ে বিজেপি ও তৃণমূলের দ্বৈরথ শুরু হয়েছে বিধানসভা ভোটের প্রচারে। ময়না কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী অশোক দিন্দার সমর্থনে গত সোমবার বাকচার করের ঘাট সংলগ্ন ময়দানে জনসভা করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। ওই সভার রেশ কাটার আগে তৃণমূল প্রার্থী সংগ্রাম দোলইয়ের সমর্থনে আগামী ২১ মার্চ বাকচায় জনসভা করবেন তৃণমূল যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বাকচার এজমালিচক হাইস্কুল ময়দানে ওই জনসভার প্রস্তুতিও শুরু করেছে তৃণমূল নেতৃত্ব।
দলীয় সূত্রের খবর, শুভেন্দুর সভার চেয়েও বেশি জমায়েতের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে তৃণমূল। বুধবার বাকচায় সভাস্থল পরিদর্শনে যান তৃণমূল জেলা সভাপতি সৌমেন মহাপাত্র, বিধায়ক সংগ্রাম দোলই-সহ ময়না ব্লক তৃণমূল নেতৃত্ব। সৌমেনবাবু বলেন, ‘‘বাকচায় ২১ মার্চ রাজ্য তৃণমূল যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসভার জন্য প্রস্তুতির পাশাপাশি এলাকায় প্রচার কর্মসূচিও চালানো হচ্ছে।’’