রাজনন্দিনী পাল।
প্রযোজক প্রসেনজিত্ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি। প্রথমে ‘প্রযোজক’ বিশেষণ লিখলাম, কারণ যে উদ্দেশ্যে তাঁর বাড়ি এসেছি সেখানে এই পরিচয়টাই প্রাসঙ্গিক। উদ্দেশ্য অভিষেক সাহার ‘উড়নচণ্ডী’র নায়িকার সাক্ষাত্কার। নায়িকা, অর্থাত্ রাজনন্দিনী পাল। ছবিটি মুক্তি পাবে ৩ অগস্ট, শুক্রবার। রেকর্ডার অন করতেই রাজনন্দিনী বললেন, ‘‘আমি কি একটু ইংলিশে বলতে পারি, নাকি পুরোটা বাংলায় বলতে হবে?’’ বললাম, ‘‘যেমন ইচ্ছে, তেমন বলতে পারেন।’’
অফারটা এল কী ভাবে?
অ্যাকচুয়ালি বুম্বা আঙ্কল অনেক বছর ধরে বলেছিল তোকে আমি কাজে লাগাব। আমি ভাবতাম, আমাকে এমনিই বলে, নাকি সত্যিই সুযোগ আসবে? ‘উড়নচণ্ডী’ পাওয়ার পর আমি বুঝলাম কেন এত বছর আমাকে ওয়েট করতে হল। কারণ, লঞ্চের জন্য এমন একটা ক্যারেক্টারই দরকার ছিল। এই সুযোগ সবাই পায় না। আমি খুব লাকি, এত গুরুত্বপূর্ণ একটা ছবি দিয়ে আমার কেরিয়ার শুরু হল। আমি অনার্ড সুদীপ্তা আন্টি, চিত্রা সেনের মতো অভিনেত্রীদের সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করেছি।
আরও একটা ছবির শুটিংও তো শেষ করেছেন আপনি?
হুম। সৃজিতের ‘এক যে ছিল রাজা’। ওটা পুজোতে রিলিজ। ওটার শুটিং আগে হয়েছে। ‘উড়নচণ্ডী’ আগে রিলিজ করছে।
তা হলে কোনটা আপনার প্রথম ছবি?
অফকোর্স ‘উড়নচণ্ডী’। এটার অফারও প্রথম এসেছিল। আবার রিলিজও আগে। ইনফ্যাক্ট, সৃজিতের সঙ্গে আলাপ হয় বুম্বা আঙ্কলের পার্টিতে। ওখানে আমাকে দেখে ও ‘এক যে ছিল রাজা’র জন্য ভেবেছিল। ফলে সব ধন্যবাদ বুম্বা আঙ্কলের প্রাপ্য।
আরও পড়ুন, ফার্স্ট প্রায়োরিটি ছিল বুম্বাদাকে হ্যাপি করা, বললেন ‘উড়নচণ্ডী’ অভিষেক
সৃজিত মুখোপাধ্যায় আপনার কাছে শুধু সৃজিত?
ইয়েস। প্রথম প্রথম স্যর বলতাম। বাট সৃজিত বলেছিল, প্লিজ আমাকে স়ৃজিত বল। স্যর বললে আলাদা কোনও সম্মান আমার জন্য অ্যাড হবে না। ও আমার বন্ধু, গাইড, মেন্টর।
শুধু এটুকুই?
(মুচকি হেসে) আমি জানি আপনি কেন এই প্রশ্নটা করছেন।
কেন করছি?
কারণ আমাদের নিয়ে প্রচুর কথা হয়।
ও! আপনি জানেন সে সব?
ইয়েস। কেন জানব না (ঈষত্ জোরে)?
‘উড়নচণ্ডী’র শুটিং ব্রেকে রাজনন্দিনী।
শুধু ‘বন্ধু, গাইড, মেন্টর’ বলেই কি এত কথা হয়?
দেখুন, এটা নিয়ে এত আলোচনা হয় কারণ আমরা প্রচুর হ্যাংআউট করি।
আপনি আর সৃজিত?
হ্যাঁ। ওর সঙ্গে একাও হ্যাংআউট করি। কখনও বন্ধুরা থাকে। ও আমার বাড়ি এসেছে। আমার ওর সঙ্গে সময় কাটাতে ভাল লাগে। কারণ ওর থেকে আমার অনেক কিছু শেখার আছে। এমন আরও অনেকে আছে। বুম্বা আঙ্কল, অভিষেকদা। সিনেমা ওদের কাছে পোকার মতো। ওদের সঙ্গে থাকলে এমন কিছু মাথায় ঢোকে যা আমাকে এনরিচ করে। আমি কখনও অভিনয় শিখিনি। দু’বছর আগে কোনও নাটক দেখিনি। এ সব টেকনিক্যাল টার্ম আমি জানতাম না। সিনেমাটা শখে নয়, আমি সিরিয়াসলি করতে চাই।
তা হলে সৃজিত-রাজনন্দিনী পুরো আলোচনাই গসিপ বলছেন?
পুরোটাই গসিপ। আই অ্যাম হ্যান্ডলিং দিস বাই নট হ্যান্ডলিং ইট। আজ সৃজিতকে নিয়ে গসিপ হচ্ছে। কাল অন্য কাউকে নিয়ে হবে। যার যেটা বলার সে সেটা বলবেই। আই অ্যাম নট ওয়রিড।
রাজনন্দিনীর কেমিস্ট্রি তা হলে এখন কার সঙ্গে?
শুধু কাজের সঙ্গে কেমিস্ট্রি। আই উইশ আই হ্যাড আ বয়ফ্রেন্ড।
আরও পড়ুন, প্রেম ছাড়া কি আর প্রশ্ন নেই? বলছেন সোহিনী
বয়ফ্রেন্ড নেই বলছেন?
এখনও তো নেই।
আর বন্ধু?
আমি হেরিটেজে পড়েছি। হেরিটেজ থেকেই ইংলিশ অনার্স পড়ছি সেকেন্ড ইয়ার। বিলিভ মি, এত বছরে মানে পুরো স্কুললাইফে মাত্র তিনটে বন্ধু আমার। বেশি বন্ধুত্ব আমার পোষায় না। এমনি প্রচুর লোকের সঙ্গে আড্ডা মারি। কিন্তু পার্সোনালি কারও কমেন্ট আমাকে অ্যাফেক্ট করবে, সেই সংখ্যাটা কম।
ইন্ডাস্ট্রিতে কোনও বন্ধু রয়েছে?
উজান। কৌশিক আঙ্কল, চূর্ণী আন্টির ছেলে, ও ভাল বন্ধু। হিজ ওপিনিয়ন ম্যাটারস টু মি। ও অনেক কিছু জানে। আমি ওকে অ্যাডমায়ার করি।
এই যে কাজের সঙ্গে কেমিস্ট্রি বলছেন, তা হলে তো এখন আপনি রাজনন্দিনী নন, শুধুই মিনু (‘উড়নচণ্ডী’-তে রাজনন্দিনীর চরিত্রের নাম)?
অফকোর্স। অফার এল যখন তখন থেকেই আই অনেস্টলি লিভ উইথ মিনু। স্টোরি, ক্যারেক্টার কিছুই না জেনে হ্যাঁ বলেছিলাম, কারণ অফারটা এসেছিল বুম্বা আঙ্কলের থেকে। তার পর তো অনেকটা সময়েই আমি ‘মিনু’ই ছিলাম।
মায়ের সঙ্গে রাজনন্দিনী।
কী ভাবে তৈরি করলেন ‘মিনু’-কে?
আমরা এত রিহার্স করেছিলাম, সবটা মুখস্থ ছিল। মানে, এই সিনটার ওই লাইনটা বল, বললে আমাদের স্ক্রিপ্ট দেখতে হত না। অভিষেকদা প্রচুর হোমওয়ার্ক করে। আর যারা ওর সঙ্গে কাজ করছে তারাও হোমওয়ার্ক করবে, এটা পছন্দ করে। অনস্ক্রিনে একটু ইম্প্রোভাইজেশন তো হবেই। সেটা প্ল্যান করা থাকে না।
জীবনের প্রথম সিনেমা, অফার পাওয়ার পর মা (ইন্দ্রাণী দত্ত) কিছু বলেছিলেন?
মা কখনও নিজের ইনফ্লুয়েন্স খাটাতে পছন্দ করে না। মা অ্যাডভাইসার। আমি কখন সিনেমা করব, আদৌ করব কি না, এ সব নিয়ে মা বলেছিল, এটা তোমার কেরিয়ার, তোমার লাইফ। তুমি ঠিক কর, কী করবে। আসলে আমার জীবনের কন্ট্রোল আমার হাতেই দিয়েছে মা। মা কখনও বলে, আমি বুঝি না কে কার মা। আসলে মা জানে কখন বন্ধু হতে হবে, কখন মা হতে হবে।
মায়ের সিনেমায় তো আপনি গানও করেছেন?
ইয়েস। মায়ের দুটো ছবিতে গান গেয়েছি।
আরও পড়ুন, ‘ঋদ্ধির জাতীয় পুরস্কার যে আমি দেখে গেলাম, এটাই বড় প্রাপ্তি’, বললেন চিত্রা সেন
তা হলে ফোকাসে কোনটা, গান নাকি অভিনয়?
(ভুরু কুঁচকে) এই প্রশ্নটার উত্তর আমি কাউকে দিতে পারি না। আমার নাচের প্রথম টিচার মা। যখন হাঁটতেও পারতাম না তখন ‘ফুলে ফুলে’ মা করাত। গান শিখেছি প্রথম মাসির কাছে। এবিসিডি বলার আগে সারেগামা করেছি। ফলে গান বা অভিনয় কোনওটাই এখনও বেছে নিতে পারি না। আই হ্যাভ আ ন্যাক ফর পারফর্মিং।
‘এক যে ছিল রাজা’ ডেফিনিটলি ‘উড়নচণ্ডী’র থেকে আলাদা?
ইয়েস। কমপ্লিটলি ডিফারেন্ট ফ্রম মিনু। ওখানে আমি যিশুদার রানি। ভাওয়ালের রানি। একটা ইন্টারেস্টিং বিষয়, ‘এক যে ছিল রাজা’ শুটের পাঁচ দিন পর ‘উড়নচণ্ডী’ করেছিলাম। ওই পার্সোনালিটি ডিফারেন্সটা খুব ইন্টারেস্টিং ছিল। রাজকীয় ব্যাপার থেকে একেবারে গ্রামের মেয়ে। খুব চ্যালেঞ্জিং ছিল।
ডেবিউ নিয়ে বন্ধুরা কী বলছে?
আমার বন্ধুরা তো খুব এক্সাইটেড। ওরা আমার জন্য অনেস্ট রিভিউ দেবে। এখনই যেটা অফ মনে হয়েছে, বলেছে। কারণ ওরা চায় আমি আরও ভাল করি। কমপ্লিমেন্ট দেওয়ার জন্য তো গোটা পৃথিবী রয়েছে। কিন্তু এমন কিছু লোকের প্রয়োজন যারা সমালোচনা করবে।
এর পর কী কাজ করছেন?
দেখুন, অফার পাচ্ছি। কিন্তু এই দুটো সিনেমার থেকে আলাদা কিছু করব। আমি অনেক সিনেমা করতে চাই, এমন নয়। কম কাজ করলেও ভাল কাজ করতে চাই।
ছবি: ফেসবুকের সৌজন্যে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy