রণদীপ, ওর নামেই ‘লড়াই’ শব্দের অস্তিত্ত্ব! কতগুলো বছর ধরে কী ভীষণ লড়াইটাই না চালিয়ে যাচ্ছে আমার ছেলে। সোমবার, ১৭ জানুয়ারি ওর জন্মদিন। আজও অভিনয় দুনিয়ার অনেকে, আমাদের কাছের-দূরের মানুষেরা রণদীপকে ভালবাসেন। ওর কথা জানতে চান। খোঁজ নেন। ওর জন্মদিনে তাঁদের সবাইকে সুখবর দিই, আগের থেকে অনেকটা ভাল আছে রণদীপ। কথা বলতে এখনও পারে না। কিন্তু যে কোনও প্রতিকূল মুহূর্তেও খুব সুন্দর হাসি আমাদের উপহার দেয়। দু’পাশে দু’জনকে পেলে হাঁটতেও পারে। খুব শিগগিরিই আবার আগের মতো হয়ে যাবে আমার ছেলে। এ ভাবেই প্রতি মুহূর্তে লড়তে লড়তে জীবনে ফিরছে। এ কী কম কথা?
অতিমারি এখনও কমেনি। তাই ইচ্ছে থাকলেও জন্মদিনের উদযাপনে লাগাম টানতে হয়েছে। আজ রণ-র কয়েক জন খুব কাছের বন্ধু আসবে। আর থাকব আমি, ওর বোন, বাবা, আমার দাদা। ওর প্রিয় পদ মাংস। রাঁধছি আমি। নতুন গুড় উঠেছে। শীতে এই গুড় দিয়ে চালের পায়েস খেতে ও বড় ভালবাসে। আজ সেটাও হচ্ছে। বাঙালি বাড়িতে ছেলেমেয়ের জন্মদিন যে ভাবে হয় সে সবই করব। বিকেলে কেক কাটা পর্বও বাদ যাবে না।
রণ আমাদের বাঁচতে শেখায়। লড়াই করতে শেখায়। ও আমাদের জীবনের সূর্যের কিরণ। আজ ওর দিন। তাই ওকে ঘিরে আমাদের নতুন ভাবে আনন্দে মেতে ওঠার দিন।
কথা বলতে পারে না। নিজে নিজে হাঁটতেও পারে না। অনেক প্রতিবন্ধকতা। সেই অবস্থাতেই আচমকা আমার বাবা-মায়ের চলে যাওয়া। আমি, আমার দাদা খুবই ভেঙে পড়েছিলাম। কিছু বলতে না পারলেও রণ বুঝত সবই। খুব কষ্ট পেয়েছিল ও। বাবার খুব কাছের, আদরের ছিল তো। সেই কষ্ট সামলাতে এক সময় দেখলাম বাবাকেই ও বেশি করে আঁকড়ে ধরল। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের আবৃত্তি, অভিনয়, ভাষ্যপাঠ সারা ক্ষণ শুনতে চায়। আমিও ইউটিউবে চালিয়ে দিই সে সব। রণদীপ এ ভাবেই যেন নতুন করে তার দাদুকে খুঁজে পেল। একটা সময়ের পরে আমার মনে হল, ও যদি এ ভাবে সামলে উঠতে পারে তা হলে আমি নয় কেন?
আমিও কিন্তু ওকে দেখেই স্বাভাবিক জীবনে একটু একটু করে ফিরতে পেরেছি। ওর জেদ, ওর হাসিমুখ, ওর লড়াকু মানসিকতা আমাদের উৎসাহ জোগায়। আগামী মার্চে হয়তো মুক্তি পাবে রণদীপ অভিনীত ছবি ‘ছায়া মারীচ’। পরিচালক সায়ন্তন মুখোপাধ্যায় এই ছবির পরে রণদীপকে নিয়ে খুবই আশাবাদী। ওর অভিনয় নিয়ে আরও অনেকেই প্রশংসা করেছেন। অনেকের আক্ষেপ, সব ঠিক থাকলে রণদীপ আজ অভিনয় দুনিয়ার অন্যতম তারকা হতেন। কী হলে কী হত রণ, এই সব নিয়ে আমি আর ভাবি না। পিছন ফিরে দেখতে চাই না। কোনও আফশোসও করতে চাই না। যা ঘটে গিয়েছে তা অতীত। রণদীপ আমার সঙ্গে, আমাদের মধ্যে আছে, এটাই চূড়ান্ত বাস্তব। ওর হাতে এখনও অনেক সময়। যা হওয়ার সেটাই হবে।
এই যে ও আমাদের সঙ্গে রয়েছে, এক জন মায়ের কাছে এটা কত বড় পাওনা বলুন তো?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy