Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Saswata Chatterjee

Subhendu-Saswata: অতিমারি হয়তো ‘লেখক’ শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়কে আবিষ্কার করত

সেই দগদগে যন্ত্রণাটা হয়তো আর নেই। শোক হয়তো থিতিয়ে গিয়েছে। কিন্তু দিনটা এলেই বুকের ভিতর অদ্ভুত শিরশিরানি শুরু হয়। 

শুভেন্দুর মৃত্যুবার্ষিকীতে আবেগপ্রবণ পুত্র শাশ্বত।

শুভেন্দুর মৃত্যুবার্ষিকীতে আবেগপ্রবণ পুত্র শাশ্বত।

শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২১ ১২:১৩
Share: Save:

রামচন্দ্রের কাছে অভিশপ্ত তাঁর ১৪ বছরের বনবাস। সে রকমই আমার কাছে অভিনেতা-বাবা শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যু। কালের নিয়মে কারওরই মা-বাবা থাকেন না। আমারও বাবা চলে গিয়েছেন আজকের দিনে, ৫ জুলাই। সেই দগদগে যন্ত্রণাটা হয়তো আর নেই। শোক হয়তো থিতিয়ে গিয়েছে। কিন্তু দিনটা এলেই বুকের ভিতর অদ্ভুত শিরশিরানি শুরু হয়।

আগের বছর আনন্দবাজার অনলাইনের লেখাটা দেখতে গিয়ে মনে পড়ল, বাবার সঙ্গে আমার সম্পর্ক, বাবার সঙ্গে মহানায়ক উত্তমকুমারের আত্মিক টান, বাবার মৃত্যুদিন পালনের রীতি সবার সামনে এনেছিলাম। আলোচনা, বিশ্লেষণের ফাঁকে আমিও যেন নতুন করে বাবাকে ফিরে দেখেছিলাম।

এ বছর মহামারির বাইরে গিয়ে কোনও ভাবনা আর ভাবতে পারি না। মনে হল, বাংলা ছবির স্বর্ণযুগের অভিনেতা এই প্রজন্মের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে কতটা সম-সাময়িক হতে পারতেন? সত্যিই ভাবার মতো বিষয়। আমার বাবার সময়ে আকাশবাণী ছিল, কফি হাউজের আড্ডা ছিল, সাদা-কালো ছবির যুগ ছিল। বাবা যদিও রঙিন ছবির যুগেও যথেষ্ট অনায়াস ছিলেন। তবু, প্রশ্ন থেকেই যায়, কতটা পারতেন?

ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ।

আমার মনে হয়, মানিয়ে চলার চেষ্টা বাবা আপ্রাণ করতেন। সেই সঙ্গে অনেক কিছু হারাতেন। সবার আগে যেটা মিস করতেন সেটা আড্ডা। শ্যুটের ফাঁকে, কাজের অবসরে, ছুটির দিনে বাবা এই একটি কাজে ভয়ঙ্কর ভাবে ডুবে যেতেন। সেটা আড্ডা। এখন মুঠোফোনের যুগ। অতিমারি সেই যন্ত্রকে সারাক্ষণ সচল, সজীব রেখেছে। বাবা হয়তো এই একটি জায়গায় একটু হাঁপিয়ে উঠতেন। বাবা খুব ‘লোক জন’ পছন্দ করতেন।

আরও একটা জিনিস হয়তো বাবা মানিয়ে নিতে পারতেন না। সেটা তাঁর আদর্শ। বাবাদের সময়ে সব কিছুর স্তম্ভ ছিল আদর্শ। সেটা অভিনয় দুনিয়া বলুন বা রাজনীতি। কিংবা গণনাট্য সংঘের সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়া। সবটাই আমার বাবা করেছেন তাঁর নীতিগত আদর্শকে সম্মান দিয়ে। এখন আকাশবাণী-ও অনেক বদলে গিয়েছে। ছবির জগৎ-ও। এখন কোথাও কি আর আদর্শের প্রয়োজন পড়ে?

এ বার প্রশ্ন, প্রাণচঞ্চল, আড্ডাবাজ শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায় অতিমারিতে কী করতেন? নিশ্চয়ই ভয়ানক অস্বস্তিতে পড়তেন? আমি বলব, যাঁরা শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়কে চেনেন না তাঁরা এ রকমই ভাববেন। কিন্তু আমার বাবা আমার থেকেও বেশি প্রযুক্তি কৌশলী। আমার আগেই মুঠোফোন কিনেছিলেন। আমি নিতান্ত চাপে পড়ে বছর কয়েক এই যন্ত্র ব্যবহার করছি।

ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ।

একই সঙ্গে বাবা ভীষণ সাহিত্যানুরাগী। তাঁর বাবার ইচ্ছাকে সম্মান দিতে চিকিৎসা বিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। আমি জানি, স্বাধীনতা পেলে বাবা সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করতেন। অতিমারি, লকডাউনকে পুরোপুরি কাজে লাগাতেন। কী ভাবে? চুটিয়ে ব্লগ লিখতেন। এন্তার বই পড়তেন। ছোট থেকে দেখে এসেছি, কাজের দুনিয়ার বাইরে বাবার প্রিয় বন্ধু নানা স্বাদের বই। পড়তে, লেখালিখি করতে বাবা দারুণ ভালবাসতেন। অতিমারি হয়তো লেখক শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়কে আবিষ্কার করত।

অনেকেই জানতে চান, শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের সঠিক মূল্যায়ন হয়েছে? ১৪ বছর বাবা নেই। তার পরেও ৫ জুলাই এলে অনেকেই শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের নাম এক বার হলেও উচ্চারণ করেন। তাঁর অভিনীত ছবি নিয়ে কথা বলেন। হয়তো পছন্দের ছবিও দেখেন। ফলে, বাবা কিছু পাননি বলি কী করে?

আসলে আমাদের এখানে জীবিত অবস্থায় মানুষের মূল্যায়ন হয় না। মৃত্যুর পরে চলে যাওয়া মানুষটি যেন সঠিক ভাবে আত্মপ্রকাশ করেন। বাবা তাই দেখে যেতে পারলেন না, ২০২১ একেবারে ভুলে যায়নি অভিনেতা শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়কে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE