Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
Koushik Sen

দল বদলের টলিউডে ঐক্যের গান, গলা মেলালেন ‘রংহীন’ শিল্পীরা

২০১৯ সালে রামলীলা ময়দান থেকে শুরু হওয়া এক মিছিলে হাঁটার পরে অনির্বাণ ভট্টাচার্যের কলমে উঠে এসেছিল এই গান।

অনির্বাণ, ঋদ্ধি, ঋতব্রত এবং পরমব্রত।

অনির্বাণ, ঋদ্ধি, ঋতব্রত এবং পরমব্রত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২১ ১৪:৫৭
Share: Save:

দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়েছে টলিউড। কেউ গিয়েছেন গেরুয়া শিবিরে। কেউ বা এখনও সবুজের দলে। রং বদলের এই মরসুমে বেরিয়ে এল আরও এক শিবিরের স্বর। কোনও মিছিলে পা মেলানো নয়, ‘নিজেদের মতে, নিজেদের গান’ বাঁধলেন শিল্পীরা। কোনও দলেই নেই যাঁরা, এই গান তাঁদের। যদিও গানে গানে যে মত প্রকাশিত হল, তা মূলত ফ্যাসিবাদ বিরোধী। কটাক্ষ করা হল সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতিকে।

মিনিট ছয়েকের এই ভিডিয়োয় নবীনদের সঙ্গে দেখা গেল প্রবীণ শিল্পীদেরও। ২০১৯ সালে রামলীলা ময়দান থেকে শুরু হওয়া এক মিছিলে হাঁটার পরে অনির্বাণ ভট্টাচার্যের কলমে উঠে এসেছিল এই গান। সঙ্গে ছিলেন ঋদ্ধি সেন এবং ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়। তখনই এই ভিডিয়ো তৈরির কথা ভেবেছিলেন তাঁরা। এই কর্মযজ্ঞে অংশগ্রহণ করেছেন কৌশিক সেন, রেশমী সেন, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, সুরঙ্গনা বন্দ্যোপাধ্যায়, শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়, অনুপম রায়, রূপঙ্কর বাগচী, অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়, চন্দন সেন, রাহুল চট্টোপাধ্যায়, দেবলীনা দত্ত, সুমন মুখোপাধ্যায়ের মতো একাধিক তারকা। আনন্দবাজার ডিজিটালকে বৃহস্পতিবার সুমন জানালেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে শিল্পীদের অবস্থান কোথায়, সেটা বোঝাতেই এই উদ্যোগ। তিনি বলেন, ‘‘এই দলবদল, রাজনীতি দেখে মানুষও কিছুটা ভয় পেয়ে রয়েছেন। তাঁরা যে মন খুলে কথা বলতে পারেন, এগিয়ে আসতে পারেন, সেই বার্তাই দিতে চেয়েছি আমরা।’’

মূলত ঋদ্ধি, সুরঙ্গনা এবং ঋতব্রতর উদ্যোগে সময় বার করে একসঙ্গে এসেছেন সকলে। পরিকল্পনা ও প্রতিস্থাপনের দায়িত্ব অনেকটাই সামলেছেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। করোনা অতিমারির ভয় কাটিয়ে এই প্রচেষ্টাকে সফল করতে এগিয়ে এসেছেন রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, অরুণ মুখোপাধ্যায়, সব্যসাচী চক্রবর্তীর মতো প্রবীণ অভিনেতাও। দেশের বেকারত্ব, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন-জাতীয় নাগরিকপঞ্জি, নারী নিরাপত্তা, ধর্মের রাজনীতির মতো একাধিক সমস্যা তুলে ধরতে নবীনদের সঙ্গে গলা মিলিয়েছেন তাঁরা। প্রশ্ন তুলেছেন আরও বহু সঙ্কট নিয়ে। ঋদ্ধির বক্তব্য, নির্বাচনের আগে বাংলার মানুষের মনে প্রশ্ন জাগাতেই তৈরি করা হয়েছে এই ভিডিয়ো। তিনি বলেন, “এই গানটি তৈরির পরিকল্পনা ছিল বহু দিন ধরেই। বাংলায় যাতে এই ফ্যাসিবাদী সরকার না আসতে পারে, তার জন্যই এই চেষ্টা।’’

ছেলের সঙ্গে সুর মেলালেন কৌশিক সেন। তুললেন নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন-জাতীয় নাগরিকপঞ্জির প্রসঙ্গ। উত্তরপ্রদেশের ধর্ষণ, নারী নির্যাতনের খতিয়ানও উঠে এল তাঁর কথায়। কৌশিক বললেন, “প্রাথমিক ভাবে বাংলায় বিজেপি-কে আটকানোটাই উদ্দেশ্য। তবে পশ্চিমবঙ্গে আজ যদি বিজেপি সরকার নাও আসে, কেন্দ্রে কিন্তু এই সরকারই থাকবে। তাই আমাদের লড়াইটাও জারি থাকবে।”

কিন্তু কাজের ভাঁড়ারে টান পড়বে না? ভয় নেই তাঁদের? ‘‘মানুষকে বুঝিয়ে দেওয়া দরকার যে, ইন্ডাস্ট্রির কয়েক জন এখনও কোনও রাজনৈতিক দলের ধ্বজাধারীতে পরিণত হননি,’’ উত্তর ঋতব্রতর। তিনি বলেন, ‘‘যাঁরা এখন বলছেন মানুষের কাজ করতে রাজনীতিতে এসেছেন, লকডাউনে দুস্থ শিল্পীদের জন্য তাঁদের কাছে বারবার সাহায্য চেয়েও খালি হাতে ফিরতে হয়েছিল। তখন কোথায় ছিলেন তাঁরা?” নিজেদের রাজনৈতিক মতামতের কারণে যদি কাজ না পান, তা নিয়ে ভয় পেতে রাজি নন তিনি। একমত অনুপমও। তাঁর কথায়, সকলেরই নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করার অধিকার রয়েছে। গায়কের বক্তব্য, “কে কী ভাবল, সব দেখতে গেলে কাজটাই করা যাবে না। আমরা যা মনে করি, সেটাই শুধুমাত্র তুলে ধরেছি এই গানের মাধ্যমে।”

ঐক্যবদ্ধ বাংলার সুর এ ভাবেই ছড়াতে চাইলেন শিল্পীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE