বৃদ্ধ বয়সে গাঁটে গাঁটে ব্যথা, হাড়ের নানা রোগ— চেনা ছবি। কিন্তু ত্রিশ-চল্লিশেই যদি কোমর-পিঠে ব্যথা, অস্থিসন্ধিতে যন্ত্রণা ভোগাতে থাকে, তা হলে তার একমাত্র কারণ অস্টিয়োআর্থ্রাইটিস নয়। এর জন্য দায়ী হতে পারে স্থূলত্বও। গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, অল্পবয়সিদের মধ্যে হাড়ের অসুখের অন্যতম কারণ হল ওজন বৃদ্ধি। এই কারণেও কম বয়স থেকেই বাতের ব্যথা-বেদনা ভোগায় অনেককেই।
আমেরিকা থেকে প্রকাশিত ‘রিজিয়োনাল অ্যানেস্থেশিয়া অ্যান্ড পেন মেডিসিন’ নামক স্বাস্থ্য বিষয়ক একটি জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, মহিলাদের হাড়ের ক্ষয় বা হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়া, অস্থিসন্ধিতে প্রদাহের অন্যতম বড় কারণ হল পেট ও কোমরের মেদ। বিশেষ করে দেখা গিয়েছে, যে সব মহিলা স্থূলত্বের সমস্যায় ভুগছেন এবং যাঁদের লিভার, অগ্ন্যাশয়ে মেদ জমেছে, তাঁরাই ঘাড়, কাঁধ, পিঠ-কোমরের ব্যথায় বেশি ভুগছেন। এমনকি হাঁটুর ব্যথাও ভোগাচ্ছে তাঁদের। প্রায় ৩২ হাজার মহিলার উপর সমীক্ষা চালিয়ে এমন দাবি করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে। গবেষকেরা জানিয়েছেন, পেট ও কোমরের অতিরিক্ত মেদ স্নায়ুর চাপ বাড়ায়। ফলে হরমোনের ক্ষরণেও তারতম্য দেখা দেয়। শরীরের অভ্যন্তরে প্রদাহ বাড়ে এবং যা ‘ক্রনিক’ ব্যথা-বেদনার কারণ হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুন:
দেশের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ’-এরও একটি গবেষণাপত্রে দাবি করা হয়েছে, অল্প বয়সে ওজন অতিরিক্ত বৃদ্ধি পেলে, যদি বিএমআই ৩০-এর বেশি হয়ে যায়, তবে অস্টিয়োপোরোসিসের মতো রোগ দেখা দিতে পারে। অস্টিয়োপোরোসিস এমন এক ধরনের হাড়ের রোগ, যাতে হাড়গুলির শরীরের ভার বহনের ক্ষমতা কমে যায়। হাড় নরম হয়ে যায় এবং অল্প আঘাতেই হাড়ে চিড় ধরতে পারে। আঘাত নিরাময়ের রাস্তাটিও জটিল হয়ে পড়ে। দেখা গিয়েছে ‘মরবিড ওবেসিটি’, অর্থাৎ বিএমআই ৪০ বা তারও বেশি যাঁদের, তাঁদের ক্ষেত্রে হাড়ের নানা অসুখে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই বেশি। সুতরাং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা খুব জরুরি। এক বার ওজন বেড়ে গেলে তা নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই ছোট থেকেই সুষম খাদ্যাভাস ও নিয়মিত শরীরচর্চার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমবে না। ভবিষ্যতে বাতজনিত ব্যথার আশঙ্কাও কমবে।