‘‘একই সঙ্গে বড্ড একঘেয়ে, আবার খুব মজাদার আমার যাপন।’’ রোজ মঞ্চে উঠে নতুন নতুন চরিত্রে পা গলানো, শয়ে শয়ে দর্শকের জন্য সংলাপ বলা, শরীরী অভিনয়ের নিত্যনতুন খেলা— তার জন্য মন ও শরীরকে মজবুত করার জন্য কসরত করতে হয় অভিনেত্রী রেশমি সেনকে। এই জীবনটাই ভালবাসেন তিনি। মঞ্চই তাঁর অস্তিত্বের সবটা জুড়ে। রেশমির মতে, জিম, যোগাসন, খেলাধুলো, সঠিক খাদ্যাভ্যাসের জুড়ি মেলা ভার ঠিকই, কিন্তু সুস্থ থাকার রসদ কেবলই নির্দিষ্ট এই রুটিন থেকে মেলে না। একজন অভিনেতার সুস্থতার জন্য আরও কয়েকটি জিনিসের সংযোজন প্রয়োজন। তাতেই লুকিয়ে সুস্থতার চাবিকাঠি।
রেশমির কথায়, ‘‘আমরা শিখেছি, অভিনেতা সে-ই, যে মনে রাখে। কেবল কি নিজের চরিত্রটিকেই মনে রাখবে সে? না। অভিনেতাকে নিজের সমস্ত ইন্দ্রিয় সজাগ রেখে, নিজের বুদ্ধি ও মননে শান দিয়ে সামাজিক, রাজনৈতিক, ব্যক্তিগত সব বিষয়কে জানতে হবে এবং মনে রাখতে হবে। তাকে সচেতন হতে হবে। মননের সুস্থতা তাই সবার আগে প্রয়োজন। তার পর আসে শরীর। অভিনেতা যেহেতু তার মনের সমস্ত অভিব্যক্তি প্রকাশ করবে শরীর দিয়ে, তাই শারীরিক সুস্থতাও এখানে ভীষণ প্রয়োজনীয়।’’
আরও পড়ুন:
আর মন ও শরীরের এই সুস্থতার জন্য রেশমি নিজেকে প্রস্তুত করেন প্রতিনিয়ত। স্বামী কৌশিক সেন এবং ছেলে ঋদ্ধি সেনের সঙ্গে রোজ সকালে উঠে শরীরচর্চা করেন রেশমি। সকাল সকাল প্রশিক্ষক চলে আসেন বাড়িতে। সেখানেই ‘ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ় থেকে শুরু করে যোগাসন, ভারোত্তোলন অনুশীলন করেন তিন জনে মিলে। আর খাওয়াদাওয়া? বাড়ির বাইরে খাওয়াদাওয়ার পাট প্রায় চুকিয়েই ফেলেছে সেন পরিবার। কালেভদ্রে রেস্তরাঁয় যান সকলে মিলে। কিন্তু তার বাইরে কারও বাইরের খাবারের প্রতি কোনও আকর্ষণই নেই। ঋদ্ধি যদি কোথাও বন্ধুদের সঙ্গে খেতেও যান, তা-ও বাড়ি এসেই রাতের খাবার খান। কারণ, আকর্ষণ রয়েছে বাড়িতেই। রেশমি বলছেন, ‘‘আমি অত্যন্ত গর্বের সঙ্গেই বলতে চাই, আমি বড্ডই ভাল রান্না করি। এত ভাল রান্না করি যে, ওদের কারওরই বাইরে খাওয়ার শখ জাগে না।’’ পরীক্ষা নিরীক্ষাকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছেন রেশমি। কখনও তরমুজ বা আপেল দিয়ে পাঁঠার মাংস, কখনও বা কাঁচা আম দিয়ে শোলমাছের ঝাল, কোনও দিন পাউরুটি দিয়ে মালপোয়া। অনেক সময় নাট্যজগৎ থেকে চলচ্চিত্র জগতের নামী তারকারা সেনবাড়িতে হাজির হন খাবার খাওয়ার জন্যই। তাই রেশমির বাড়িতে মাঝেমধ্যেই খাওয়াদাওয়ার আসর বসে।
তিন জনের কেউই মিষ্টি খান না। চিনি পুরোপুরি বাদ। সকালে হালকা জলখাবার খেয়ে শুটে বেরিয়ে যান রেশমি। দুপুরের খাবার বাড়ি থেকেই প্যাক করে নিয়ে যান তিনি। বিকেলে খিদে পেলে একটি ক্রিম ক্র্যাকার বিস্কুট খান রেশমি। রাতে কৌশিক এবং রেশমি সাড়ে ৮টার মধ্যে নৈশভোজ সেরে নেন। রেশমির কথায়, ‘‘নির্দিষ্ট খাদ্যভ্যাস রয়েছে আমাদের সকলের। আমি আর কৌশিক সাড়ে ৮টায় খাবার খেয়ে নিই। ঋদ্ধি এখন ছোট, ফলে ও একটু রাত করে খায়। ও যদিও বা নানা রকম খাবার খেতে পারে, আমরা দু’জন মূলত সাদামাঠা সুষম আহারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকি।’’
৪ বছর বয়স থেকে নাচ শেখা শুরু হয় রেশমির। ১২ বছর বয়সে কত্থকে প্রভাকর সম্পূর্ণ করেন। তার পর ২০ বছর ওডিসি! ফলে অভিনয়ের জন্য, বিশেষ করে মঞ্চের জন্য ছোট থেকেই খানিক প্রস্তুত ছিলেন তিনি। তা ছাড়া রোজের যাপনে নিজেকে মঞ্চের জন্য প্রস্তুত রাখার চেষ্টায় থাকেন। আর তাই সম্ভবত ভাঙা পা নিয়েও মঞ্চ দাপিয়ে বেড়ানোর অভিজ্ঞতাও রয়েছে তাঁর।