বৃহস্পতিবার বিজয়া দশমী। পুজোর শুরু থেকেই পেটের উপর ‘অত্যাচার’ চলেছে। এ বার বিজয়ার দিনেও বিশ্রাম নেই। দিনভর চলবে খাওয়া দাওয়া। দুপুরের এলাহি খাবার থেকে সন্ধ্যায় মিষ্টিমুখ। সাবধান না হলেই অম্বল এবং পেটের সমস্যার সূত্রপাত। সমস্যা জটিল হলে বিজয়ার আনন্দই মাটি হতে পারে। সুস্থ থাকতে তাই সকাল থেকেই পরিকল্পনা করে নেওয়া উচিত।
চতুর্থী থেকে নবমী, ঠাকুর দেখার সূত্রে অনেকেই হয়তো দিনের একটা বড় অংশ বাড়ির বাইরে কাটিয়েছেন। পেটের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে আগে জল পানের বিষয়টি খেয়াল রাখা উচিত। পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করলে অম্বল বা পেট ফাঁপার সমস্যা অনেকাংশে কমতে পারে। তাই সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর চা-কফির পরিবর্তে আগে এক গ্লাস জল পান করা উচিত। বিসর্জনে বাড়ির বাইরে থাকলেও জল কিনে খাওয়া ভাল।
দশমীর দিন দুপুরে এবং রাতে তেল-মশলা যুক্ত খাবার খাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই প্রাতরাশ হালকা করা উচিত। চিকিৎসক অমিতাভ ভট্টাচার্য বললেন, ‘‘দশমীর দিন ভিড় কম থাকে বলে অনেকেই ঠাকুর দেখেন। ফলে পেটের বিশ্রামের পরিবর্তে রাস্তার খাবারই বেশি খাওয়া হয়। তাই সঙ্গে যেন জল থাকে, তা খেয়াল রাখতে হবে।’’
আরও পড়ুন:
দুপুরে ভারী খাবার খাওয়া হলে সে ক্ষেত্রে সন্ধ্যায় জলখাবারে রাশ টানা উচিত। তা হলে রাতে কিছুটা ভারী খাবার খাওয়া যেতে পারে। যাঁদের সুগার রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে সঙ্গে গ্লুকোমিটার রাখা উচিত। সকালে ফাস্টিং সুগার মেপে নিতে পারলেও সতর্ক হওয়া সম্ভব। অমিতাভের মতে, সুগার, রক্তচাপের রোগীদের ক্ষেত্রে সঙ্গে ওষুধ রাখা উচিত। বললেন, ‘‘ওষুধ কোনও ভাবেই বাদ রাখা যাবে না। বছরের অন্যান্য দিনের মতই খাবার মাথায় রেখে ওষুধ খেয়ে নিতে হবে।’’
দশমীর দিনও অনেকেই সকাল থেকে উপোস করেন। সাধারণত দেবীর বরণপর্ব শেষে অনেকে উপবাস ভঙ্গ করেন। এ ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় খালি পেটে থাকার পর ভারী খাবার খেলে সমস্যা হতে পারে। রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে। হার্টের উপরেও চাপ তৈরি হতে পারে। উপোসভঙ্গ করার মাধ্যম হিসাবে শরবত জাতীয় পানীয় নির্বাচন করা উচিত। অমিতাভের মতে, এ ক্ষেত্রে নুন-চিনির শরবত পান করলে, তা দেহে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখে। তার পর ধীরে ধীরে ভারী খাবার খাওয়া উচিত।
অল্পবসয়িদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত খাওয়াদাওয়ায় সাধারণত কোন সমস্যা হয় না। তবে অম্বলের সমস্যা হতেই পারে। অমিতাভের মতে, দুটো খাবারের মধ্যে অন্তত ২ ঘণ্টা বিরতি দেওয়া উচিত। বিজয়া দশমীর জন্য অনেকেই একাধিক আত্মীয়ের বাড়িতে যান। পর পর মুখ চলতে থাকলে সমস্যা বাড়তে পারে। তাই নিজেকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। পেট ভরা থাকলে জোর করে খাওয়া উচিত নয়।
তবে গ্যাসের সমস্যায় চটজলদি আরাম পেতে বড়ির তুলনায় তরল অ্যান্টাসিড বেশি উপকারী বলে জানালেন অমিতাভ। তাঁর কথায়, ‘‘যাঁরা গ্যাসের সমস্যার ভোগেন, তাঁদের তিনে তিন বার ওষুধটি খেয়ে নেওয়া উচিত।’’ অন্যদের ক্ষেত্রেও সতর্কতা হিসেবে দুপুরের খাবারের পরে অ্যান্টাসিড খাওয়া যেতে পারে।
অমিতাভ জানালেন, বিজয়া দশমীর পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক রুটিনে ফিরে আসা উচিত। ডায়েটে তরল এবং সহজপাচ্য খাবারের আধিক্য থাকলে পেটের সমস্যার আশঙ্কা কমবে। ফলে সহজেই কর্মজীবনে ফেরা সম্ভব হবে।