গরমে ক্লান্ত হলে তো বটেই পেটের সমস্যা বা ডায়েরিয়া হলেও দোকান থেকে কিনে ‘রেডি টু ড্রিঙ্ক’ ওআরএস খান অনেকেই। তার কারণ, প্রথমত, এটি জলে গোলার ঝঞ্ঝাট নেই। শুধু স্ট্র খুলে মুখে নিলেই হল। দ্বিতীয়ত, এই ধরনের ওআরএস অনেক ক্ষেত্রে নানা ধরনের স্বাদেও পাওয়া যায়। কমলালেবু, আপেল, আনারস, আম, লিচু, ব্ল্যাক কারেন্ট, জিরে, লেবু, মিক্সড ফ্রুট, এমনকি কোলার স্বাদেও! ফলে শরীরের আরামের পাশাপাশি সেগুলি সুস্বাদুও। ‘ওষুধ’ যদি উপাদেয় হয়, আর তা থেকে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ারও ভয় না থাকে, তবে তাকে নিরাপদ ভেবে মানুষ সবার আগে বেছে নেবেন, তার জনপ্রিয়তা বাড়বে, সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু কেন্দ্রীয় খাদ্য সুরক্ষা দফতর জানাচ্ছে, বাজার চলতি ওই সমস্ত ওআরএস অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিরাপদ নয়!
একটি সাম্প্রতিক নির্দেশনামায় কেন্দ্রীয় খাদ্য সুরক্ষা দফতর (দ্য ফুড সিকিউরিটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি অফ ইন্ডিয়া বা এফএসএসএআই) এ ব্যাপারে কড়া বার্তা দিয়েছে বিভিন্ন রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের খাদ্য সুরক্ষা বিভাগকে। তারা বলেছে, ‘অবিলম্বে সেই সমস্ত পানীয়ের বিক্রি বন্ধ করতে হবে, যেখানে ওআরএস কথাটি ব্যবহার করা হয়েছে অথচ ‘ওআরএস’-এর মেডিক্যাল ফর্মুলা মানা হয়নি।’
কেন্দ্রীয় খাদ্য সুরক্ষা দফতর জানাচ্ছে ওআরএস বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা হু-র অনুমোদিত এক ধরনের ড্রাগ বা ওষুধ।
কেন এমন নির্দেশ?
এফএসএসএআই জানিয়েছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ওই সমস্ত পানীয়ের উৎপাদনকারীরা ‘ওআরএস’ লেবেলের অপব্যবহার করছে। যে পানীয় তাঁরা মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন, তা আদতে চিনিগোলা জল। তাতে সামান্য নুন আর বিভিন্ন সিন্থেটিক স্বাদ মেশানো আছে। কেন্দ্রীয় খাদ্য সুরক্ষা দফতর জানাচ্ছে ওআরএস কথাটির অর্থ ‘ওরাল রিহাইড্রেশন সল্ট’। যা আদতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা হু-এর অনুমোদিত এক ধরনের ড্রাগ বা ওষুধ। যথাযথ নিয়ম মেনে তা যদি বানানো না হয়, তবে তা ওই নামের অপব্যবহারের সমতুল।
এফএসএসএআই একটি বিষয় স্পষ্ট করে দিয়েছে। মেডিক্যাল ফর্মুলা মেনে এবং মেডিক্যাল অনুমোদন নিয়ে তৈরি ওআরএস-ই একমাত্র ওআরএস কথাটি ব্যবহার করতে পারবে। তার বাইরে যাঁরা ওআরএস কথাটির অপব্যবহার করে ওই ধরনের পানীয় উৎপাদন এবং বিক্রি করবেন, তাঁরা ২০০৬ সালের খাদ্য সুরক্ষা এবং খাদ্যের মান বিষয়ক আইন ভাঙছেন বলেই ধরে নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে ফুড ইনস্পেক্টরদেরও সতর্ক করা হয়েছে। বিভিন্ন ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, খুচরো বিক্রেতা এবং ওষুধের দোকান থেকে যাতে ওই ধরনের ভুয়ো ওআরএস সরিয়ে ফেলা হয়, তার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে তাঁদের।
আরও পড়ুন:
কী ক্ষতি হতে পারে?
ওআরএস হল গ্লুকোজ় এবং রিহাইড্রেটিং সল্টের একটি বিজ্ঞানসম্মত ভারসাম্য বজায় রেখে তৈরি পানীয়। কিন্তু তার বদলে যদি ওই ভারসাম্য বজায় না রেখে চিনি দেওয়া পানীয় খাওয়া হয়, তবে তা শরীরে আর্দ্রতা জোগানোর বদলে উল্টো কাজও করতে পারে। এই সমস্যার কথা প্রথম নজরে আনেন হায়দরাবাদের এক শিশু চিকিৎসক শিবরঞ্জনী সন্তোষ। তিনিই জানান, অতিরিক্ত চিনি দেওয়া ভুয়ো ওআরএস শরীরের উপকার করার বদলে ক্ষতি করছে। তাঁর চেষ্টাতেই ভুয়ো ওআরএসে রাশ টানার কাজ এগিয়েছে এবং এফএসএসএআই বিষয়টিকে গতি দিয়েছে।
ওআরএস হল গ্লুকোজ় এবং রিহাইড্রেটিং সল্টের একটি বিজ্ঞান সম্মত ভারসম্য বজায় রেখে তৈরি পানীয়।
ক্রেতারা কী করবেন?
১। অনেক ক্ষেত্রেই ওআরএস-এর আগে এবং পরে নানা ধরনের শব্দ ব্যবহার করে তা ব্র্যান্ড হিসাবে লেখা থাকছে। ওই ধরনের পানীয় কেনা থেকে বিরত থাকুন।
২। মনে রাখবেন, ওআরএস লেখা আছে মানেই তা মেডিক্যাল সংস্থা কর্তৃক অনুমোদিত নয়।
৩। উপাদানের তালিকায় দেখে নিন সঠিক ইলকট্রোলাইট এবং সঠিক পরিমাণে গ্লুকোজ় ব্যবহার করা হয়েছে কি না। হু অনুমোদিত হিসাব বলছে, প্রতি লিটার পরিশ্রুত জলে ১৩.৫ গ্রাম গ্লুকোজ় (অ্যানহাইড্রাস), ২.৬ গ্রাম সোডিয়াম ক্লোরাই়ড, ১.৫ গ্রাম পটাশিয়াম ক্লোরাইড এবং ২.৯ গ্রাম ট্রাইসোডিয়াম সাইট্রেট ডিহাইড্রেট থাকবে।
৪। যদি দেখেন, দোকানে ওই নিয়ম মেনে ওআরএস বিক্রি হচ্ছে না, তবে অবশ্যই বিষয়টি নিয়ে সরব হোন। স্থানীয় খাদ্য সুরক্ষা বিভাগের হেল্পলাইনেও বিষয়টি জানান।