আচমকাই দেখতে সমস্যা। বদলে যেতে পারে ব্যবহার। বদল আসতে পারে স্বভাবে, হাবভাবে। ব্যবহারের আকস্মিক বদলকে শারীরিক সমস্যা হিসেবে ভাবাও কঠিন। মনে হতেই পারে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশুর দুষ্টুমি বুঝি বাড়ছে। সমস্যাটা দেখা দেবে তখন, যখন হঠাৎ করেই শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে যাবে। ক্ষীণ হয়ে যাবে দৃষ্টিশক্তি। বারে বারে জ্ঞান হারানো বা কোমায় চলে যাওয়ার মতো উপসর্গও দেখা দিতে পারে। ব্রেন টিউমার এমনই বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছে যেতে পারে যে কোনও সময়ে। আর রোগটি যদি বাসা বাঁধতে থাকে শিশুদের মস্তিষ্কে, তখন তা উদ্বেগের কারণ বলেই ধরে নেওয়া যায়। আর সেটিই হচ্ছে ইদানীং কালে। দেশে শিশু ও কমবয়সিদের মধ্যে মস্তিষ্কের টিউমার হওয়ার হার বেড়ে গিয়েছে, যা নিয়ে রীতিমতো উদ্বেগে চিকিৎসকমহল।
বিপদের মুখে শিশুরা
ন্যাশনাল ব্রেন টিউমার সোসাইটির সাম্প্রতিকতম সমীক্ষার রিপোর্ট বলছে, ৫.৭ শতাংশ ক্ষেত্রে ‘প্রাইমারি ব্রেন টিউমার’-এর লক্ষণ দেখা দিচ্ছে শিশুদের। সদ্যোজাত থেকে ১৯ বছর বয়স অবধি শিশু ও কমবয়সিদের মস্তিষ্কে টিউমার ধরা পড়ার হার অনেক বেড়ে গিয়েছে। সে টিউমার বিনাইন (যা ক্যানসার নয়) এবং ম্যালিগন্যান্ট (যাতে ক্যানসার কোষ থাকে) দুই রূপেই দেখা দিচ্ছে। টিউমারের প্রাথমিক লক্ষণ বুঝতে না পারায় তার আভাসও পাচ্ছেন না অভিবাবকেরা। পরে যখন এমআরআই বা সিটি স্ক্যানে ধরা পড়ছে, তখন দেরি হয়ে যাচ্ছে অনেকটাই।
শিশুদের ব্রেন টিউমারের নানা ধরন
শিশুদের মস্তিষ্কের টিউমার বা ‘পেডিয়াট্রিক ব্রেন টিউমার’-এর নানা ধরন রয়েছে। একটি হল গ্লিয়োমাস, যা স্নায়ুর গ্লিয়াল কোষের অনিয়মিত বিভাজনে তৈরি হয়। এর তিনটি ভাগ রয়েছে, যার মধ্যে অ্যাস্ট্রোসাইটোমাস টিউমারই বেশি হয় শিশু ও কমবয়সিদের। স্নায়ু ও সুষুম্নাকাণ্ডের কার্যকারিতা পুরোপুরি নষ্ট করে দিতে পারে এই টিউমার। এরই অন্তিম ও বিপজ্জনক পর্বটি হল গ্লিয়োবাস্টোমা, যা প্রাণঘাতী। গ্লিয়োব্লাস্টোমার রোগীরা খুব বেশি দিন বাঁচেন না। আর এই টিউমার ধরাও পড়ে অনেক দেরিতে। তাই চিকিৎসা শুরু হতেও দেরি হয়। আরও এক ধরন আছে যা হল ‘এমব্রায়োনাল টিউমার’ যা ভ্রূণের কোষেই তৈরি হতে থাকে। জন্মের পরেই ব্রেন টিউমার ধরা পড়ে শিশুর। তা ছাড়া জার্ম সেল টিউমার, সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড থেকেও টিউমার হতে পারে।
আরও পড়ুন:
লক্ষণ অজানাও হতে পারে
ব্রেন টিউমার মানেই তার কিছু চেনা লক্ষণই প্রকাশ পাবে, তেমন না-ও হতে পারে। টিউমার যখন বাড়তে শুরু করে, তখন তার থেকে বিভিন্ন ছোট ছোট কণা বেরিয়ে রক্তে মিশতে থাকে। এগুলিকে বলে ‘এক্সোজ়োম’। এগুলি এক ধরনের ন্যানোপার্টিকল, যা দেখতে থলির মতো। এগুলি বেরিয়ে রক্তে বাহিত হয়ে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। তখন নানা রকম লক্ষণ দেখা দিতে থাকে। স্নায়ুরোগ চিকিৎসক অনিমেষ কর জানিয়েছেন, মাথা যন্ত্রণা, বমি, অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার লক্ষণ চেনা। তা ছাড়াও ভুল বকা, ব্যবহারে হঠাৎ বদলও শুরু হয়। এই হয়ত শিশু শান্ত, পরক্ষণেই দেখবেন তার আচরণে বদল এসেছে, মেজাজ বিগড়ে গিয়েছে, অস্থিরতা বেড়েছে। হাবভাব ও অন্যের সঙ্গে ব্যবহারেও বদল আসতে পারে। ঘন ঘন খিঁচুনি হতে পারে। সেই সঙ্গে ভুলে যাওয়া, সিদ্ধান্ত নিতে না পারা, চোখে কম দেখার মতো সমস্যাও দেখা দিতে থাকবে। এমন লক্ষণ প্রকাশ পেলে দেরি না করে এমআরআই ও সিটি স্ক্যান করিয়ে নেওয়া জরুরি। তা ছাড়া ‘পজ়িট্রন এমিসন টোমোগ্রাফি’ করেও টিউমার কোষ চিহ্নিত করা যায়।
চিকিৎসক জানাচ্ছেন, মস্তিষ্কের টিউমারের জন্য আতঙ্ক নয়, ঠিক সময়ে ঠিক চিকিৎসা প্রয়োজন। ৩০ শতাংশ রোগীর সেই উপসর্গ থাকে না। তাই খেয়াল করতে হবে, আচমকা খিঁচুনি হলে তার কারণ হতে পারে মস্তিকের টিউমার। পাশাপাশি, চোখের সমস্যা, হাত-পায়ে জোর কমে যাওয়া, ভারসাম্যের সমস্যা, ঘাড়-মাথা-পিঠে ব্যথার মতো উপসর্গ দীর্ঘ দিন ধরে থাকলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।