চরম অস্তিত্বসঙ্কটে হিমালয়ঘেঁষা রাজ্যগুলি। অবিলম্বে পর্যটন, খনি এবং নির্মাণকাজে রাশ না টানলে অচিরেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে হিমালয় সংলগ্ন সমস্ত রাজ্য। সম্প্রতি একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ঘটনায় হিমাচল সরকারকে দুষে ফের এমনই মন্তব্য করল সুপ্রিম কোর্ট।
শীর্ষ আদালতের মন্তব্য, হিমালয়ের বাস্তুতন্ত্র এই মুহূর্তে সঙ্কটে। এর জেরে হিমাচল প্রদেশ-সহ পার্শ্ববর্তী সব রাজ্যই গুরুতর অস্তিত্বসঙ্কটের মুখোমুখি হচ্ছে। বিচারপতি বলেন, ‘‘এ বছর বর্ষার মরসুমে ভারী বৃষ্টি হিমাচল প্রদেশে বিপর্যয় ডেকে এনেছে। বিভিন্ন এলাকায় যে হড়পা বান হয়েছে, তাতে জীবন ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বহু বাড়িঘর ভেসে গিয়েছে।’’ এর পরেই হিমাচল প্রদেশ সরকারকে দুষেছে শীর্ষ আদালত। পর্যটন, খনি এবং নির্মাণকাজে রাশ টানার নীতি নিয়ে সে রাজ্যের সরকারের কাছে কৈফিয়তও চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
এর আগেও সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, হিমালয় সংলগ্ন রাজ্যগুলিতে দুর্যোগের জন্য শুধু প্রকৃতি দায়ী নয়। গত কয়েক বছরে হিমাচলে পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ দ্রুত গতিতে বেড়েছে। হাইওয়ে, রোপওয়ে, সুড়ঙ্গ, অনিয়ন্ত্রিত বসতিস্থাপনের মতো নানা কাজ হয়েছে প্রকৃতির তোয়াক্কা না করেই। পর্যটন হিমাচলের আয়ের মূল উৎস, কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত ভাবে পর্যটনের প্রসার উল্টে রাজ্যের বাস্তুতন্ত্রেরই ক্ষতি করেছে। তাই রাজ্যকে বাঁচাতে অবিলম্বে সঠিক এবং দ্রুত পদক্ষেপ করা উচিত। আদালতের নির্দেশ, বনসৃজন, ক্ষতিপূরণমূলক বনায়ন, জলবায়ু পরিবর্তন নীতি, সড়ক সংক্রান্ত তথ্য, জলবিদ্যুৎ এবং খনি প্রকল্প, পর্যটন এবং নির্মাণ সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য আগামী ২৮ অক্টোবরের মধ্যে শীর্ষ আদালতে জমা দিতে হবে রাজ্যকে। ওই দিন মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।
আরও পড়ুন:
এর আগে গত অগস্ট মাসেও হিমাচলের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি আর মাধবনের ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ ছিল, হিমাচল প্রদেশের পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ থেকে আরও খারাপ হচ্ছে। আবহাওয়া পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব যে হিমালয়ঘেঁষা এই রাজ্যের উপর পড়ছে, তা স্পষ্ট এবং যথেষ্ট উদ্বেগজনক। দুই বিচারপতি বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রকে আমরা এটাই বোঝাতে চাইছি যে, শুধু রাজস্ব আয়ই সব কিছু নয়। পরিবেশ এবং বাস্তুতন্ত্রের বিনিময়ে রাজস্ব আয় করা ঠিক নয়। যদি এই পরিস্থিতি আগামী দিনেও চলতে থাকে, তা হলে অচিরেই দেশের মানচিত্র থেকে মুছে যাবে হিমাচল।’’