Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
BJP

ইন্দিরা-বাজপেয়ীকেও হারতে হয়েছে, বিজেপিকে স্মরণ করালেন পওয়ার

ইন্দিরা গাঁধী, অটলবিহারী বাজপেয়ীদের মতো নেতারাও পরাজিত হয়েছিলেন, বিজেপিকে নিশানা করে মন্তব্য শরদ পওয়ারের।

বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ শরদ পওয়ারের। —ফাইল চিত্র।

বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ শরদ পওয়ারের। —ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
মুম্বই শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২০ ১৮:৩০
Share: Save:

মহারাষ্ট্রে জোট সরকারের মধ্যে বনিবনা হচ্ছে না বলে শোনা যাচ্ছে রোজ দিনই। সেই জল্পনা এ বার উড়িয়ে দিলেন মহা বিকাশ আঘাড়ি-র হোতা তথা ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির (এনসিপি) প্রধান শরদ পওয়ার। সেই সঙ্গে কড়া ভাষায় বিজেপিকে আক্রমণও করলেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, চিরকালের জন্য কেউ ক্ষমতা ভোগ করতে পারে না। ইন্দিরা গাঁধী, অটলবিহারী বাজপেয়ীর মতো জনপ্রিয় নেতা, গোটা দেশ যাঁদের পাশে ছিল, তাঁরাও এক সময় পরাজিত হয়েছিলেন। তাই চিরকাল অপরাজেয় থাকার ভুল ধারণা ছেড়ে বেরিয়ে আসা উচিত।

জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া ও তাঁর অনুগামীদের কংগ্রেস থেকে ভাঙিয়ে এনে কয়েক মাস আগে মধ্যপ্রদেশে ক্ষমতা দখল করেছে বিজেপি। রাজস্থান থেকে অশোক গহলৌতের সরকারকে উপড়ে ফেলতে সেখানেও বিজেপি ‘ঘোড়া বেচাকেনা’য় নেমেছে বলে অভিযোগ সামনে আসছে। এমন পরিস্থিতিতে মহারাষ্ট্রে শিবসেনা-এনসিপি এবং কংগ্রেসের জোট সরকারের মধ্যেও মতবিরোধ চলছে বলে শোনা যাচ্ছে। বিশেষ করে লাদাখ সীমান্ত নিয়ে কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গাঁধী যখন একনাগাড়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগছিলেন, সেই সময় শরদ পওয়ার তাঁর সমালোচনা করায় সেই জল্পনা আরও জোর পায়।

কিন্তু ইচ্ছাকৃত ভাবে বিজেপি এই গুজব ছড়াচ্ছে বলে ইতিমধ্যেই জোট সরকারের তরফে সাফাই দেওয়া হয়েছে। এ বার তা নিয়ে জোটসঙ্গী শিবসেনার মুখপত্র ‘সামনা’য় মুখ খুললেন শরদ পওয়ার। এই প্রথম দলের বাইরের কোনও নেতাকে নিয়ে বড় আকারের কোনও সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হল ‘সামনা’য়। তিন পর্বের সেই সাক্ষাৎকারের প্রথম অংশটি শনিবার প্রকাশিত হয়েছে। আর তাতেই কড়া ভাষায় বিজেপিকে আক্রমণ করেছেন শরদ পওয়ার। তিনি জানান, উদ্ধব ঠাকরের নেতৃত্বাধীন ‘মহা বিকাশ আঘাড়ি’র সরকারে শরিক দলগুলির মধ্যে বনিবনার খবরে বিন্দুমাত্র সত্যতা নেই।

আরও পড়ুন: বিধায়ক ভাঙাতে কোটি কোটি টাকার টোপ বিজেপির: অশোক গহলৌত​

বিধানসভা নির্বাচনে হার মেনে নিতে পারছে না বলেই বিজেপি এই ধরনের খবর ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে বলেও জানান শরদ পওয়ার। তিনি বলেন, ‘‘গণতান্ত্রিক দেশে কেউ যদি চিরকাল ক্ষমতায় থাকবে বলে ভেবে থাকে, তার চেয়ে বড় ভুল আর হয় না। তাঁরা যা বলবেন, ভোটাররা তাই মানবেন, কোনও রাজনীতিক তা ভেবে থাকলে ভুল করছেন। কারণ ভোটাররা এটা কখনওই মেনে নেবেন না। ইন্দিরা গাঁধী, অটলবিহারী বাজপেয়ীদের মতো নেতাদের পাশে গোটা দেশ থাকলেও, এক সময় তাঁদেরও হারতে হয়েছিল।’’

২০১৪ সালের পর গত কয়েক বছরে বিভিন্ন রাজ্যে বিরোধীদের সরকার উল্টে ক্ষমতা দখল করেছে বিজেপি। গত বছর মহারাষ্ট্রে পাল্টা চালে তাদের মাত দেয় শিবসেনা-এনসিপি এবং কংগ্রেসের জোট। তার পরেও একাধিক জায়গায় রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফডনবীশকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমি ক্ষমরতায় ফিরবই।’’ সেই প্রসঙ্গ উঠলে শরদ পওয়ার জানান, গণতান্ত্রিক দেশে কোনও রাজনীতিকের এমন ঔদ্ধত্য মানুষ বরদাস্ত করবেন না। তাঁর কথায়, ‘‘গণতান্ত্রিক দেশে রাজনীতিকদের চেয়ে সাধারণ মানুষ বেশি বুদ্ধি ধরেন। রাজনীতিকরা সীমা লঙ্ঘন করলে, মানুষই তাঁদের উচিত শিক্ষা দেন। তাই আমি ক্ষমতায় ফিরব বলে ঔদ্ধত্য দেখানো উচিত নয় কারোরই।’’

জোট সরকার ক্ষমতায় আসায় মহারাষ্ট্রের মানুষ উপকৃতই হয়েছেন বলে জানান শরদ পওয়ার। তবে করোনা সঙ্কটে যে উন্নয়নের কাজ কিছুটা ধাক্কা খেয়েছে তা-ও মেনে নেন তিনি। শরদ পওয়ার বলেন, ‘‘জোট সরকার আসায় মহারাষ্ট্রে সুফল মিলতে শুরু করেছে। কিন্তু করোনা সঙ্কটে অনেক কাজ মাঝপথে আটকে গিয়েছে। এই সঙ্কট কাটিয়ে বেরিয়ে আসাই আমাদের মূল লক্ষ্য। ভিন্ন আদর্শের তিনটি দল নিয়ে সরকার গড়ে উঠেছে। তাদের সকলের মতামত নিয়েই কাজ করছেন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে।’’

আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর অন্ত্যেষ্টির আয়োজন করে ফেলেছে বিজেপি​

তবে উদ্ধব সরকার মুখ্যমন্ত্রী হলেও, মহারাষ্ট্রের জোট সরকারের রিমোট আসলে তাঁর হাতে, সেই অভিযোগ উড়িয়ে দেন শরদ পওয়ার। তিনি বলেন, ‘‘আমি সরকারের অধ্যক্ষও নই, নই রিমোট কন্ট্রোলও। রিমোট কন্ট্রোলের সরকার চলে রাশিয়ায়। সেখানে ২০৩৬ পর্যন্ত পুতিনই প্রেসিডেন্ট থাকবেন। অর্থাৎ সেখানে সাধারণ মানুষের মতামতকে এক পাশে ঠেলে এক জন মানুষের হাতেই ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয়েছে। আমাদের গণতান্ত্রিক সরকার। তা রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে চলে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE