Advertisement
E-Paper

বিহারে বাদ পড়া ৬৫ লক্ষ নাম প্রকাশের নির্দেশ, আধারকে ‘স্বীকৃতি’! এসআইআর মামলায় আর কী কী বলল সুপ্রিম কোর্ট?

খসড়া তালিকা থেকে যে প্রায় ৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ গিয়েছে, তাঁদের নাম জেলা অনুযায়ী জেলা নির্বাচনী আধিকারিকের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০২৫ ২২:২২
তালিকায় নাম বাদ পড়ার কারণও উল্লেখ করতে হবে বলে জানিয়েছে দুই বিচারপতির বেঞ্চ।

তালিকায় নাম বাদ পড়ার কারণও উল্লেখ করতে হবে বলে জানিয়েছে দুই বিচারপতির বেঞ্চ। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

বুধবারের পর বৃহস্পতিবারও সুপ্রিম কোর্টে বিহারে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) সম্পর্কিত মামলার শুনানি হয়েছে। বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চ বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, নির্বাচন কমিশনকে কয়েক দফা অন্তর্বতী পদক্ষেপ করতে হবে। এগুলি হল—

বুথভিত্তিক তালিকায় জানাতে হবে কারণ

খসড়া তালিকা থেকে যে প্রায় ৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ গিয়েছে, তাঁদের নাম জেলা অনুযায়ী জেলা নির্বাচনী আধিকারিকের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। তথ্য যেন বুথ-ভিত্তিক হয়, যাতে ভোটারের সচিত্র পরিচয়পত্রের (এপিক) নম্বর দিয়ে খোঁজা যায়। তালিকায় নাম বাদ পড়ার কারণও উল্লেখ করতে হবে বলে জানিয়েছে দুই বিচারপতির বেঞ্চ।

ওয়েবসাইট ও নোটিস বোর্ড

শীর্ষ আদালতের নির্দেশ বিহারের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও)-কে জেলা অনুযায়ী বাদ পড়া ভোটারদের তালিকার ‘সফ্‌ট কপি’ বাদ দেওয়ার কারণ-সহ নিজের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট সব ওয়েবসাইটে তালিকা যাতে এপিক নম্বর দ্বারা খোঁজা যায় (সার্চেবল মোডে), সেই ব্যবস্থা করতে হবে। বাদ পড়া ভোটারদের বুথ-ভিত্তিক তালিকা সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত ভবন এবং বিডিও বা পঞ্চায়েত অফিসের নোটিস বোর্ডেও টাঙিয়ে রাখতে হবে। যাতে সাধারণ মানুষ তালিকা ও বাদ দেওয়ার কারণ দেখতে পারেন।

বিডিও বা পঞ্চায়েত অফিসে যে তালিকা টাঙানো রয়েছে সেই বিষয়ে বিজ্ঞাপন দিয়ে মানুষকে জানাতে হবে। ওই বিষয়ে বিহারে বহুল প্রচারিত আঞ্চলিক ভাষার সংবাদপত্র ও ইংরেজি সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে। এ ছাড়াও রেডিয়ো, টেলিভিশন ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক মাধ্যমে প্রচার করতে হবে। যদি জেলা নির্বাচনী আধিকারিক বা বিহারের সিইও-র কোনও সরকারি সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থাকে, সেখানেও বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে।

বাদ পড়ারা পাবেন সুযোগ

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বলা হয়েছে, বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট ভাবে জানাতে হবে, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা তাঁদের দাবি আধার কার্ডের কপি-সহ জমা দিতে পারবেন। নির্বাচন কমিশন সব বুথ লেভেল অফিসার ও জেলা নির্বাচন আধিকারিকের কাছ থেকে কার্যকর রিপোর্ট সংগ্রহ করে আদালতে জমা দিতে হবে।

রয়েছে সময়সীমা

যে ৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ গিয়েছে, তা মঙ্গলবার বিকেল ৫টার মধ্যে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। অন্তর্বর্তী নির্দেশ দিয়ে এমনটাই জানাল সুপ্রিম কোর্ট। ২০২৫ সালের তালিকায় যাঁদের নাম রয়েছে, অথচ খসড়া তালিকায় নেই, তাঁদের সকলের নাম যেন জেলাস্তরের ওয়েবসাইটে থাকে। সঙ্গে কী কারণে তাঁদের নাম বাদ গিয়েছে, তারও উল্লেখ থাকতে হবে।

চাইছি তোমার স্বচ্ছতা

বৃহস্পতির শুনানিতে বিচারপতি সূর্য কান্তের পর্যবেক্ষণ, নাগরিকদের নিজস্ব সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে। যে কোনও সমস্যার জন্য সব সময় রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের পিছনে দৌড়তে হবে কেন? তিনি বলেন, ‘‘যদি ২২ লক্ষ মানুষ মারা গিয়ে থাকেন, তা হলে বুথ পর্যায়ে কেন তা প্রকাশ করা হচ্ছে না? যদি এই পরিসংখ্যান জনসমক্ষে আসে, তা হলে এ নিয়ে আর বিতর্ক থাকবে না।’’

বিচারপতি বাগচী বলেন, ‘‘স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে তালিকা থেকে নাম মুছে ফেলার অনুমোদন নেই। কেন নাম বাদ গিয়েছে তা জানার মৌলিক অধিকার নাগরিকদের রয়েছে। এ জন্য সর্বাধিক প্রচার প্রয়োজন। গোটা প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা চাই। নামের তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হোক। যদি বিএলও দফতরের সামনে নামের তালিকা ঝোলানো যায়, তা হলে ওয়েবসাইটে নয় কেন?’’

‘আইনত স্বীকৃত নথি’র মর্যাদা আধারকে!

বৃহস্পতিবারের শুনানিপর্বে বিচারপতি বাগচী বলেন, ‘‘আধার কার্ড স্থায়ী বসবাসের প্রমাণপত্র হিসাবে এবং পরিচয়পত্র হিসাবে আইনত স্বীকৃত একটি নথি। সে ক্ষেত্রে আধার কার্ড গ্রহণ করা হবে না কেন?’’ শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, কোনও রকম সমস্যা হলে পরিচয় এবং বাসস্থানের প্রমাণ হিসাবে আধার কার্ড নিয়ে নির্বাচনী আধিকারিকদের দ্বারস্থ হতে পারবেন নাগরিকেরা। অন্য দিকে, নির্বাচন কমিশনের পক্ষে আইনজীবী রাকেশ দ্বিবেদী বলেন, ‘‘নাগরিকত্ব খতিয়ে দেখার ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের নেই। যেহেতু সংসদের আইন প্রণয়নের ক্ষমতা রয়েছে, তাই আমরা তাতে হস্তক্ষেপ করতে পারি না।’’

মৃত-জীবিতের সালতামামি

বিচারপতি সূর্য কান্ত বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘আপাতত ধরে নেওয়া যাক, নির্বাচন কমিশনের বিশেষ ও নিবিড় সমীক্ষা করার ক্ষমতা রয়েছে। এ বার প্রক্রিয়াগত অংশে আসি। এখন ৬৫ লক্ষ মানুষের নাম বাদ গিয়েছে। আপনি বলছেন, ২২ লক্ষ জন মারা গিয়েছেন। আবার অন্য পক্ষ বলছে কে মৃত আর কে জীবিত তা নিয়েই বিরোধ রয়েছে।’’

অন্য দিকে, বিচারপতি বাগচী কমিশনের আইনজীবীর কাছে জানতে চান, ২০২৫ সালের তালিকায় কতজন রয়েছেন? আইনজীবী জবাব দেন, ৭.৮৯ কোটি। বিচারপতি বাগচী প্রশ্ন করেন, ‘‘খসড়া তালিকায় কতজন বাদ পড়েছেন?’’ জবাবে কমিশনের আইনজীবী বলেন, ‘‘৭.২৪ কোটি জনের নাম রয়েছে। ৬৫ লক্ষ জনের নাম নেই। এর মধ্যে ২২ লক্ষ মৃত। এ ছাড়াও রয়েছেন ৬.২৪ কোটি মানুষ, যাঁদের কোনও নথিপত্র দেখানোর প্রয়োজন নেই।’’

Election Commission Supreme Court of India
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy