‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সাফল্য এসেছে ভারতীয় সেনার হাত ধরেই! মঙ্গলবার পঞ্জাবের আদমপুরের বায়ুসেনাঘাঁটিতে গিয়ে সেনাবাহিনীর সকল সদস্যকে ‘স্যালুট’ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শুধু তা-ই নয়, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধেও সুর চড়ান তিনি। মনে করিয়ে দেন, ‘নয়া ভারতের’ সংজ্ঞা এবং ‘তিন সূত্রের’ কথা।
ঘটনাচক্রে, এই বায়ুসেনাঘাঁটিতেই ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন দিয়ে হামলার চেষ্টা করেছিল পাকিস্তান। কিন্তু ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং বায়ুসেনার তৎপরতায় সেই হামলা প্রতিহত করা হয়েছে। শুধু আদমপুর বায়ুসেনাঘাঁটিই নয়, আরও কয়েকটি বায়ুসেনাঘাঁটিতে হামলার চেষ্টা করেছিল পাকিস্তান। সব ক’টি হামলাই ব্যর্থ করেছে সেনা। পাকিস্তানের মাটিতে প্রত্যাঘাত এবং পাক হামলা দক্ষতার সঙ্গে রুখে দেওয়ায় তিন বাহিনীর প্রশংসা শোনা গিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর মুখে।
মোদী জানান, নয়া ভারতের জীবন তিন সূত্রে গাঁথা। কী সেই সূত্রগুলি, তা-ও ব্যাখ্যা করেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘এক: সন্ত্রাসবাদী হামলা হলে ভারত চুপ করে বসে থাকবে না। নিজের শর্তে জবাব দেবে। দুই: ভারত কোনও নিউক্লিয়ার ব্ল্যাকমেল (পরমাণু হুমকি) সহ্য করবে না। তিন: সন্ত্রাসবাদী এবং তাদের মদতদাতাদের আলাদা করে দেখবে না ভারত।’’
বক্তৃতার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মোদী ভারতীয় সেনাবাহিনীর কৃতিত্বকেই তুলে ধরেছেন। বায়ুসেনা, নৌসেনা এবং স্থলবাহিনীর উদ্দেশে মোদীর বক্তব্য, ‘‘অপারেশন সিঁদুরের আওয়াজ শত্রুদের কানে বাজছে। যারা আমাদের মা-বোনদের সিঁদুর মুছেছে, ঘরে ঢুকে তাদের শেষ করা হয়েছে। জঙ্গিরা কাপুরুষের মতো লুকিয়ে ছিল। কিন্তু আমাদের সেনাবাহিনী, সেখানে গিয়ে তাদের শেষ করেছে। আপনারা (ভারতীয় সেনাবাহিনী) ওদের সামনে থেকে হামলা করেছেন। জঙ্গিদের ন’টি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়েছেন। ১০০ জনের বেশি জঙ্গিকে শেষ করেছেন।’’
শুধু জঙ্গি নয়, পাকিস্তান সেনাকেও মোক্ষম জবাব দেওয়া হয়েছে বলে আদমপুরের সেনাঘাঁটি থেকে জানালেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘আপনারা পাকিস্তান সেনাকে বুঝিয়ে দিয়েছেন, জঙ্গিরা যেখানে বসে শান্তির নিশ্বাস নেবে, সেখানে ঢুকে আপনারা মারবেন। আমাদের ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্রের চিন্তায় ওদের ঘুম উড়েছে। অপারেশন সিঁদুর দেশের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে অনেক। এক সুতোয় বেঁধেছে সকল দেশবাসীকে। আপনারা যা করেছেন, তা অকল্পনীয়, অদ্ভুত, অভাবনীয়।’’
আরও পড়ুন:
শুধু সন্ত্রাসবাদ নয়, পাকিস্তানের বিরুদ্ধেও সুর চড়িয়েছেন মোদী। তাঁর দাবি, ‘‘আমাদের লক্ষ্য ছিল শুধু সন্ত্রাসবাদের হেডকোয়ার্টার ধ্বংস করা। কিন্তু পাকিস্তান যাত্রিবাহী বিমানকে সামনে রেখে ষড়যন্ত্র করেছিল। তবে আমাদের সেনাবাহিনী পাকিস্তানের যাত্রিবাহী বিমানের কোনও ক্ষতি না করে শত্রুদের ঘাঁটিতে নিঁখুত আঘাত হেনেছে।’’ মোদীর কথায়, ‘‘আমাদের নয়া ভারত শান্তি চায়। কিন্তু কেউ যদি মানবিকতাকে আঘাত করে, তবে ভারতও যুদ্ধে নামতে ভাববে না।’’
উল্লেখ্য, আদমপুরের বিমানঘাঁটিতে গিয়ে ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এস-৪০০-র সামনে দাঁড়িয়ে সেনাবাহিনী সদস্যদের সঙ্গে ছবিও তোলেন মোদী। অনেকের মতে, পাকিস্তান বার বার দাবি করেছে তাদের ক্ষেপণাস্ত্র এস-৪০০ ধ্বংস করেছে। মোদী সেই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ছবি তুলে এক কথায় পাকিস্তানকেই বার্তা দিলেন। বুঝিয়ে দিলেন, তাদের দাবি সত্য নয়!