বাংলাদেশের পাসপোর্টধারী নাগরিক। সেই পাসপোর্ট দেখিয়েই এক বা একাধিক বার বিদেশ যাত্রা। কিন্তু রয়েছে এ দেশের ভোটার এবং আধার কার্ড। এ রাজ্যে শতাধিক ব্যক্তির সন্ধান পেয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এবং বিদেশি আঞ্চলিক নিবন্ধীকরণ শাখা (ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিস বা এফআরআরও)। এ দেশের পরিচয়পত্রধারী ওই বাংলাদেশি নাগরিকদের কার্ড বাতিলের জন্য জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে সুপারিশ করেছে কেন্দ্র। সেই কাজ চলছে। প্রশাসনিক সূত্রের বক্তব্য, ওই বাংলাদেশিরা কী ভাবে এ দেশের পরিচয়পত্র পেলেন, পরবর্তী ধাপে তারও অনুসন্ধান হবে।
ধৃত জঙ্গি মহম্মদ শাদ রাডি ওরফে শাব শেখের নাম মুর্শিদাবাদের ভোটার তালিকায় থাকার ঘটনা বড়সড় প্রশ্ন তুলেছিল। সাম্প্রতিক মুর্শিদাবাদ-কাণ্ডে বাংলাদেশের দুষ্কৃতীরা ঢুকে পড়ে গোলমাল পাকিয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে প্রশাসনিক স্তর থেকে। পহেলগামে হত্যালীলার পরে অভ্যন্তরীণ সুরক্ষা মজবুত করার তাগিদ বেড়েছে। এই অবস্থায় ভুয়ো পরিচয়পত্রধারী ব্যক্তিদের উপস্থিতি কেন্দ্র এবং কমিশনের স্নায়ুর চাপ বাড়াচ্ছে বলেই পর্যবেক্ষক মহলের একাংশের অভিমত।
সম্প্রতি ভোটার-আবেদনের অনুমোদনে অবৈধ ভাবে হস্তক্ষেপের জন্য দক্ষিণ ২৪ পরগনায় তিন জন নির্বাচনী আধিকারিকের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে। এক জন সাসপেন্ডও হয়েছেন। কমিশনের সন্দেহ, তাঁরা টাকার বিনিময়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচনী আধিকারিকের ‘ইউজ়ার নেম’, ‘পাসওয়ার্ড’ ব্যবহার করে এ কাজ করেছিলেন। কমিশন সূত্র জানাচ্ছে, এমন ঘটনা সামনে আসার পরে তাদের নজরদারি আরও বাড়তে চলেছে। বাংলাদেশি নাগরিকের ভোটার কার্ড পাওয়ার নেপথ্যে কাদের হাত ছিল, খতিয়ে দেখা হবে তা-ও।
কমিশন সূত্র জানাচ্ছে, জঙ্গি শাব শেখের ঘটনার পর থেকে ভোটার তালিকায় অবৈধ ব্যক্তিদের উপস্থিতির খোঁজে একযোগে কাজ করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, বিদেশি আঞ্চলিক নিবন্ধীকরণ শাখা এবং জাতীয় নির্বাচন কমিশন। ভোটার তালিকায় গত এক মাসে রোজ একাধিক বাংলাদেশি নাগরিকের নাম থাকার তথ্য পাচ্ছে কমিশন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এবং বিদেশি আঞ্চলিক নিবন্ধীকরণ শাখা থেকে যে তথ্য তাদের পাঠানো হচ্ছে, তা অনুযায়ী বাংলাদেশের সেই নাগরিকেরা এ দেশের আধার এবং ভোটার কার্ড করিয়ে নিয়েছেন। এখানে থাকছেন, বাংলাদেশেও যাতায়াত করছেন। আবার বাংলাদেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করে অন্য দেশেও যাচ্ছেন। গত এক মাসে অন্তত ১০০টি এমন নমুনা কেন্দ্রের থেকে জেনেছে কমিশন। সংশ্লিষ্ট কার্ডগুলি বাতিল করা হচ্ছে সঙ্গে সঙ্গে।
ভোটার তালিকায় নাম তোলার ক্ষেত্রে প্রতিটি বুথ স্তরে ‘বুথ লেভেল অফিসারেরা’ (বিএলও) প্রাথমিক যাচাইয়ের কাজটা সারেন। ভোটার-আবেদন মঞ্জুর হবে কি না, তা বিএলও-দের রিপোর্টের উপরে অনেকাংশে নির্ভর করে। সমান্তরালে ‘বুথ লেভেল এজেন্ট’ (বিএলএ) বা রাজনৈতিক দলগুলির একজন করে প্রতিনিধি এ কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। ভোটার তালিকায় নাম তোলা এবং বাদ দেওয়ার প্রশ্নে তাঁদের মতামতের গুরুত্ব রয়েছে। কারণ, এলাকায় কে নতুন এলেন, কে মারা গেলেন— সবই থাকে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক কর্মীদের নজরে। এর পরে ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার (ইআরও) বা এইআরও-রা চূড়ান্ত অনুমোদন দেন আবেদনে। তার পরেই ভোটার তালিকায় নাম ওঠে বা বাদ যায়। এক কর্তার কথায়, ‘‘সন্দেহ, শাব শেখের ক্ষেত্রে কারও সঙ্গে ভুয়ো আত্মীয়তা দেখানো হয়। যে আধিকারিকেরা তা অনুমোদন করেছিলেন, তাঁরা দায় এড়াতেপারেন না।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)