Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
SSC

SSC: শান্তির ‘অসত্য’ বয়ানই ডেকে আনল ‘অশান্তি’, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের জেরার নির্দেশ কোর্টের

এই মামলায় বেনিয়মের ২৭টি অভিযোগ ওঠে। বলা হয়, নিয়ম না মেনে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে নিয়োগ করা হয়েছে।

শুক্রবার সিবিআইকে রিপোর্ট জমা দিতে বলেছে হাই কোর্ট। 

শুক্রবার সিবিআইকে রিপোর্ট জমা দিতে বলেছে হাই কোর্ট।  গ্রাফিক- সৌভিক দেবনাথ

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২২ ১৬:১৯
Share: Save:

নবম-দশম শ্রেণিতে শিক্ষক নিয়োগ মামলায় ফের আরেকটি অনিয়মের অভিযোগ উঠল। স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) উপদেষ্টা কমিটির সদস্যের ‘মিথ্যা’ বয়ানের অভিযোগের ভিত্তিতে আবার সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। তবে এ বার সিবিআইকে আরও স্বাধীনতা দিল বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের একক বেঞ্চ। বৃহস্পতিবার আদালতের নির্দেশ, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা চাইলে এই দুর্নীতি মামলার সঙ্গে সম্পর্কিত যে কোনও সামাজিক এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিকে তারা জেরা করতে পারে।

বৃহস্পতিবার মামলাকারী অনিন্দিতা বেরার আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য সওয়াল করেন, ২০১৬ সালের ওই নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)। তার পর ২০১৯ সালে ওই নিয়োগের জন্য শান্তিপ্রসাদ সিন্‌হার নেতৃত্বে একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করে রাজ্যের শিক্ষা দফতর। সেখানে ছিলেন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ব্যক্তিগত সচিব সুকান্ত আচার্য। মামলাকারীর অভিযোগ, সমস্ত অনিয়মের পিছনে কাজ করেছে ওই উপদেষ্টা কমিটি।

তবে এ বার শান্তিপ্রসাদের বয়ানের ভিত্তিতে বিষয়টিতে আরও ‘জটিলতা’ তৈরি হয়। এর আগে এই সংক্রান্ত মামলায় শান্তিপ্রসাদ হাই কোর্টে বয়ান দেন, কমিটির আহ্বায়ক থাকলেও নিয়ম না মেনে নিয়োগের ব্যাপারে তাঁর কাছে কোনও তথ্য নেই। এমনকি এ নিয়ে কমিটির সদস্যদের সঙ্গে তিনি কোনও বৈঠক করেননি। যা একবারে ভুল দাবি বলে বৃহস্পতিবারের শুনানিতে উঠে আসে। বিকাশরঞ্জন আদালতকে জানান, ওই কমিটির প্রায় তিনটি বৈঠক হয়েছিল। সব ক’টিতেই শান্তিপ্রসাদের স্বাক্ষর রয়েছে। তিনি ওই বৈঠকগুলি ডেকেছিলেন সুকান্তের চেম্বারে। এই দাবির পরই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় উষ্মা প্রকাশ করেন। তাঁর মন্তব্য, ‘‘এই নোটিস দেখে আমি অবাক হচ্ছি। খুবই অবাক হচ্ছি। কমপক্ষে দু’টি বৈঠক হয়েছে। অথচ শান্তিপ্রসাদ নিজে সেই বৈঠক ডেকেও আদালতের জেরার সময় তা লুকিয়ে গিয়েছেন। ক্রমাগত ওই আধিকারিক নিখাদ অসত্য বলে গিয়েছেন। এমনকি কমিটির বাকি সদস্যরাও সিবিআইয়ের কাছে তা অস্বীকার করেছন।’’

মামলাকারীর অন্য আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত এবং বিক্রম বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন তোলেন, ‘‘শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সেই তথ্য আমরা আদালতের সামনে তুলে ধরলাম। কিন্তু এটাও দেখা দরকার শিক্ষামন্ত্রী পার্থ ওই বিষয়টি জানতেন কি না? তিনি ওই বৈঠকে ছিলেন কি না তা-ও পরিস্কার নয়! এখন এটা খোলসা করা দরকার রয়েছে।’’ আদালত নির্দেশ দেয়, ওই বৈঠকের বিষয়ে শান্তিপ্রসাদ-সহ বাকিদের বৃহস্পতিবারই জেরা করার কাজ শুরু করবে সিবিআই। পাশাপাশি, তারা যদি মনে করে এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রীকেও জেরা করতে পারে। শুক্রবার সিবিআইকে রিপোর্ট জমা দিতে বলেছে হাই কোর্ট।

এসএসসি-র আইনজীবী আদালতের কাছে আর্জি করেন, এক মাস সময় দেওয়া হলে মামলাকারদীদের দাবিগুলি খতিয়ে দেখবেন। এবং পুরো বিষয়টি অনুসন্ধানের জন্য শিক্ষা দফতরের প্রধান সচিবকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করবেন। রাজ্যও সেই দাবির সঙ্গে কিছুটা একমত হয়।

এই মামলায় বেনিয়মের ২৭টি অভিযোগ ওঠে। বলা হয়, নিয়ম না মেনে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে নিয়োগ করা হয়েছে। চাকরি পেয়েছেন এমন অনেকে যাঁদের মেধাতালিকায় নাম ছিল না। অভিযোগ, ওবিসি প্রার্থীকে তপসিলি জাতিতে রূপান্তর করে দেখিয়েও চাকরি পেয়েছে অনেকে। মাধ্যমিকে ৫০ শতাংশ নম্বর থাকলেও মেধাতালিকায় তা বেড়ে ৬০ শতাংশ নম্বর দেওয়া হয়েছে, এমন প্রার্থীও চাকরি পেয়েছেন বলে অভিযোগ।


(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE