আর্থিক লেনদেনে যুক্ত অনলাইন গেমিং নিষিদ্ধ করার বিলে সই করেছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। শুক্রবার রাষ্ট্রপতি ভবনের তরফে এ কথা জানানো হয়েছে। বুধবার লোকসভায় এবং বৃহস্পতিবার রাজ্যসভায় ‘দ্য প্রোমোশন অ্যান্ড রেগুলেশন অফ অনলাইন গেমিং বিল, ২০২৫’ শীর্ষক ওই বিল আলোচনা ছাড়াই ধ্বনিভোটে পাশ করিয়েছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার।
রাষ্ট্রপতির মেলায় এ বার ইলেকট্রনিক্স এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের পেশ করা বিলটি আইনে পরিণত হতে আর বাধা থাকল না। কেন্দ্রের দাবি, নতুন আইনে ‘অনলাইন গেমিং’-কে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যে সব ক্ষেত্রে অর্থের বিনিময়ে খেলা হয় কিংবা টাকার বিনিময়ে গড়াপেটা করা হয়, সেগুলি নিষিদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শুক্রবার বলেন, ‘‘নতুন আইন আমাদের সমাজকে টাকার বিনিময়ে অনলাইন গেমের ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে রক্ষা করবে।’’ সেই সঙ্গেই তাঁর দাবি, নতুন আইন ই-স্পোর্টস এবং অনলাইন সামাজিক গেমগুলিকে উৎসাহিত করবে।
বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি ব্যাঙ্ক এবং অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে আর্থিক লেনদেনে যুক্ত অনলাইন গেমের জন্য তহবিল স্থানান্তর বা সহায়তাতেও বিধিনিষেধ জারির প্রস্তাব রয়েছে নয়া আইনে। আর্থিক লেনদেনে যুক্ত অনলাইন গেমিং-এর ব্যবস্থাপনায় এক কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা এবং তিন বছর পর্যন্ত জেলের সাজার বন্দোবস্ত করা হয়েছে নতুন আইনে। এ ছাড়া প্রশ্নের মুখে পড়েছে ফ্যান্টাসি স্পোর্টস গেমিং সংস্থাগুলিরও ভবিষ্যৎ। যদিও এর মধ্যে বেশিরভাগ সংস্থারই দাবি, তারা বাজি ধরা, টাকা নয়ছয় করা কিংবা অবৈধ জুয়া খেলার মতো কোনও রকম ‘অবৈধ কার্যকলাপে’ জড়িত নয়। ফ্যান্টাসি গেমিংয়েও টাকার লেনদেন হয় বটে, তবে ঘুরপথে। এই ধরনের খেলায় প্রথমে অল্প টাকার বিনিময়ে পরিচিত তারকা বা খেলোয়াড়দের নিয়ে তালিকা বানাতে হয়। সেই খেলোয়াড়েরা বাস্তবে কেমন ফল করলেন, তার ভিত্তিতে টাকা লেনদেন হয়। জিতলে লক্ষ লক্ষ টাকার পুরস্কারের হাতছানি থাকে। একে সরাসরি ‘জুয়া’ বলা যায় না।
ব্রিটেন, আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলিতে টাকার বিনিময়ে অনলাইন গেমিং খুবই জনপ্রিয়। আর্থিক লেনদেনে যুক্ত অনলাইন গেমিং বন্ধ হলে জিএসটি বাবদ প্রাপ্ত বিপুল অঙ্কের রাজস্ব হারাবে কেন্দ্র এবং রাজ্যগুলি। ফলে অনলাইন গেমিংয়ের উপর সার্বিক নিষেধাজ্ঞা না জারি করে বিকল্প ব্যবস্থাগুলি ভেবে দেখা যেত বলেও মত প্রকাশ করেছিলেন বিশেষজ্ঞ এবং বণিক মহলের একাংশ। তবুও কেন এমন পদক্ষেপ? সরকারি সূত্রের খবর, অনলাইন গেমিং প্ল্যাটফর্মগুলিতে বিপুল পরিমাণ টাকার লেনদেন নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই নানা অভিযোগ উঠছিল। বহু মানুষ এই সমস্ত গেমে অংশ নিয়ে বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছিলেন। এমনকি, কোনও কোনও সময় ব্যবহারকারীর অজান্তেও টাকা কেটে নেওয়া হচ্ছে বলেও কিছু অভিযোগ উঠেছিল সাম্প্রতিক সময়ে।