Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Nepal

নেপালের জমি দখল করে চিনের রাস্তা, ঘোরানো হচ্ছে নদীর গতিপথও

নেপালের ভূখণ্ডের পাহাড়ি নদীগুলির গতিপথ ঘুরিয়ে দিয়ে তিব্বতে জলের জোগানের ব্যবস্থা পাকা করছে চিন!

নেপাল-চিন সীমান্ত। ছবি: টুইটার সূত্রে প্রাপ্ত

নেপাল-চিন সীমান্ত। ছবি: টুইটার সূত্রে প্রাপ্ত

সংবাদসংস্থা
কাঠমান্ডু শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২০ ১৫:১৭
Share: Save:

চিনের বিরুদ্ধে এবার জমি দখলের অভিযোগ উঠল নেপাল সরকারের অন্দরে। প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির সরকারের কৃষিমন্ত্রকের সার্ভে দফতরের একটি রিপোর্টে এই কথা বলা হয়েছে বলে সংবাদসংস্থার খবর। সার্ভে রিপোর্টে বলা হয়েছে, দেশের উত্তরে তিব্বত সীমান্তে রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ শুরু করেছে চিন। আর সেই কাজ করতে গিয়ে অন্তত ১১টি স্থানে সীমান্ত লঙ্ঘন করে নেপালের জমি দখল করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০টি জায়গায় ৩৩ হেক্টর (৮১.৫৪ একর) জমি ইতিমধ্যেই নেপালের হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি, নেপালের ভূখণ্ডের পাহাড়ি নদীগুলির গতিপথ ঘুরিয়ে দিয়ে তিব্বতে জলের জোগানের ব্যবস্থাও পাকা করছে চিন! যদিও নেপাল কমিউনিস্ট পার্টি পরিচালিত সরকারের তরফে আনুষ্ঠানিক ভাবে চিনা দখলদারি সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি।

চলতি মাসেই নয়াদিল্লির আপত্তি উড়িয়ে কালাপানি, লিপুলেখ গিরিপথ ও লিম্পিয়াধুরা এলাকায় প্রায় ৪০০ বর্গকিলোমিটার ভারতীয় ভূখণ্ডকে জুড়ে তৈরি নয়া মানচিত্রে অনুমোদন দিয়েছে নেপাল পার্লামেন্ট। সে সময় নেপালের বর্তমান সরকারের সঙ্গে বেজিংয়ের ‘ঘনিষ্ঠতার’ প্রসঙ্গ উঠে এসেছিল আলোচনায়। এমনকি, দীর্ঘ দিনের বন্ধু নয়াদিল্লির প্রতি নেপালের এমন আচরণের নেপথ্যে চিনের প্ররোচনা আছে বলেও অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু এবার নেপালের একটি সরকারি রিপোর্টে চিনা ‘দখলদারি’র উল্লেখ সেই বিতর্কে নতুন মোড় এনে দিল।

নেপাল কৃষি মন্ত্রকের সার্ভে দফতরের ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, নেপাল-তিব্বত সীমান্তের পশ্চিমে হুমলা জেলায় ১০ হেক্টর এবং মধ্য অংশের রাসুওয়া জেলায় ৬ হেক্টর জমি ইতিমধ্যেই দখল করে রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু করেছে চিন। পাশাপাশি, বাগডারে খোলা এবং কার্নালি নদীর গতিপথ পরিবর্তন করা হয়েছে। সেগুলির গতিপথ ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে চিন অধিকৃত তিব্বতের দিকে। ফলে অদূর ভবিষ্যতে নেপালের বেশ কিছু কৃষি ক্ষেত্রে জল সঙ্কট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

আরও পড়ুন: ৫ দিনে ৪০ হাজারেরও বেশি সাইবার অ্যাটাক করেছে চিনা হ্যাকারেরা!​

একই ভাবে তিব্বত থেকে নেপালের দিকে প্রবাহিত সুমজং, কামখোলা এবং অরুণ নদীর গতিপথ ঘুরিয়ে দেওয়ায় মধ্য নেপালের সঙ্খুয়াসভা জেলার জলের অভাব দেখা দেওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ওই জেলায় ইতিমধ্যেই নেপালের ৯ হেক্টর জমি বেজিংয়ের গ্রাসে চলে গিয়েছে। নেপাল কৃষিমন্ত্রকের সার্ভে দফতরের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘এ ভাবে নদীর গতিপথ বদলে জমি দখলের প্রক্রিয়া জারি থাকলে অচিরেই আমাদের কয়েকশো হেক্টর জমি তিব্বতের হয়ে যাবে।’

এর আগে নেপালের সিন্ধুপালচক জেলার সীমান্তবর্তী ১১ হেক্টর জমি ‘তিব্বতের অংশ’ হিসেবে দাবি করেছে চিন। চিনা আগ্রাসনের আশঙ্কায় সেখানকার নেপালি গ্রামবাসীরা বিক্ষোভও দেখিয়েছেন। ঠিক এই অংশেই খারানে খোলা এবং ভোটে কোসি নদীর গতিপথ আলাদা হয়েছে। নেপালের আশঙ্কা, হিমালয়ের বরফগলা জলে পুষ্ট ওই দুই নদীর গতিপথও ভবিষ্যতে তিব্বতের দিকে ঘোরানোর চেষ্টা করবে চিনা ইঞ্জিনিয়াররা।

আরও পড়ুন: লাদাখ সফরে সেনাপ্রধান, সেনা সরাতে রাজি দু’দেশ​

মে মাসে চিনের সরকারি টিভি চ্যানেল গ্লোবাল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক টুইটারে পুরো মাউন্ট এভারেস্টকে ‘চিনের অংশ’ বলে চিহ্নিত করেছিল। বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক দানা বাঁধায় টুইটটি মুছে দেওয়া হয়। সার্ভে রিপোর্টে আশঙ্কা, পাকাপাকি ভাবে ওই এলাকাগুলি দখল নেওয়ার উদ্দেশ্যে সেখানে চিনা সশস্ত্র পুলিশের চৌকি বসানো হতে পারে। ষাটের দশকে নেপাল সরকার জমি সমীক্ষার পরে চিন সীমান্ত চিহ্নিত করতে ১০০টির বেশি পিলার বসিয়েছিল। ভারত সীমান্তে বসানো হয়েছিল ৮,৫৫৩টি পিলার। চিন ইতিমধ্যেই বেশ কিছু পিলার সরিয়েছে।

জলের দখল নিয়ে চিনের এই আগ্রাসী নীতি বহুদিনের। ভারত এবং বাংলাদেশের আপত্তি উড়িয়েই চিনের ইউনান প্রদেশে মেকং অববাহিকায় ব্রহ্মপুত্র নদের (সেখানকার নাম ইয়াংলুং সাংপো) উপর একাধিক পর্যায়ে বাঁধ নির্মাণের কাজ চালাচ্ছে চিন। লাদাখের অধিকৃত আকসাই চিন এলাকায় একাধিক নদী ও হিমবাহের গতিপথ বদলে দিয়ে জলের দখল নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে চিনের বিরুদ্ধে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nepal China Tibet Border
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE