Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

জল নিয়ে নরম মোদী, হতাশ কূটনীতিকেরা 

জল রাজনীতিতে কি যেচে পাকিস্তানের হাতে অস্ত্র তুলে দিল ভারত? মোদী সরকারের একটি সিদ্ধান্তে হতাশ কূটনীতিকদের একাংশ সেই অভিযোগই তুলছেন।

নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।

নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:৪৩
Share: Save:

জল রাজনীতিতে কি যেচে পাকিস্তানের হাতে অস্ত্র তুলে দিল ভারত? মোদী সরকারের একটি সিদ্ধান্তে হতাশ কূটনীতিকদের একাংশ সেই অভিযোগই তুলছেন।

আড়াই বছর আগে উরিতে পাক জঙ্গিদের হামলার পর দিল্লি হুমকি দিয়েছিল, ভারত-সিন্ধু জল চুক্তি বাতিল করা হবে। আন্তর্জাতিক এবং ঘরোয়া বিশেষজ্ঞরা তখন সেই সিদ্ধান্তকে হঠকারী বলে সমালোচনা করেছিলেন। বর্তমানে শেষ পর্বে আসা মোদী সরকার উল্টো সুর গেয়ে জলচুক্তি নিয়ে এমন নরম অবস্থান নিচ্ছে, যাকে পাকিস্তানের কাছে কার্যত আত্মসমর্পণ বলে মনে করছে দেশের রাজনৈতিক শিবির। কূটনীতিকদের একাংশের অভিযোগ, জল বণ্টন এবং জাতীয় জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলি সম্পর্কে ভারতের যখন উচিত নিজের অধিকারের পক্ষে আরও বেশি সরব হওয়া, সরকার তা আদৌ করছে না।

আগামী সপ্তাহের শেষে পাকিস্তান থেকে তিন জন পরিদর্শক আসছেন ভারতে। তাঁরা চেনাব বা চন্দ্রভাগা নদীর (সিন্ধু চুক্তির আওতায় দু’দেশের মধ্যে বয়ে যাওয়া ছ’টি নদীর অন্যতম) অববাহিকায় তৈরি ভারতীয় জলবিদ্যুৎ প্রকল্পটি খতিয়ে দেখবেন। বিশ্বব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায় ১৯৬০ সালে ভারত-পাকিস্তান সিন্ধু জলচুক্তির আট নম্বর অনুচ্ছেদে বলা রয়েছে, স্থায়ী সিন্ধু কমিটি পাঁচ বছরে এক বার বৈঠকে বসবে। এই হিসাব অনুযায়ী ২০১৯ সালের মার্চ মাসে এই বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পাকিস্তানের অনুরোধে কমিশনের সেই বৈঠক এগিয়ে ২০১৮ সালের অগস্ট মাসে করে ভারত। এই বৈঠকেই ভারত ফেব্রুয়ারির গোড়ায় তাদের প্রকল্পে পাকিস্তানি পর্যবেক্ষণে রাজি হয়ে যায়। অথচ এই পর্যবেক্ষণও পাঁচ বছর অন্তর করার কথা। শেষ বার হয়েছিল ২০১৪ সালের শেষে। ফলে হেসে খেলে আরও ৭/৮ মাস পাকিস্তানের পর্যবেক্ষকদের (যাদের প্রকৃতপক্ষে গুপ্তচর বলেই মনে করা হয়) প্রকল্প সফর ঠেকিয়ে রাখা যেত।

কূটনৈতিক শিবিরের এক সূত্র ঘরোয়া ভাবে জানাচ্ছেন, ‘‘পাকিস্তানের এই পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্য ভারতীয় জলবিদ্যুৎ প্রকল্পটির সমস্ত নতুন তথ্য ও নথি সংগ্রহ করা। এর পর বিশ্বব্যাঙ্ক তথা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে গিয়ে ইমরান খানের সরকার ধুয়ো তুলবে— ভারতীয় জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলির কারণে পাকিস্তান তার প্রাপ্য জল পাচ্ছে না।’’ কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, বিষয়টি শুধুমাত্র দ্বিপাক্ষিক হলে ভারত নিজেদের মতো করে বুঝে নিতে পারত। কিন্তু এই জলচুক্তি আন্তর্জাতিক নজরদারির আওতায় পড়ে। এমনিতেই বিষয়টি নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে টানাপড়েন অব্যাহত। জম্মু ও কাশ্মীরে বিতস্তা ও চন্দ্রভাগার উপরে কিষাণগঙ্গা এবং রাতলে নামে দু’টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ছে ভারত। এর ফলে সিন্ধু জলচুক্তির শর্ত লঙ্ঘন হচ্ছে, এই যুক্তিতে শুরু থেকেই ওই প্রকল্পগুলির বিরোধিতা করেছিল পাকিস্তান। বিষয়টি গড়িয়েছিল ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাঙ্কের সদর দফতর পর্যন্ত। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে শেষ পর্যন্ত অনুমতি পেয়েছিল ভারত। এ বারেও অনাবশ্যক ভাবে এই পাক-পরিদর্শনকে এগিয়ে এনে মোদী সরকার কার্যত নিজেদের হাত পোড়াচ্ছে বলেই মনে করা হচ্ছে।

বিদেশ মন্ত্রকের কর্তাদের একাংশ ঘরোয়া ভাবে জানাচ্ছেন, এই জলচুক্তির মাধ্যমে ছ’টি আন্তঃরাষ্ট্রীয় নদী থেকে ৮০ শতাংশ জল পাকিস্তানে যায়। তাতেও তারা অখুশি। বিষয়টিকে রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোটাই তাদের কৌশল। কূটনীতিকরা মনে করেন— এ ক্ষেত্রে উচ্চ অববাহিকায় থাকা রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের উচিত নিজের অধিকার সম্পর্কে পাকিস্তান ও বিশ্বব্যাঙ্কে আরও সরব হওয়া। কিন্তু তার বদলে তারা পাকিস্তানেরই সুবিধা করে দিচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE