Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
International News

‘অভিনন্দনকে এখনই ফিরিয়ে দিন’, ইমরানকে বার্তা ভুট্টোর নাতনি ফতিমার

ধানমন্ত্রী ইমরান খানকে বললেন, সুস্থ শরীরে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওই ভারতীয় জওয়ানকে ফিরিয়ে দেওয়া হোক। আর তার মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হোক, শান্তি ও মানবতাকে মর্যাদা দিতে চায় পাকিস্তান। এ ব্যাপারে পাক সরকার নাগরিকদের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

ফতিমা ভুট্টো। ছবি- এএফপি

ফতিমা ভুট্টো। ছবি- এএফপি

সংবাদ সংস্থা
ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৩:১২
Share: Save:

ইসলামাবাদের হেফাজতে থাকা ভারতীয় বায়ুসেনার উইং কম্যান্ডার অভিনন্দন বর্তমানকে সুস্থ শরীরে ফিরিয়ে দেওয়ার জোরালো দাবি জানালেন প্রয়াত প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলি ভুট্টোর নাতনি ফতিমা বেগম। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে বললেন, সুস্থ শরীরে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওই ভারতীয় জওয়ানকে ফিরিয়ে দেওয়া হোক। আর তার মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হোক, শান্তি ও মানবতাকে মর্যাদা দিতে চায় পাকিস্তান। এ ব্যাপারে পাক সরকার নাগরিকদের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

প্রথম সারির মার্কিন দৈনিক ‘দ্য নিউইয়র্ক টাইমস’-এ প্রকাশিত তাঁর উত্তর সম্পাদকীয়তে ৩৬ বছর বয়সী ফতিমা লিখেছেন, ‘‘আমি ও আমার মতো পাকিস্তানের তরুণ প্রজন্মের অনেকেই ওই ভারতীয় বায়ুসেনাকে অবিলম্বে ভারতে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি আমার দেশের সরকারের (পড়ুন, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সরকার) কাছে। সুস্থ শরীরে ওঁকে ফিরিয়ে দেওয়া হোক। আর এই ভাবেই শান্তি ও মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের প্রতিশ্রুতিকে মর্যাদা দেওয়া হোক।’’

বুধবার ভারতীয় বায়ুসেনার একটি ‘মিগ-২১’ বিমান ভেঙে পড়ার পর প্যারাশ্যুটে চেপে ঝাঁপ দেন পাইলট উইং কম্যান্ডার অভিনন্দন বর্তমান। কিন্তু তিনি গিয়ে নামেন নিয়ন্ত্রণরেখায়। জেনিভা শর্ত অগ্রাহ্য করে পাক সেনাবাহিনীর হেফাজতে তাঁর উপর অত্যাচারও চালানো হয়। পরে রক্তাক্ত অভিনন্দনের ছবি পাকিস্তানের তরফে ছড়িয়ে দেওয়া হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। এর পরেই দিল্লিতে পাকিস্তানের ডেপুটি হাইকমিশনারকে তলব করে ভারত অভিনন্দনকে অবিলম্বে সুস্থ শরীরে দ্রুত ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানায় ইসলামাবাদের কাছে।

মার্কিন দৈনিকে প্রকাশিত তাঁর উত্তর সম্পাদকীয়তে প্রয়াত পাক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর ভাইঝি ফতিমা লিখেছেন, ‘‘যুদ্ধে আমাদের (পড়ুন, পাকিস্তান) প্রজন্মের পর প্রজন্ম নষ্ট হয়েছে। আমি কোনও পাক সেনাকে মরতে দেখতে চাই না। কোনও ভারতীয় সেনাকেও মরতে দেখতে চাই না। দেখতে চাই না, এই ভাবে হানাহানি, রক্তারক্তির মাধ্যমে এই অঞ্চলটা অনাথের উপমহাদেশ হয়ে যাক।’’

আরও দেখুন- সুখোই থেকে মিগ, সব বিমান ওড়ানোয় দক্ষ অভিনন্দনের স্ত্রীও বিমানবাহিনীর প্রাক্তন স্কোয়াড্রন লিডার​

আরও পড়ুন- পাক কবজায় উইং কমান্ডার অভিনন্দন, ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি দেশজুড়ে​

পরে ওই প্রবন্ধে আরও বলিষ্ঠ ভাবে তাঁর প্রজন্মের পাক নাগরিকদের একটা বড় অংশের মনোভাবের কথা জানিয়েছেন জুলফিকার আলি ভুট্টোর পুত্র মোর্তাজা ভুট্টো-কন্যা ফতিমা।

ফতিমা লিখেছেন, ‘‘আমাদের প্রজন্মের পাক নাগরিকরা বাকস্বাধীনতার অধিকারের জন্য লড়াই করছি। তাই শান্তির জন্য সুর চড়াতে আমরা কাউকে ভয় পাই না। কারণ, শান্তির চেয়ে বড় কিছু হতে পারে না।’’

ফতিমার লেখার ছত্রে ছত্রে ঝরে পড়েছে যুদ্ধ, রক্তপাত, হানাহানির বিরুদ্ধে বিদ্বেষ, ঘৃণা। সেই ঘৃণা, বিদ্বেষ কেন ছড়িয়ে পড়েছে পাকিস্তানের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে, তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন ফতিমা, নির্দ্বিধায়।

ফতিমা লিখেছেন, ‘‘আমাদের (পড়ুন, পাকিস্তান) সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে সামরিক একনায়কতন্ত্রের। সন্ত্রাসবাদকে সঙ্গে নিয়ে চলার অভিজ্ঞতাও আমাদের অনেক দিনের। যা গোটা দেশের ভবিষ্যতকে ঠেলে দিয়েছে গভীর অনিশ্চয়তার দিকে। এই সব দেখে আমার প্রজন্মের পাক নাগরিকরা বীতশ্রদ্ধ। তাঁরা আর যুদ্ধ চান না। জিঘাংসা, প্রতিহিংসা চান না। প্রতিশোধ, হানাহানি, রক্তপাত চান না। নাগরিকদের একটা বড় অংশই চান না, পাকিস্তান আবার যুদ্ধ শুরু করুক।’’

প্রতিবেশী দেশ সম্পর্কে পাকিস্তানের ‘যুদ্ধং দেহি’ মনোভাব যে তাঁর কাছে নতুন কিছু নয়, নির্দ্বিধায় তারও উল্লেখ করেছেন ফতিমা। লিখেছেন, ‘‘আমি কখনও আমার দেশকে (পাকিস্তান) প্রতিবেশীদের সঙ্গে শান্তিতে থাকতে দেখিনি। আগে কখনও এমনটাও দেখিনি, পরমাণু অস্ত্রে শক্তিশালী দু’টি দেশ টুইটারে চাপানউতর চালাচ্ছে। তার জন্য টুইটার অ্যাকাউন্ট খোলা হচ্ছে। যা এ বার দেখলাম।’’

পাকিস্তান সম্পর্কে যাঁরা ওয়াকিবহাল, সেই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসলামাবাদের সেনা ও সন্ত্রাসবাদ তোষণের বিরুদ্ধে কোনও পাক-কন্যার এই ‘অগ্নিবর্ষণ’ও এর আগে দেখা যায়নি। যা পাকিস্তানের নতুন প্রজন্মের একটি নতুন ধারাকে তুলে ধরেছে। পাক নাগরিকদের নতুন প্রজন্মের ভাবনাচিন্তাকে ভাষা দিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE