ইমরান খান। মঙ্গলবার ইসলামাবাদে। ছবি: পিটিআই।
পুলওয়ামার হামলার দায় প্রথম দিনেই স্বীকার করেছিল জইশ-ই-মহম্মদ। পাকিস্তানের দিক থেকে রুটিনমাফিক নিন্দা ছাড়া কোনও বার্তা এত দিন আসেনি। মঙ্গলবার পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান টিভিতে বিবৃতি দিয়ে বললেন, ভারতের মাটি থেকে রণং দেহি বার্তা তাঁর কানে পৌঁছেছে। ভারত আক্রমণ করলে পাকিস্তান প্রত্যাঘাত করতে প্রস্তুত। পুলওয়ামার ঘটনায় পাকিস্তানের হাত রয়েছে বলে ভারত যে দাবি করছে, তারও পাথুরে প্রমাণ চেয়েছেন তিনি।
উত্তরে ভারতের দিক থেকে বলা হয়েছে, ইমরানের কথায় দিল্লি আদৌ বিস্মিত নয়। জইশ হামলার দায় নেওয়ার পরে আর কী প্রমাণ চাওয়ার থাকতে পারে! সোমবার ভারতীয় সেনার হাতে কামরান আর হিলাল নামে যে দুই জইশ জঙ্গি খতম হয়েছে, তারাও পাক নাগরিক বলে জানা গিয়েছে। পাকিস্তানকে ‘সন্ত্রাসবাদের স্নায়ুকেন্দ্র’ বলে আখ্যা দিয়ে এ দিন বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, ‘‘আমরা চাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ভুল না বুঝিয়ে পুলওয়ামা হামলার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে চোখে পড়ার মতো ব্যবস্থা নিক পাকিস্তান।’’
প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন হওয়ার পর ইমরান একাধিক বার ভারতের সঙ্গে আলোচনায় তাঁর আগ্রহের কথা বলেছেন। কিন্তু সন্ত্রাসের আবহে যে আলোচনা চলতে পারে না, সে কথা প্রথম থেকেই বলে আসছে ভারত। সন্ত্রাসের প্রশ্ন তুলেই সার্ক সম্মেলনে যেতে অস্বীকার করে দিল্লি। ফলে সম্মেলনই হয়নি। কিন্তু তার পরেও পুলওয়ামার ঘটনা ঘটেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গত কাল স্পষ্ট বলে দেন, আলোচনার সম্ভাবনা শেষ। পাকিস্তানের ‘মোস্ট ফেভার্ড নেশন’ তকমা বাতিল হয়েছে। আন্তর্জাতিক আদালতে কুলভূষণ মামলাতেও পুলওয়ামার আঁচ পড়েছে।
#WATCH MEA Spokesperson Raveesh Kumar reacts to Pakistan PM's statement on #PulwamaTerrorAttack, says 'In this “Naya Pakistan”, Ministers publicly share platforms with terrorists like Hafiz Saeed who have been proscribed by United Nations' pic.twitter.com/FjvQgQ9Z0u
— ANI (@ANI) February 19, 2019
কূটনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, এই আবহে মুখ খুলে একই সঙ্গে দু’টি চাল দিলেন ইমরান। এক দিকে আন্তর্জাতিক মহলে বার্তা দিলেন, ‘‘কাশ্মীরের ওই ঘটনার সঙ্গে পাকিস্তান যুক্ত, এমন প্রমাণ যদি ভারতের কাছে থাকে, তা হলে আমাদের দেওয়া হোক। কথা দিচ্ছি ব্যবস্থা নেব।’’ সেই সঙ্গে ভারত আক্রমণ করলে প্রত্যাঘাতের হুমকি শুনিয়ে সুরও চড়িয়ে রাখলেন তিনি। তাঁর মন্তব্য, ‘‘ভারতীয় রাজনীতিবিদ এবং সংবাদমাধ্যম সূত্রে কানে আসছে, ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার কথা ভাবছে। ভারত যদি পাকিস্তানকে আক্রমণ করার কথা ভাবে তা হলে আমাদেরও প্রত্যাঘাতের কথা ভাবতে হবে।’’
পাক বিদেশমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশিও রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিবকে চিঠি লিখে দাবি করেছেন, ‘‘খুবই জরুরি ভিত্তিতে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আমাদের অঞ্চলে নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। কারণ ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে শক্তি প্রদর্শনের হুমকি দিচ্ছে।’’
আরও পড়ুন: একশো ঘণ্টাতেই জইশ নিধন: সেনা
বেশ কিছুটা সময় নিয়ে এর জবাব দিয়েছে সাউথ ব্লক। দীর্ঘ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘পাক প্রধানমন্ত্রী পুলওয়ামার ঘটনাকে সন্ত্রাস না বলায় এবং ওই জঘন্য কাণ্ডের নিন্দা না করায় আমরা বিস্মিত নই। কারণ যে কোনও জঙ্গি হামলার দায় এড়িয়ে যাওয়াটা ও দেশের পুরনো অভ্যাস। গোটা ঘটনা যে জইশ ঘটিয়েছে, সে কথাও এড়িয়ে গিয়েছেন ইমরান’। মুম্বই এবং পঠানকোট সন্ত্রাসের উল্লেখ করে ভারতের শ্লেষ— বহু তথ্য ও প্রমাণ পাকিস্তান সরকারের হাতে তুলে দিয়ে দেখা গিয়েছে, ফল হয়নি।
কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামন পরে বলেন, ‘‘ইমরান ফাঁকা আওয়াজ করছেন!’’ অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিও বলেন, ‘‘জইশ তো হামলার দায় স্বীকার করেইছে! প্রমাণ তো ইমরানের ঘরেই রয়েছে!’’ পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিংহর চ্যালেঞ্জ, ‘‘প্রিয় ইমরান খান, মাসুদ আজহার বাহাওয়ালপুরে বসে আইএসআই-এর সঙ্গে আলোচনা করে হামলা ঘটিয়েছে। যান, তাকে গ্রেফতার করুন। না পারলে বলুন, আমরা আপনার হয়ে করে দিচ্ছি।’’
ইমরানের অবশ্য দাবি, ভারতের এই পাক-বিরোধী প্রতিক্রিয়া চলতি বছরের লোকসভা নির্বাচনে সুফল পাওয়ার জন্য। উত্তরে নয়াদিল্লির বক্তব্য, ‘‘ভারত এই সব মিথ্যা অভিযোগকে গুরুত্ব দিতে চায় না। ভারতের গণতন্ত্রের মডেল পাকিস্তানের পক্ষে বোঝাই সম্ভব নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy