Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
International News

এফ-১৬ বিমানই ধ্বংস করেন অভিনন্দন, মার্কিন সংশয় উড়িয়ে পাল্টা দাবি

ওই শীর্ষকর্তার দাবি, ‘‘মার্কিন প্রতিনিধিরা পাকিস্তানের হাতে থাকা প্রতিটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পাকিস্তানে গিয়ে গুনে দেখেছে। তাতে সব কটি এফ-১৬ অক্ষত অবস্থায় ছিল। একটিও অনুপস্থিত ছিল না।’’

সেই অ্যামরাম মিসাইলের টুকরো দেখাচ্ছেন এক সেনাকর্তা। —ফাইল চিত্র

সেই অ্যামরাম মিসাইলের টুকরো দেখাচ্ছেন এক সেনাকর্তা। —ফাইল চিত্র

সংবাদ সংস্থা
ওয়াশিংটন ডিসি শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৯ ১২:৪৫
Share: Save:

গুলি করে পাক যুদ্ধ বিমান নামিয়েছিলেন উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান। এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই। ভারত-পাক সঙ্ঘাত নিয়ে মার্কিন সংশয় উড়িয়ে পাল্টা দাবি ভারতীয় বায়ুসেনার।

বায়ুসেনা সূত্রে বলা হয়, “পাক অধিকৃত সাবজকোটের ৭-৮ কিলোমিটার ভিতরে ঢুকে পাক বায়ুসেনার একটি এফ-১৬ বিমান গুলি করে নামান উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান। সেইসময় ভারতীয় বায়ুসেনার তরফে যে রেডিয়ো বার্তা রেকর্ড করা হয়, তাতে আরও বিষয়টি ধরা পড়ে। ২৭ ফেব্রুয়ারি ভারতে আক্রমণ করতে আসা তাদের একটি এফ-১৬ বিমান ঘাঁটিতে ফিরতে পারেনি বলে আলোচনা করতে শোনা যায় পাক বায়ুসেনাকে।”

বায়ুসেনা সূত্রে আরও বলা হয়, “২৭ ফেব্রুয়ারি যে দৃশ্য দেখা যায়, তাতে স্পষ্ট ৮-১০ কিলোমিটার দূরত্বে দুটি বিমান থেকে দুই পাইলট বেরি যান। যার মধ্যে একটি ছিল ভারতের মিগ ২১ বাইসন এবং অপরটি একটি পাক বায়ুসেনার যুদ্ধবিমান। পরে যে বৈদ্যুতিন তথ্যপ্রমাণ (ইলেকট্রনিক সিগনেচার) আমরা হাতে পাই, তা থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে অপর বিমানটি পাকিস্তানের এফ-১৬ যুদ্ধ বিমান ছিল।”

ডগফাইটে অভিনন্দন বর্তমান পাকিস্তানের যে যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেছিলেন, সেটা ছিল এফ-১৬, শুরু থেকেই এমনই দাবি করেছিল ভারতীয় বায়ুসেনা। পাকিস্তান যদিও বরাবরই বলে এসেছে, ২৭ ফেব্রুয়ারি এফ-১৬ ব্যবহার করেনি তাদের বায়ুসেনা। ভারতের দাবির সত্যাসত্য নিয়ে সম্প্রতি প্রশ্ন তোলে একটি একটি মার্কিন প্রতিবেদন। মার্কিন ম্যাগাজিন ‘ফরেন পলিসি’র ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, সম্প্রতি আমেরিকা পাকিস্তানের সমস্ত এফ-১৬ যুদ্ধবিমান গুনে দেখেছে। তাতে একটি যুদ্ধবিমানও কম নেই।

ঘটনা গত ২৭ ফেব্রুয়ারির। ওই দিন পাকিস্তানের একাধিক যুদ্ধবিমান ভারতের আকাশসীমায় ঢুকে হামলার চেষ্টা চালায়। মিগ-২১ বাইসন যুদ্ধবিমান নিয়ে সেগুলি তাড়া করেন ভারতীয় বায়ুসেনার পাইলট অভিনন্দন বর্তমান। আকাশে ‘ডগফাইট’-এ পাকিস্তানের একটি যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেন অভিনন্দন। যদিও তাঁর মিগ-২১ বাইসনও ধ্বংস হয় পাক বায়ুসেনার মিসাইলে। তার পর পাক সেনার হাতে বন্দি হওয়া এবং দেশে ফিরে আসার পর্ব।

ওই ঘটনার পরই ভারতের তিন বাহিনীর শীর্ষ কর্তারা একটি সাংবাদিক বৈঠকে দাবি করেন, অভিনন্দন বর্তমান পাকিস্তানের যে যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেন, সেটি ছিল এফ-১৬। কারণভারতীয় ভূখণ্ডেই উদ্ধার হয়েছিল অ্যামরাম মিসাইলের ধ্বংসাবশেষ। সেই ভাঙা অংশ দেখিয়ে সেনার দাবি ছিল, এফ-১৬ ছাড়া অন্য কোনও যুদ্ধবিমান থেকে এই অ্যামরাম ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া সম্ভব নয়। সেই যুক্তিতেই পাকিস্তান যে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করেছিল, তা জোর দিয়ে দাবি করে নয়াদিল্লি। শুধু তাই নয়, ওই ভাঙা অংশ মার্কিন প্রশাসনকেও পাঠিয়েছিল ভারত। যদিও পাকিস্তান বরাবরই এফ-১৬ ব্যবহারের কথা অস্বীকার করেছে।

আরও পড়ুন: বায়ুমণ্ডলেই জ্বলে যাবে টুকরো, এ-স্যাট নিয়ে নাসার আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিল পেন্টাগন

এই বিষয়টি নিয়েই মার্কিন ম্যাগাজিন ‘ফরেন পলিসি’তে একটি প্রতিবেদন লিখেছেন লারা সেলিগম্যান। তাতে এই বিষয়টির সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক থাকা অথচ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতরের এক শীর্ষ কর্তার মন্তব্য উদ্ধৃত করা হয়েছে। ওই শীর্ষকর্তার দাবি, ‘‘মার্কিন প্রতিনিধিরা পাকিস্তানের হাতে থাকা প্রতিটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পাকিস্তানে গিয়ে গুনে দেখেছে। তাতে সব কটি এফ-১৬ অক্ষত অবস্থায় ছিল। একটিও অনুপস্থিত ছিল না।’’ ওই শীর্ষকর্তার আরও মন্তব্য, এটা ভারতের দাবির সরাসরি পরিপন্থী।

কেন এবং কী ভাবেই বা এই গণনার কাজ করল আমেরিকা? আমেরিকার কাছ থেকেই এফ-১৬ যুদ্ধবিমান কিনেছিল পাকিস্তান। মার্কিন সামরিক চুক্তি অনুযায়ী, যে দেশে যুদ্ধবিমান বিক্রি হচ্ছে, আমেরিকা নির্দিষ্ট সময় অন্তর ক্রেতা দেশে গিয়ে যুদ্ধবিমান গুনে বা পরীক্ষা করে দেখতে পারে। সেই অনুযায়ীই সম্প্রতি পাকিস্তানের এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলি গুনে দেখেছে আমেরিকা এবং তাতে সব কটিই পাওয়া গিয়েছে।

আরও পডু়ন: ‘বিরোধী মানেই নন দেশদ্রোহী’, পাঁচ বছর পরে নিজের ব্লগে বিস্ফোরক আডবাণী

তবে প্রতিবেদনে এও বলা হয়েছে, ‘‘হতে পারে অভিনন্দন বর্তমান পাকিস্তানের এফ-১৬ যুদ্ধবিমান লক করেছিলেন, গোলাগুলি ছুড়েছিলেন এবং নিশ্চিত ভাবেই তা পাক যুদ্ধবিমানকে আঘাতও করেছিল। কিন্তু এফ-১৬ যুদ্ধবিমান গুনে দেখার পর ওই সময় ভারতের দাবিগুলির অনেকটাই মিলছে না।’’ ফলে ভারত সেই সময় আন্তর্জাতিক শিবিরকে বিভ্রান্ত করেছিল বলেও ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী জঙ্গি হানায় ৪০ সিআরপিএফ জওয়ানের মৃত্যু হয়। তদন্তে উঠে আসে হামলা চালিয়েছিল পাক মদতে পুষ্ট জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ-ই-মহম্মদ। ওই হামলার পরই পরমাণু শক্তিধর দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়। ২৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের বালাকোটে ঢুকে বোমা ফেলে আসে ভারতীয় বায়ু সেনা। তার জবাবে পরের দিন ২৭ ফেব্রুয়ারি সকালেই পাকিস্তানের একাধিক যুদ্ধবিমান ভারতের আকাশসীমায় ঢুকে হামলা চালানোর চেষ্টা করে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE