Advertisement
০৪ মে ২০২৪
CIMA Gallery

কলকাতায় জন্ম, আমেরিকায় ঘর, সিমা গ্যালারিতে বৈষম্য নিয়ে আলোচনায় বাঙালি শিল্পী

শিল্পী রিনা বন্দ্যোপাধ্যায় নিউ ইয়র্কের বাসিন্দা। কলকাতার সঙ্গে তেমন পরিচয় না থাকলেও গোটা বিশ্বে ঘুরেছে তাঁর কাজ।

ড্রয়িং থেকে ভাস্কর্য, ইনস্টলেশন— বিভিন্ন ধরনের কাজ রয়েছে শিল্পী রিনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।

ড্রয়িং থেকে ভাস্কর্য, ইনস্টলেশন— বিভিন্ন ধরনের কাজ রয়েছে শিল্পী রিনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ছবি: সংগৃহীত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২৩ ২১:১৩
Share: Save:

পরনে সিল্কের কুর্তা। হাতে শাঁখা, সোনার চুড়ি। ক্যানভাসে দেশজ নানা ভাবনার ছোঁয়া। কিন্তু কলকাতায় সবে তৃতীয় বার।

শিল্পী রিনা বন্দ্যোপাধ্যায় নিউ ইয়র্কের বাসিন্দা। কলকাতার সঙ্গে তেমন পরিচয় না থাকলেও গোটা বিশ্বে ঘুরেছে তাঁর কাজ। ইউরোপ থেকে এশিয়া, বিশ্বের প্রায় সব প্রথম সারির মিউজিয়ামে প্রর্দশিত হয়েছে তাঁর শিল্পকর্ম। যে ভেনিস বিয়ানেলে এখনও পর্যন্ত দেখা যায়নি বেশি বাঙালি শিল্পীকে, সেখানেও দেখানো হয়েছে রিনার কাজ।এ বার নিজের বাবা-মায়ের শহরের সঙ্গে আলাপ করতে এসেছেন। সোমবার সিমা গ্যালারিতে তাঁকে ঘিরেই বসল সান্ধ্য-সভা।

রিনা কাজ করেন শিল্পের নানা মাধ্যম নিয়ে। ড্রয়িং থেকে ভাস্কর্য, ইনস্টলেশন— বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ রয়েছে তাঁর। আর সে সবের মাধ্যমেই ফুটিয়ে তোলেন চারপাশ সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য। কখনও রিনার শিল্প পাশে দাঁড়ায় পীড়িত নারীদের, কখনও দেশ থেকে বিদেশে গিয়ে বৈষম্যের শিকার হওয়াদের কথা বলে। বর্ণ, পরবাস, আমেরিকায় পৃথিবীর নানা প্রান্তের মানুষদের বসবাস ও তার ইতিহাস, সে সব ঘিরে বৈষম্য— সবই ঘুরেফিরে আসে রিনার কাজে।

কখনও রিনার শিল্প পাশে দাঁড়ায় পীড়িত নারীদের, কখনও দেশ থেকে বিদেশে গিয়ে বৈষম্যের শিকার হওয়াদের কথা বলে। বর্ণ, পরবাস, আমেরিকায় পৃথিবীর নানা প্রান্তের মানুষদের বসবাস ও তার ইতিহাস, সে সব ঘিরে বৈষম্য— সবই ঘুরেফিরে আসে রিনার কাজে। 

কখনও রিনার শিল্প পাশে দাঁড়ায় পীড়িত নারীদের, কখনও দেশ থেকে বিদেশে গিয়ে বৈষম্যের শিকার হওয়াদের কথা বলে। বর্ণ, পরবাস, আমেরিকায় পৃথিবীর নানা প্রান্তের মানুষদের বসবাস ও তার ইতিহাস, সে সব ঘিরে বৈষম্য— সবই ঘুরেফিরে আসে রিনার কাজে।  ছবি: সংগৃহীত।

রিনার যখন তিন বছর বয়স, ইঞ্জিনিয়ার বাবা কর্মসূত্রে লন্ডন পাড়ি দেন। কিছু দিন পরে মায়ের সঙ্গে তিনিও চলে যান সে দেশে। প্রথম কয়েক বছর ইংল্যান্ডের বিভিন্ন শহরে কাটে। তার পর আমেরিকার নিউ ইয়র্ক। সেখানেই বড় হওয়া।

সময়টা সত্তরের দশক। তখনও গুগ্‌ল আসেনি। ইন্টারনেটে যেমন এখন সব জায়গায় কথা জেনে নেওয়া যায়, সে সুযোগ ছিল না। বিদেশে গিয়ে নতুন করে সংসার পাতার কষ্টও তাই অনেকটা অজানা ছিল পৃথিবীর এই গোলার্ধে। এমনই একটি সময়ে বিলেতে গিয়েঅচেনা শহরে স্কুলে ভর্তি হন রিনা। সে দেশ শ্বেতাঙ্গদের। এমনই ধারণা জনগণের মনে। তাই বাকিরা আপন নয়। তাঁরা স্বাগতও নয়। সে কথা স্পষ্ট বুঝিয়ে দেওয়ার মতো বর্ণবৈষম্য দেখেই বড় হওয়া। তার পর আমেরিকা। সেখানে তখন ভারত সম্পর্কে আরওই কম ধারণা। এ দেশে যে মানুষজন থাকেন, তা-ই ইন্টারনেটের যুগের আগে সে দেশের কত জন মানতেন! শিল্পী বলেন, ‘‘ইন্টারনেট এসেছে বটে, তবে সে সব ধারণা এখনও বদলায়নি। এই তো কিছু দিন আগে নিউ ইয়র্ক থেকে লন্ডনে যাচ্ছিলাম কাজে। একটি বাড়িতে কয়েক দিনের জন্য ভাড়া থাকব বলে মেল করলাম। আর উত্তর পড়ে অবাক হলাম। সে বাড়ির মালকিন সটান লিখলেন, ‘নাম দেখে বুঝতে পারছি তুমি ভারতীয়। ভারতের খাবার আমি পছন্দ করি। কিন্তু আমার ঘরে ভারতীয় রান্নার গন্ধ ভাল লাগে না। সে সব রান্না এখানে করা যাবে না। তাই তোমাকে বাড়ি ভাড়া দিচ্ছি না।’ এখনও এমন হয়। ভাবা যায়!’’

তাই ৫০ বছরের বেশি সময় আমেরিকায় কাটানোর পরেও সেই বৈষম্যের কথাই বলতে হয় ষাটোর্ধ্ব বাঙালি শিল্পীকে। তার মানে কি এখনও সে দেশ আপন নয় তাঁর? তা নয়। সে দেশেই তো ঘরবাড়ি। সন্তান। কলকাতায় তো জন্মমাত্র। এখানে বাবা-মায়েরা কোন অঞ্চলে থাকতেন, তা-ও ভাল ভাবে জানা নেই। নেই কোনও আত্মীয়। তবে রিনা বলেন, ‘‘কোনও জায়গাকে আপন মনে করা মানেই তার সব কিছু মেনে নেওয়া নয়। যে কোনও উপায়ে সেখানকার মূলস্রোতের মতো হয়ে যাওয়াও নয়।’’ তাই আমেরিকা নিজের হলেও সেখানকার অন্যায়কে আপন করে নেননি। বরং পশ্চিমে বসে প্রতিবাদ করার জন্য খুঁজে নেন এমন সব চিত্র আর চিহ্ন, যা একেবারেই পূর্বের। কেন এমন করেন? শুধু পূর্বে জন্ম বলে নয়, পশ্চিমের দৃষ্টিভঙ্গিতে বদল আনাও যে লক্ষ্য।

তার জন্য রিনা নানা ধরনের জিনিস দিয়ে কাজ করেন। কখনও নিয়ে আসেন পুরনো আসবাবপত্র, কখনও কাপড়। আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে একান্ত আড্ডায় শিল্পী বলেন, ‘‘আফ্রিকা, ভারতের মতো বিভিন্ন জায়গায় স্থানীয় শিল্প ব্যবহার করে শুধু শিল্পের ইতিহাস আলোচনা করা হয় বিদেশে। অথচ শিল্প হিসাবে স্থান পায় না এ সব কাজ। আমি আদিবাসীদের শিল্প, বিভিন্ন অঞ্চলের কাজ তুলে ধরার চেষ্টা করি।’’ এ ভাবে পশ্চিমের দর্শকের কাছে শিল্পের নতুন ধারণা তৈরি করছেন রিনা। আর্ট গ্যালারিতে কলকাতাবাসীদের সঙ্গে আড্ডায় বসে সে সব কথা ঘুরেফিরে এল। সিমা গ্যালারির অধিকর্তা রাখী সরকার বললেন, ‘‘রিনার কাজের ভাষাই ওঁকে আলাদা করেছে। যে ভঙ্গিতে তিনি বৈষম্যের কথা বলেন, তা নজর কেড়েছে সারা বিশ্বের।’’ বাঙালি শিল্পীর কম দেখা শিল্পকেই চিনে নিতে সিমা গ্যালারিতে জড়ো হয়েছিলেন কলকাতার শিল্পপ্রেমীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CIMA Gallery
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE