বয়স বোঝা দায়! তন্বী কোমর। মেদের ছিটেফোঁটা নেই। পুরুষ হোন বা নারী, ত্বক থেকে যেন জেল্লা বেরোচ্ছে। কোরিয়ানদের এমন রূপই চর্চিত বিশ্ব জুড়ে। বিশেষত এ দেশে নতুন করে কোরিয়ানদের প্রসাধনী, রূপ নিয়ে আগ্রহ বেড়েছে। ওটিটি প্ল্যাটফর্মের দৌলতে জাপান, কোরিয়ার ওয়েব সিরিজ়ও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সেই সব দেখেশুনেই কোরিয়ানদের মতো জীবনযাপন, সৌন্দর্য নিয়ে উৎসাহও ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কী মাখেন কোরিয়ানরা, কী-ই বা খান, জানতে চান অনেকেই। সমাজমাধ্যম, রূপচর্চা শিল্পীদের দৌলতে জানা যায়, কোরিয়ানরা ত্বকের যত্নে প্রাকৃতিক উপাদান যেমন বেছে নেন, তেমনই তাঁদের খাদ্যাভ্যাসও থাকে এমন পেলব ত্বকের নেপথ্যে। ত্বকের অন্যতম উপাদানই হল কোলাজেন নামক প্রোটিন। বয়সকালে বা সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগনি রশ্মির প্রভাবে প্রোটিনের উৎপাদন কমে গেলেই ত্বক তার স্থিতিস্থাপকতা হারায়। শিথিল হয়ে যায়, বলিরেখা পড়ে।
আরও পড়ুন:
কোরিয়ান রূপচর্চায় সব সময়েই গুরুত্ব পায় কোলাজেন নামক প্রোটিন। জেনে নিন কোন উপায়ে ত্বকে কোলাজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে পারবেন।
মুরগির হাড় সেদ্ধ করা জল: ত্বকে কোলাজেন শুধু রূপচর্চায় বাড়ে না, এর সঙ্গে খাদ্যাভ্যাসেরও গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকে। হাড়ের ব্রথ ত্বকে কোলাজেন জোগাতে সাহায্য করে। হাড়যুক্ত মুরগির মাংস, ২ টেবিল চামচ সাদা ভিনিগার, আদা, রসুন এবং সম্ভব হলে কোরিয়ান জিনসেং দিয়ে রান্না করে নিন। জিনিসটি স্টু-এর মতো হবে। এই খাবার শুধু শরীর ভাল রাখবে না, ত্বকের জেল্লাও বৃদ্ধি করবে।
বলিরেখা দূর করতে মাস্ক: কোরিয়ানরা সৌন্দর্য ধরে রাখতে এবং শরীর ভাল রাখতে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, ভিটামিন সমৃদ্ধ সামুদ্রিক শৈবাল ‘মিওক’-এর স্যুপ খান। এই শৈবাল দিয়ে মাস্কও বানিয়ে নিতে পারেন। বিশেষত বলিরেখা দূর করতে তা কার্যকর হবে। মিওক এখন অনলাইনে মেলে। ২ টেবিল চামচ মিওক গুঁড়োর সঙ্গে ১ টেবিল চামচ অ্যালো ভেরা জেল, ৩-৪ ফোঁটা রোজ়হিপ মিশিয়ে মাস্ক বানিয়ে নিন। মুখ পরিষ্কার করে সেটি ১০-১৫ মিনিট মেখে, মুখ ধুয়ে নিন। তবে মিওক প্রথম বার ব্যবহারের আগে প্যাচ টেস্ট করা জরুরি।
চালের জলের টোনার: কোরিয়ানদের রূপচর্চার অন্যতম উপাদানই হল চালের জল। যার মধ্যে থাকা অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, অ্যামাইনো অ্যাসিড, ভিটামিন বি, ই ত্বক ভাল রাখতে, কোলাজেনের উৎপাদন ঠিক রাখতে সাহায্য করে। চাল ধুয়ে তা জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। কয়েক ঘণ্টা চাল ভিজিয়ে সেই জল ছেঁকে স্প্রে বোতলে ভরে ফ্রিজে রাখুন। ২-৩ দিন সেই জলটি টোনার হিসাবে ব্যবহার করা যাবে।
স্মুদি: কোলাজেন মানবদেহে প্রাকৃতিক ভাবেই তৈরি হলেও, এই প্রোটিনের উৎপাদন বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কমে যায়। যার ফলে শারীরিক ক্ষমতা কমতে থাকে। কমে ত্বকের স্বাভাবিক ঔজ্জ্বল্যও। কোলাজেন বৃদ্ধির সহায়ক হতে পারে বিশেষ স্মুদি। ১ কাপ বেদানার রসের সঙ্গে আধ কাপ অ্যাভোকাডো (স্বাস্থ্যকর ফ্যাট এবং ভিটামিনে ই-তে পূর্ণ), ১ টেবিল চামচ ভিজিয়ে রাখা তিসি অথবা চিয়া বীজ, একমুঠো ব্লুবেরি, ১ টেবিল চামচ কোলাজেন পাউডার, ১ চা চামচ মধু দিয়ে মিক্সারে ঘুরিয়ে স্মুদি বানিয়ে নিন। কোলাজেনের মাত্রা বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে এটি। জলখাবারে এই স্মুদি খেলে ত্বকের জেল্লা বৃদ্ধির পাশাপাশি শরীরও প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে।
অন্যান্য উপকরণ: হায়ালুরোনিক অ্যাসিড, জিনসেং, ভিটামিন সি— এই উপকরণগুলিও বলিরেখা দূর করে ত্বক টানটান করতে সাহায্য করবে। দৈনন্দিন রূপচর্চায় রাখতে পারেন এগুলিও।
প্রতিবেদনটির সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা। নতুন কোনও মাস্ক ব্যবহারের আগে প্যাচ টেস্ট করা জরুরি। কোনও খাবার যতই পুষ্টিকর হোক না কেন, সেগুলি প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় যুক্ত করার আগে চিকিৎসক অথবা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।