Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Diwali 2020

শুধু বাজির ধোঁয়াই নয়, আগুন থেকেও বিপদ আসে

বাজি জ্বালানোর ফলে বাতাসের বিষ ফুসফুসের মারাত্মক ক্ষতি ডেকে আনার পাশাপাশি আগুনে পুড়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া মানুষের সংখ্যাও এক ধাক্কায় অনেক বেড়ে যায়।

মারাত্মক ক্ষতি ডেকে আনতে পারে বাজি।

মারাত্মক ক্ষতি ডেকে আনতে পারে বাজি।

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২০ ১৭:১৯
Share: Save:

আইন যেমন আছে, আইনের ফাঁকও আছে। শুভবুদ্ধির অভাব যাঁদের, তাঁরা প্রতিনিয়ত আইনের ফাঁক খুঁজে বার করার চেষ্টা করেন। করোনা অতিমারিতে পরিবর্তিত জীবন যাপনে কোভিড আক্রান্তদের কথা চিন্তা করে সব রকমের বাজি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু আদালতের মানা অগ্রাহ্য করে চলছে ধোঁয়া সৃষ্টিকারী আলো ও শব্দবাজি বিক্রি।

বাজি জ্বালানোর ফলে বাতাসের বিষ ফুসফুসের মারাত্মক ক্ষতি ডেকে আনার পাশাপাশি আগুনে পুড়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া মানুষের সংখ্যাও এক ধাক্কায় অনেক বেড়ে যায় বলে জানালেন কনসালট্যান্ট প্লাস্টিক অ্যান্ড রিকনস্ট্রাকটিভ সার্জেন মণীশমুকুল ঘোষ। প্রতি বছরই কালীপুজোর আগে পরে মিলিয়ে প্লাস্টিক সার্জেনরা অতিরিক্ত ব্যস্ত হয়ে পড়েন বাজির আগুনে পোড়া রোগীদের চিকিৎসা করতে। কোভিড আবহে বেশির ভাগ হাসপাতালে শয্যা না থাকায় আগুনে পোড়া রোগীদের কষ্ট ও হয়রানি বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করলেন মণীশমুকুল। বেশির ভাগ মানুষ আদালতের নির্দেশ মেনে চলবে, আশা করার পাশাপাশি এই আশঙ্কাও আছে, অনেক মানুষ আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বাজি জ্বালাবেন। তাঁদেরই বিপদে পড়ার ঝুঁকি অনেক বেশি, বললেন মণীশমুকুল।

বাজি না পোড়ালেও দীপাবলিতে বাতি বা প্রদীপের আগুন থেকেও সাবধানে থাকা উচিত। সাবধানতা নিলেও আচমকা বিপদ আসতে পারে। সেক্ষেত্রে ঠান্ডা মাথায় তার মোকাবিলা করতে হবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাড়ির ছোটরা টুনি বা বাতি জ্বালায়। এক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে বড়দের থাকা উচিত। ঘরের লাগোয়া ঘেরা বারান্দায় প্রদীপ বা মোমবাতি জ্বালালে বা জানলায় বাতি লাগালে খেয়াল রাখবেন, পর্দা বা অন্য কোনও দাহ্যবস্তু যেন প্রদীপ বা বাতির কাছাকাছি না থাকে। টুনি বাল্ব লাগানোর সময়েও সাবধানতা নেওয়া দরকার। ইলেকট্রিক শক লাগা থেকে বাচ্চাদের সাবধানে রাখতে হবে। কালীপুজোর সময় প্রায় প্রত্যেক প্লাসটিক সার্জেনের রোগীর সংখ্যা বেড়ে তিনগুণেরও বেশি হয়ে যায়, বললেন মণীশমুকুল।

দীপাবলিতে বাতি বা প্রদীপের আগুন থেকেও সাবধানে থাকা উচিত।

আরও পড়ুন: ‘টিকার মতোই শুধু আইন বাঁচায় না, তার প্রয়োগ বাঁচায়’​

এই অতিমারির সময় বাজি নিষিদ্ধ হলেও প্রদীপ বা বাতির আলোর ব্যাপারে সাবধানতা নিতে হবে। বাড়ির কাছাকাছি বাজি জ্বালানো হলে দূষিত ধোঁয়ার হাত এড়াতে ঘরের দরজা-জানলা ভাল করে বন্ধ রাখুন। বাড়িতে যদি কোভিড-১৯ থেকে সেরে উঠেছেন এমন কেউ থাকেন কিংবা এক্সট্রিম এজ গ্রুপ অর্থাৎ বাচ্চা বা বয়স্ক মানুষ থাকেন কিংবা হাঁপানি অথবা সিওপিডি আক্রান্ত কোনও পরিজন থাকেন, তবে অবশ্যই ধোঁয়া-ধুলোর হাত থেকে তাঁদের রক্ষা করা উচিত বললেন পালমোনলজিস্ট সৌম্য দাস। যাঁরা ফুসফুসের ক্রনিক অসুখ সিওপিডি বা আইএলডিতে ভুগছেন, তাঁদের জন্য আলোর বাজির ধোঁয়া অত্যন্ত বিপজ্জনক। আচমকা হাঁপানির অ্যাটাক অথবা শ্বাসকষ্ট শুরু হতে পারে। ছোটরা সাপ বাজি জ্বালাতে খুব পছন্দ করে। এর ধোঁয়া থেকে শ্বাসনালীর অত্যন্ত ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি থাকে। বাচ্চাদের শ্বাসনালী যথেষ্ট প্রশস্ত না হওয়ায় অল্প প্রদাহ হলেই শ্বাসকষ্টের সম্ভাবনা থাকে। তাই বাচ্চাদের ধুপ ধুনোর ধোঁয়া ও ধুলো থেকে দূরে রাখা উচিত, বললেন সৌম্য দাস। তিনি এও জানালেন যে, আগুনের মতোই মারাত্মক আগুনের থেকে উৎপাদিত কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস। তাই আগুন লাগলে দরজা জানলা বন্ধ করে দেবেন না। আর ধোঁয়ার মধ্যে আটকে থাকলে শ্বাসকষ্ট মারাত্মক অবস্থায় পৌঁছে যেতে পারে।

চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ বিবেক দত্ত জানালেন, অল ইন্ডিয়া অপথ্যালমোলজিক্যাল সোসাইটির সমীক্ষায় জানা গেছে যে, কালীপুজো ও দীপাবলির সময় আগে যে হারে চোখের সমস্যা হত ইদানীং সচেতনতা বাড়ায় তা কিছুটা কমলেও বাজির আগুন বা ইলেকট্রিক শকে চোখের ক্ষতি হওয়ার ঘটনা নেহাতই কম নয়। তাই চোখের ব্যাপারেও কিছুটা সতর্কতা মেনে চলা উচিত। প্রদীপ বা আগুনের হলকা ও ধোঁয়া থেকে চোখ বাঁচাতে হবে। চশমা বা সানগ্লাস পরে চোখের সমস্যা কিছুটা প্রতিরোধ করা যায়। ধোঁয়া লেগে চোখ জ্বালা করলে ঠান্ডা জল দিয়ে চোখ ধুয়ে নিতে হবে। প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শে আই ড্রপ লাগানো যেতে পারে।

টুনি বাল্ব লাগানোর সময়েও সাবধানতা নেওয়া দরকার।

আরও পড়ুন: ক্যানসার সচেতনতা আটকে স্রেফ উদ্‌যাপনেই

মণীশমুকুল ঘোষ জানালেন যে, আগুনে পোড়ার প্রাথমিক চিকিৎসা ঠান্ডা জল। আগুনের ফুলকি হাতে পায়ে লাগলে যত শীঘ্র সম্ভব পোড়া জায়গা জলে ডুবিয়ে রাখা উচিত। ডাক্তারি মতে, আগুনে পোড়ার পাঁচ সেকেন্ডের মধ্যে ঠান্ডা জলে পোড়া অংশ ডুবিয়ে রাখলে উপকার হয়। টানা চার পাঁচ মিনিট জলে পোড়া অংশ ডুবিয়ে রাখা উচিত। না হলে কলের জলের নিচে পুড়ে যাওয়া হাত বা পা রেখে দিতে হবে। এর ফলে তাপমাত্রা কমবে বলে জ্বালা-যন্ত্রণা কমার পাশাপাশি ত্বকের বেশি ভিতর পর্যন্ত পুড়ে যাওয়া আটকানো যাবে। বেশি পুড়ে গেলে অবশ্যই কাছাকাছি চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে। শরীরের দশ শতাংশের বেশি পুড়ে গেলে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি করা উচিত। আমাদের শরীরের একটা হাত দশ শতাংশ ধরে হিসেব করতে হবে। প্রদীপ বা বাতির কাছাকাছি পর্দা বা গ্যাস সিলিন্ডার যেন না থাকে, খেয়াল রাখতে হবে। ছাদে খোলা জায়গায় বাতি জ্বালালে ভাল হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE