Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
WORKING WOMEN

ঘরে-বাইরে সমান চাপ? কর্মরত মহিলাদের এগুলো মানতেই হবে

সংসার ও চাকরি উভয় সামলাতে যতই ব্যালান্সের দৌড়ে এগিয়ে থাকুন না কেন, নিজের শরীর-স্বাস্থ্যের বেলায় নজরের ভাগ কম পড়ে যায়।

সংসার ও চাকরি উভয় সামলানোর ব্যালান্সে খেয়াল রাখুন নিজের দিকেও। ছবি: শাটারস্টক।

সংসার ও চাকরি উভয় সামলানোর ব্যালান্সে খেয়াল রাখুন নিজের দিকেও। ছবি: শাটারস্টক।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৯ ১০:৪০
Share: Save:

সংসারের সব খুঁটিনাটিতে থাকবে খেয়াল।কড়া নজর রাখতে হবে সন্তানের পড়াশোনায়। শ্বশুর-শাশুড়ির যত্ন থেকে শুরু করে স্বামীর প্রতি দায়িত্ব, পাশে থাকা এ সব তো রয়েছেই। মোট কথা, পরিবারকে এতটা ছাতার তলায় রেখে সকলকে ভালবেসে সুখী করার দায়ভার অনেকটাই ‘তাঁর’।

এর মধ্যেই রয়েছে কর্মক্ষেত্রে সময় মতো পৌঁছনোর তাড়না। সেখানেও কর্পোরেট মিটিং নইলে সরকারি ফাইল। টার্গেট, অ্যাচিভমেন্টের দৌড়। ঘরে-বাইরে সামলাতে গিয়ে নিজের দিকে তাকানোর ফুরসত কই? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমীক্ষায় প্রতি তিনজনে একজন কর্মরত মহিলার সমস্যা মোটামুটি একই।

সংসার ও চাকরি উভয় সামলাতে যতই ব্যালান্সের দৌড়ে এগিয়ে থাকুন না কেন, নিজের শরীর-স্বাস্থ্যের বেলায় নজরের ভাগ কম পড়ে যায়। এই প্রসঙ্গে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ভাস্কর কুমার দাসের মতে, ‘‘এ কথা আমাদের দেশ ও বিদেশ, উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। এমনকি, সম্প্রতি এক ভারতীয় সংস্থা সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছেন, ৭২টি সংস্থার মহিলা কর্মচারীদের মধ্যেশতকরা ৬৮ শতাংশ মহিলাই লাইফস্টাইলজনিত রোগের শিকার। কেউ ভুগছেন ওবেসিটিতে, কারও আবার নিত্যসঙ্গী ডিপ্রেশন। আর বেশির ভাগই ডায়াবিটিস-সহ নানা ক্রনিক রোগের শিকার।’’

আরও পড়ুন: খাওয়ার আগে এই খাবারগুলি গরম করে খান? এখনই সতর্ক হোন

অথচ চিকিৎসকদের মতে, সামান্য সচেতনতা, অভ্যাস বদল এই চেনা ছবিটা বদলে দিতে পারে। শুধু চাই নিজের জন্য সামান্য সময় বার করা ওনিজেকে যত্ন করার মনটা। পুষ্টিবিদ সুমেধা সিংহ জানালেন এমন কিছু টিপ্‌স যা মেনে চললে ঘরে-বাইরে সামাল দেওয়া মেয়েরাও ভাল থাকবেন।

ব্রাউন ব্রেডেই আস্থা রাখুন।

দিনের শুরুই শেষ কথা

দিনের শুরুটা যদি স্বাস্থ্যকর না হয় তবে সারা দিন চেষ্টা করেও শরীরকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন না। গ্রিন টি আর হালকা মিষ্টি বা নোনতা বিস্কুট দিয়ে দিন শুরু করুন। তার পর ব্রাউন ব্রেড বা ওটসএবং অন্তত একটা কোনও মরসুমি ফল রাখুন সকালের খাদ্য তালিকায়। হাতের কাজ সারতে সারতেই সেরে নিন ফল খাওয়ার পর্ব। অফিসদৌড়নোর আগে কোনওদিন পোহা, চিঁড়ে বা ডালিয়াও খেতে পারেন। কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার সকালের দিকেই খেয়ে নিন। তবে চেষ্টা করুন রুটির উপর জোর দিতে। ভাত জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন। অফিসে জোর দিন প্রোটিন আর ফলের উপর। ডায়েটে বেশি করে প্রোটিন রাখুন। যতটা পারেন এড়িয়ে চলুন কার্বোহাইড্রেট। বরং সামান্য ফ্যাট রাখুন সে তালিকায়।

জলই আসল দাওয়াই

বিভিন্ন কেস স্টাডিতে দেখা গিয়েছে, যাঁরা অফিসে বসে কাজ করেন তাঁরা জল কম খান। এসি-তে বসে থাকার কারণে তেষ্টাও কম পায়। কিন্তু আমাদের আবহাওয়ায় এক জন সুস্থ মানুষের দিনে তিন-চার লিটার জল খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। তেমন কোনও অসুখবিসুখ না থাকলে সেটাই মেনে চলুন, নইলে চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের কাছ থেকে জেনে নিন আপনার শরীর অনুযায়ী, জলের চাহিদা কতটুকু।

দিনের শুরুতে লেবু মধু দিয়ে ঈষদুষ্ণ জল খাওয়া যেতে পারে। শরীর ডিটক্স করার জন্যে এটি সবচেয়ে কার্যকরী দাওয়াই। অত সময় না পেলে অন্তত গরম জলে লেবু চিপে খান, দিনে দু’বার। আর অফিস ডেস্কে সারা ক্ষণই হাতের কছে মজুত রাখুন জলের বোতল। নির্দিষ্ট সময় অন্তর জল খান।

আরও পড়ুন: কলকাতায় জন্ডিস আতঙ্ক, কী কী লক্ষণে সতর্ক হবেন, অসুখ এড়াবেন কী করে?

বাদ দিন এইগুলি

খিদে পেলে যখন তখন তেলেভাজা, কলিগের সঙ্গে আড্ডার সময়ে বারংবার দুধ চা ও কফি খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করুন। বিশেষ করে এই গরমে কোল্ড টি বা কোল্ড কফি বেশি ক্ষতিকর। কথায় কথায় ঠান্ডা পানীয়তে ডুব একেবারেই নয়। পরিবর্তে গ্রিন টি ও ডাবের জল খাওয়ার অভ্যেস করুন। দিনে তিনবার চলতেই পারেগ্রিন টি। বাদ দিন মিষ্টি ও প্যাকেট বন্দি জাঙ্কফুডও।

বেছে নিন এই বিকল্প

বরং অল্পস্বল্প খিদেয় বাড়িতে পাতা টক দই খেতে পারেন। লাঞ্চও করতে হবে হালকা। সকালে যদি ব্রাউন ব্রেড খেয়ে থাকেন তাহলে লাঞ্চে ওটস খেতে পারেন। তবে রুটি খাওয়াই ভাল। ভাত ও রুটিতে প্রায় একই পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট থাকলেও রুটির ফলে তৈরি হওয়া গ্লাইকোজেন তাড়াতাড়ি গলে। যা ভাতের বেলায় সম্ভব নয়। তাই একান্তই ভাত খেলে সেটা ব্রাউন রাইস হলেই ভাল। সঙ্গে সব্জি আর মাছ ও চিকেন।

হাঁটাচলা করুন

ভারতীয় মহিলাদের কোমরের অংশ ভারী হয়। সারাদিন যাঁদের চেয়ারে বসে কাজ তাঁদের বিপদ আরও বেশি। একভাবে বসে থাকলে নানা রকম রোগ হতে পারে। তাই যতটা পারবেন ঘোরাফেরা করুন। মাঝে মধ্যে উঠে অফিস চত্বরেই হেঁটে নিন। লিফ্‌ট নয়, বরং সিঁড়ি ব্যবহার করুন। দরকারে অদরকারে চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ মিনিট অন্তর চেয়ার থেকে উঠুন। মিনিট পাঁচের পায়চারি আপনার সারা দিনের কাজে বিঘ্ন ঘটায় না, ওটা মানসিক সমস্যা বই আর কিছু নয়। তাই হাঁটাচলা করুন সময় পেলেই।

বাড়ি ফেরার সময়টাও যতটা পারবেন হেঁটে নিন। মর্নিং ওয়াকের সময় না পেলে সন্ধ্যাতেও হাঁটতে পারেন।

আরও পড়ুন: ডেটিং অ্যাপ টিন্ডারের এ বার রূপবদল, আসছে নয়া ফিচার্স

অফিস ডেস্কে সারা ক্ষণই হাতের কছে মজুত রাখুন জলের বোতল।

ঘুম কম হলে চলবে না

দেহঘড়িটাকে ঠিক করে কাজ করাতে হলে শুধু ভাল খাবার খেলেই চলবে না। চাই সময় মতো ঘুমও। প্রতিদিন নিয়ম করে একই সময়ে শুতে যেতে হবে। নিরুপদ্রব ভাবে সাত ঘণ্টা ঘুমোতেই হবে। চেষ্টা করুন সব কাজ সামলে সেটুকু সময় হাতে রাখতে।

শরীরচর্চা

খুব সামান্য হলেও শরীরচর্চা জরুরি। বুদ্ধি করে সেই সময় বার করুন। অনেকের অফিসে জিম থাকে। সেটা ব্যবহার করতে পারেন। হাড় মজবুত রাখতে শরীরচর্চা তিরিশের পরে একান্ত জরুরি। অফিস থেকে ফেরার পথটা কিছুটা হেঁটে বাস-ট্রেন ধরতে পারেন। দিনে কুড়ি মিনিট হলেও ওয়ার্ম আপ ও স্ট্রেচিং বা যোগ অভ্যাস করুন।

চিকিৎসকের পরামর্শ

তিন মাসে একবার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। মেয়েদের নানা সময়ে নানা ওষুধ দরকার হয়। আয়রন, ক্যালশিয়ামের সমস্যাও হয় পুরুষের থেকে বেশি। অনেক সময় হরমোনের তারতম্যও শরীরে নানা জটিলতা তৈরি করে। এই জটিলতা থেকে মুক্ত হতেই জরুরি চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকা। তা ছাড়া প্রতি দিনের ঝক্কি সামলাতে গিয়ে কোন অসুখ কোথায় ঘাপটি মেরে রয়েছে তা জানতেও এই পরামর্শ নেওয়া খুব জরুরি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE