Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
aids

শুধু যৌন স‌ংসর্গই নয়, এডস ছড়াতে পারে এ সব কারণেও!

বীর্যের মাধ্যমে সংক্রমিত হয় বলেই এই অসুখকে ‘সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজ’ হিসেবে গণ্য করা হয়।

বিশ্বে এডস আক্রান্ত দেশগুলির মধ্যে ভারত তৃতীয় স্থানে। ছবি: শাটারস্টক।

বিশ্বে এডস আক্রান্ত দেশগুলির মধ্যে ভারত তৃতীয় স্থানে। ছবি: শাটারস্টক।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৯ ১২:৩৬
Share: Save:

কুল-শীল-মান খুব একটা রেয়াত করে না এই অসুখ। বিত্তবান বা নিম্নবিত্তের ফারাককেও তুড়ি মেরে ওড়ায় সে। উন্নত দেশ হোক বা তৃতীয় বিশ্ব— এডসের থাবা থেকে বাদ পড়ে না কেউই। জীবন-মরণ সমস্যা তো বটেই, তার উপর রয়েছে নানা সামাজিক ছুঁতমার্গ, পুরনো সংস্কার। এর নাম অ্যাকোয়ার্ড ইমিউনো ডেফিশিয়েন্সি সিনড্রোম। ছোট করে বললে, ‘এডস’। তবে তফাত গড়ে দেয় অসুখকে আয়ত্তে আনার পদ্ধতি। উন্নত দেশগুলি এই অসুখের সঙ্গে যুঝতে পারলেও অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে এখনও এই অসুখের প্রকোপ বেশি। ভারতের হিসেবটাও ভয় ধরানোর মতোই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ‘হু’-এর পরিসংখ্যানে এডস আক্রান্ত দেশগুলির মধ্যে ভারত তৃতীয় স্থানে!

এডসের জন্য দায়ী ‘হিউম্যান ইমিউনো ডেফিশিয়েন্সি ভাইরাস’ (এইচআইভি) নামের রেট্রোভাইরাসটি। মানুষের রক্ত ও অন্যান্য দেহরসেই একমাত্র বেঁচে থাকে এই ভাইরাস। রোগীর দেহ থেকে অন্যের শরীরে ছড়ায় রক্ত ও বীর্যের মাধ্যমে। বীর্যের মাধ্যমে সংক্রমিত হয় বলেই এই অসুখকে ‘সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজ’ হিসেবে গণ্য করা হয়।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামীর মতে, ‘‘শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেওয়া এর প্রধান কাজ। দিনের পর দিন এর ফলে দেহে প্রতিরোধহীনতা বাড়তে থাকে। একটা সময় সাধারণ সর্দি-কাশিকেও আটকাতে পারে না শরীর। ফলে ‘অ্যাকোয়ার্ড ইমিউনো ডেফিশিয়েন্সি সিনড্রোম’ বা এডসের প্রভাবে মৃত্যু অবধারিত হয়ে ওঠে।’’ বর্তমান ভারতে এইচআইভি আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অন্তত ৪০ লক্ষ। ‘ইউএনএডস’-এর ‘সাসটেন্ড ডেভলপমেন্ট গোল’ (এসডিজি) হল ২০৩০ সালের মধ্যে এডসে নিশ্চিহ্ন করা।

আরও পড়ুন: শীতে ত্বক শুষ্ক হয়ে চুলকানি থেকে বাঁচতে এখন থেকেই মেনে চলুন এ সব

ইউএনএডস-এর ‘সাসটেন্ড ডেভলপমেন্ট গোল’ (এসডিজি) হল ২০৩০ সালের মধ্যে এডসে নিশ্চিহ্ন করা।

কোন কোন বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে—

বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা জরুরি। সঙ্গীর যে কোনও এক জনও যদি এডসের বাহক হয়, তবে যৌন সম্পর্কের ফলে অপর জনের শরীরে সহজেই প্রবেশ করবে এই রেট্রোভাইরাস। প্রতি বার ইঞ্জেকশন নেওয়ার সময় নতুন সিরিঞ্জ ও সূচ ব্যবহার করুন। এডস আক্রান্ত রোগীর শরীরে ফোটানো সূচ থেকেও এই অসুখ সংক্রমিত হয়। অসুখ আক্রান্ত প্রসূতির সন্তানের শরীরেও এই অসুখ দানা বাঁধতে পারে। আধুনিক কিছু ওষুধে এই রোগে রোগীর জীবন কিছু দিন বাড়ানো গেলেও সে সব চিকিৎসা পদ্ধতি মোটেও মধ্যবিত্তের আয়ত্তে নেই। সাধারণত ঝুঁকিপূর্ণ যৌন জীবন রয়েছে এমন পেশাদারদের ক্ষেত্রে এই অসুখের প্রভাব বেশি থাকে। তবে মূল নিয়মগুলি না মানলে যে কোনও মানুষের শরীরেই বাসা বাঁধতে পারে এই রোগের বীজ।

এইচআইভি এমন এক সংক্রমণ, যা শরীরে চুপিসাড়ে বাড়তে থাকে। এমনকি উপসর্গগুলিও চিহ্নিত করা যায় না সহজে। চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামীর মতে, “বেশির ভাগ রোগীই অজ্ঞতাবশত এই রোগকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যান। অথচ প্রাথমিক ভাবে ধরা পড়লে এখন কম খরচের চিকিৎসাতেই এইচআইভি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এই রোগের সংক্রমণের দু'-তিন মাসের মধ্যে কিছু প্রাথমিক লক্ষণ ধরা পড়ে। সে সব খেয়াল করেও সতর্ক হওয়া যায়।’’

আরও পড়ুন: রসুন কতটা খাওয়া উচিত

কেমন সে সব প্রাথমিক লক্ষণ?

এই অসুখে ঘন ঘন জ্বর হতে থাকে। এক-দেড় মাস ধরে একটানা জ্বর হলে সচেতন হোন। তবে স্রেফ জ্বরই নয়, এর সঙ্গে থাকে আরও কিছু উপসর্গ। জ্বরের পাশাপাশি গলায় অস্বাভাবিক ব্যথা হয়। খাবার খেতে ও গিলতে সমস্যা হয়। ক্রোয়েশিয়ার সংস্থা ‘অ্যাক্টা ডার্মাটোভেনরল’-এর সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, প্রায় ৮৮ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে প্রথম তিন সপ্তাহের মধ্যেই গলায়, মাথায় র‌্যাশ দেখা দেয়। তীব্র প্রদাহ হতে শুরু করে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে ঘাম। ঘুমের মধ্যেও তীব্র ঘাম হয়। শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে শুরু করে বলে অল্পেই বমি ভাব, পেটের সমস্যা দেখা যায়।

তবে সামাজিক ট্যাবু সরিয়ে অসুখ থেকে দূরে থাকা ও অসুখ হলে তা যত দ্রুত সম্ভব নির্ণয় করে চিকিৎসায় অংশ নেওয়াই এই রোগের প্রভাব কমাতে পারে বলে মত চিকিৎসক মহলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

AIDS এডস Health Tips Fitness Tips
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE