শরীরে মেদ জমেছে। মাঠে নেমে আর আগের মতো খেলতেও পারেন না। তাঁর ফিটনেস নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বহু বার। দেশের অন্যতম সেরা প্রতিভাবান ব্যাটার হিসাবে উঠে এসেছিলেন যে পৃথ্বী শ, তিনি আইপিএলে দলও পাননি। বাদ পড়েছেন মুম্বইয়ের বিজয় হজারে ও রঞ্জি দল থেকেও। একজন ক্রিকেটারের যে নিয়ম ও শৃঙ্খলা মেনে চলা উচিত, তার কোনওটিই নাকি মানছিলেন না বছর পঁচিশের এই ক্রিকেটার, এমনই অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে। এক সময়ের বন্ধু ও সহকর্মী পৃথ্বীকে তাই কিছু নিয়ম মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন মুম্বই কিংসের শশাঙ্ক সিংহ।
শশাঙ্ক সিংহ মুম্বই দলে পৃথ্বী শ-র সঙ্গে খেলেছেন। তাঁর বিশ্বাস, ভবিষ্যতে ভারতের অন্যতম সেরা ওপেনার হওয়ার ক্ষমতা রয়েছে পৃথ্বীর। কেবল সঠিক নিয়ম মেনে না চলার কারণেই তাঁর এই দশা। পৃথ্বীকে আবার আগের অবস্থায় ফিরতে হলে কী কী নিয়ম মানতে হবে তার উপায়ও বাতলে দিয়েছেন শশাঙ্ক। তাঁর পরামর্শ, রাত ১০টার মধ্যে ঘুমোনো, ডায়েট মেনে চলা ও কঠোর পরিশ্রমই পৃথ্বীকে ফিরিয়ে আনতে পারবে। রাতভর পার্টি করা, বন্ধুদের সঙ্গে হুল্লোড়, যা খুশি খেয়ে ফেলার প্রবণতা ছাড়তে হবে তাঁকে। সেই সঙ্গে নিয়ম মেনে শরীরচর্চাও করতে হবে। খেলা বলে নয়, জীবনের যে কোনও ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা ভীষণ জরুরি। এমনটাই মনে করেন শশাঙ্ক। শরীরচর্চা থেকে ডায়েট— সবটাই ধারাবাহিক ভাবে হওয়া জরুরি। শশাঙ্কের মতে, একটা ভাল অভ্যাস গড়ে তুলতে সময় লাগে। কিন্তু এক বার অভ্যাস তৈরি হয়ে গেলে প্রাপ্তি ঘটে অনেক কিছু।
পৃথ্বী শ-র মতো ক্রিকেটারদের খেলার মাঠে সেরাটা দিতে হলে রোজের জীবনে নিয়ম ও শৃঙ্খলা মেনে চলতেই হবে। এমনটাই মত যোগাসন প্রশিক্ষক অনুপ আচার্যের। তিনি বলেন, “ক্যালোরি মেপে খাওয়া, খেলার অনুশীলনের পাশাপাশি সপ্তাহের সাত দিন নিয়ম মেনে শরীরচর্চা করা এবং পর্যাপ্ত ঘুম— এই কয়েকটি নিয়ম মেনে চললেই সেরা পারফরম্যান্স দেওয়া সম্ভব।”
আরও পড়ুন:
কী কী নিয়ম মেনে চলা উচিত?
প্রথমত, নিয়ম মেনে খেতে হবে। অনুপবাবুর কথায়, সাধারণ মানুষের প্রতি দিনে যে ক্যালোরি লাগে, একজন ক্রিকেটারের তার চেয়ে একটু বেশিই লাগে। দিনে অন্তত ২৪০০-৩০০০ কিলো ক্যালোরি প্রয়োজন। সেখানে কার্বোহাইড্রেট লাগবে ৫৫-৬৫ শতাংশ, প্রোটিন ১৫-২৫ শতাংশ, ফ্যাট ২০-৩৫ শতাংশ। ক্যালোরি যদি এর চেয়ে বেশি ঢোকে শরীরে, তা হলে তা মেদ হয়ে জমতে থাকবে।
দ্বিতীয়ত, শরীরচর্চা করতে হবে ৪-২-১ পদ্ধতিতে। অর্থাৎ সপ্তাহের প্রথম চার দিন স্ট্রেংথ ট্রেনিং, পরের ২ দিন কার্ডিয়ো এবং শেষ দিন মুভমেন্ট এক্সারসাইজ়। খেলার অনুশীলনের পাশাপাশি নিয়মিত এই পদ্ধতিতে শরীরচর্চাও করতে হবে।
প্রশিক্ষক জানাচ্ছেন, পৃথ্বী রাত জেগে পার্টি করে করতেন। সেখানে নিশ্চয়ই খাওয়াদাওয়ায় সংযম থাকত না। যদি এক রাতে ৫০০০-৬০০০ কিলো ক্যালোরি শরীরে ঢোকে, এবং তার পরে রাতভর ঘুমও না হয়, তা হলে পেশির শক্তি অনেক কমে যাবে। তা ছাড়া ওয়াইন বা বিয়ার খেলে পেশি শিথিল হবে। পরের দিন আর অনুশীলন করতেই পারবেন না। এত বেশি ক্যালোরি জমা হবে শরীরে, যে মাঠে খেলতে নামলে পেশির ‘মুভমেন্ট’ ঠিকমতো হবেই না। হয় ব্যাট করতেই পারবেন না, না হলে ফিল্ডিং করতে সমস্যা হবে। সে কারণেই ক্রিকেটারদের নিয়মের মধ্যেই থাকতে হয়। পৃথ্বী যদি আবার আগের মতো শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবন কাটান, তা হলে তাঁর ফিরে আসতে কোনও সমস্যাই হবে না।