Advertisement
E-Paper

মেটাবলিজম বাড়িয়ে এ ভাবেই ঝরিয়ে ফেলুন বাড়তি মেদ

সুজাতা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৬:৫৪
শারীরিক কসরতে মেটাবলিজম বাড়িয়ে হয়ে উঠুন ছিপছিপে। ছবি: শাটারস্টক।

শারীরিক কসরতে মেটাবলিজম বাড়িয়ে হয়ে উঠুন ছিপছিপে। ছবি: শাটারস্টক।

কিছু মানুষ জল খেয়েও মোটা হন৷ কারও আবার চর্ব–চোষ্য খেয়েও ওজন বাড়ে না৷ শরীরের বিপাক ক্রিয়ার হার কম হলেই এই তারতম্য ঘটে৷ তবে সুখের কথা, বিজ্ঞানীদের কাছে এমন কিছু অস্ত্র আছে যার সাহায্যে তাঁরা ঢিলেঢালা বিপাক ক্রিয়াকে চাঙ্গা করে দিতে পারেন৷

তার পর তা বজায় রেখে চলতে পারলে আর ওজন নিয়ে ভাবতে হয় না৷ তবে যদি কোনও অসুখ–বিসুখের কারণে বিপাক ক্রিয়া কমে থাকে, একই সঙ্গে সেই অসুখের চিকিৎসাও করতে হয়৷

অস্ত্র বলতে কয়েকটি সরল পন্থা— যাকে জীবনযাপনের অঙ্গ করে নিলে যে কোনও বয়সে স্লিম ও ফিট থাকা যায়৷ হ্যাঁ, মধ্যবয়সেও৷ যখন যৌন হরমোনের অভাব ও এজিং প্রসেসের দৌলতে সারা শরীর, বিশেষ করে পেটে চর্বি জমতে থাকে, বাড়ে হৃদরোগ, রক্তচাপ, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স, ডায়াবিটিস, হাই কোলেস্টেরলের আশঙ্কা— তখনও এই সব পন্থা কাজ করে, যাদের বলে মেটাবলিজম এনহান্সার। সেই তালিকায় আছে কয়েকটি খাবার, দু’–চারটে নিয়ম, ঘুম, স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট ও কিছু ব্যায়াম।

আরও পড়ুন

গলায় কাঁটা বিঁধে আছে? দ্রুত কাঁটা সরান এই সব উপায়ে

মেটাবলিজম বাড়াতে শীতে বিটের রস খান নিয়মিত। ছবি: পিক্সঅ্যাবে।

খেয়ে বাড়ান বিপাক ক্রিয়া

খাওয়া খুব কমালে বিপাক ক্রিয়া কমে যায়৷ শরীরকে শক্তির জোগান দিতে তখন পেশি ক্ষয়ে যেতে শুরু করে৷ পেশির ক্ষয় মানে শুয়ে–বসে থাকার সময় যে ক্যালোরি খরচ হয়, তা কমে যাওয়া। ফলে প্রথমে ওজন কমলেও পরে আর কমে না৷ কাজেই খাওয়া–দাওয়ার দিকে নজর দিন৷ কী খাবেন, কী ভাবে খাবেন তা জানেন? আপনার জন্য রইল টিপস।

শরীরের আভ্যন্তরীণ কাজকর্ম চালাতে যতটুকু ক্যালোরি লাগে (শুয়ে–বসে থাকায় অভ্যস্ত মাঝবয়সী মহিলাদের মোটামুটি ১২০০–১৩০০ ক্যালোরি, পুরুষদের ১৪০০–১৫০০ ক্যালোরি), সেটুকু অবশ্যই খান৷ কাজকর্ম বা ব্যায়াম করলে ১৬০০, ১৮০০, এমনকি ২০০০ ক্যালোরিও খেতে হতে পারে৷ এই ক্যালোরির প্রায় সবটাই যেন স্বাস্থ্যকর খাবার থেকে আসে৷ সকালের চা থেকে রাতের খাবার পর্যন্ত, কম করে বার ছয়েক খান৷ এতে বিপাক ক্রিয়া যেমন সচল থাকে, বাড়াবাড়ি খিদে পায় না বলে বেশি খেয়ে ফেলার আশঙ্কা কমে৷ দিনের শুরুতেই বিপাক ক্রিয়ার হার বাড়াতে প্রোটিনসমৃদ্ধ সুষম খাবার খান৷ না হলে ওজন বাড়ার আশঙ্কা বাড়ে প্রায় সাড়ে চার গুণ৷ দিনে দু’–তিন বার দুধ–চিনি ছাড়া চা বা কফি খান৷ কফির ক্যাফেইন ৫–৮ শতাংশের মতো বিপাক ক্রিয়া বাড়ায়৷ তার জেরে ৯৮–১৭৪ ক্যালোরি খরচ হয়৷ চায়ে বিপাক ক্রিয়া বাড়ে প্রায় ১২ শতাংশ৷ গ্রিন টি আরও ভাল৷ ওজন নিয়ে ব্যায়াম করার সঙ্গে খেলে চর্বি বেশি পোড়ে৷ দিনে ২৫–৩০ গ্রামের মতো ফাইবার খেলে প্রায় ৩০ শতাংশের মতো চর্বি কমে৷ ৩ রকম ফল ও ৩ রকম শাক–সব্জি খেলেই এই পরিমাণ ফাইবার এসে যায়৷ চেষ্টা করুন তিসি, ব্রাসেল স্প্রাউট, অ্যাভোকাডো, ব্রকোলি, আমন্ড বাদাম, প্রাকৃতিক ওটস ইত্যাদি খাদ্যতালিকায় রাখতে৷ দিনে ৬ কাপ ঠান্ডা জল (ঘরের তাপমাত্রায়) খেলে ৫০ ক্যালোরির মতো বেশি খরচ হয়৷ ঠান্ডা জলকে শরীরের তাপমাত্রায় নিয়ে আসতে যে কাজ করতে হয়, তার সূত্রেই এই উপকার পাওয়া যায়৷ অরগ্যানোক্লোরিন মেশানো কীটনাশক চর্বিকোষে সঞ্চিত হয়ে চর্বি গলানোর হার ধীর করে দেয়৷ কাজেই জৈব শাক–সব্জি–ফল খেতে পারলে ভাল৷ দামের কারণে সব কিছু খেতে না পারলেও অন্তত পিচ, আপেল, বেল পেপার, সেলারি, স্ট্রবেরি, চেরি, লেটুস ইত্যাদি খান৷ দিনের প্রতিটি খাবার যেন প্রোটিনে ভরপুর থাকে৷ পেট বহু ক্ষণ ভরা থাকে তাতে৷ বেশি তৃপ্তি হয় বলে টুকটাক খাওয়ার ইচ্ছে কমে যায়, ক্যালোরি খরচও বেড়ে যায় প্রায় ৩৫ শতাংশ৷ চাই ভিটামিন ডি৷ কাজেই দুধ, দই, ছানা, ডিম ইত্যাদি খাওয়ার পাশাপাশি সকালে ২০–৩০ মিনিট রোদ লাগান গায়ে৷ ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যেমন, ফ্যাট–ফ্রি দুধ, দই, ছানা, পনির, ইয়োগার্ট ইত্যাদি খান৷ প্রয়োজনে ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট খেতে হবে৷ নিয়মিত শেল ফিস, চর্বি ছেঁটে ফেলা মাংস, বিন, আয়রন ফর্টিফায়েড সিরিয়াল, পালং ইত্যাদি খান৷ শরীরে আয়রন পর্যাপ্ত থাকলে চর্বি বেশি গলে৷ মাঝেমধ্যে এক–আধ পেগ মদ খেতে পারেন৷ কিন্তু দ্বিতীয় পেগটি ঢালার আগে দু–বার ভাবুন৷ কারণ ফ্যাটের বদলে মদকেই তখন জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করবে শরীর৷ তাই এই প্রক্রিয়া এড়িয়ে যাওয়াই স্বাস্থ্যকর।

আরও পড়ুন

সয়াবিন নেই পাতে? কী ক্ষতি হচ্ছে জানেন?

অন্তত ১৫০ মিনিট মাঝারি ধরনের ঘাম ঝরানো ব্যায়াম করুন। ছবি: পিক্সঅ্যাবে।

ঘুম, মানসিক চাপ ও কাজকর্ম

ভাল করে ঘুমোন৷ খুব কম ঘুমোলে শরীরে খিদের হরমোন বেড়ে যায়৷ কমে তৃপ্তির হরমোন লেপটিন৷ আর বেশি খাওয়ার হাত ধরে ওজন বাড়ে৷বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, পর্যাপ্ত ব্যায়ামের পাশাপাশি যাঁরা দিনভর সচল থাকেন তাঁদের ৩০০–৪০০ ক্যালোরির মতো বেশি খরচ হয়৷ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “বিপাক ক্রিয়া বাড়াতে স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টের ভূমিকা বিরাট৷ কারণ মানসিক চাপ বাড়লে অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন মানুষ৷ অনিয়ম করেন৷ বাড়ে অনিদ্রা ও বেশি খাওয়া৷ সবে মিলে বিপাক ক্রিয়ার হার কমে যায়৷ আবার কর্টিসোল বাড়ে বলে পেটে বেশি চর্বি জমে৷ কাজেই যোগা, মেডিটেশন ও ব্যায়াম করে মানসিক চাপ বশে রাখুন৷ প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন৷”

ব্যায়াম করুন

মাঝবয়সে বিপাক ক্রিয়া বাড়িয়ে টানটান শরীর পেতে গেলে বেশ কসরত করতে হবে৷ সম্ভব হলে জিমে গিয়ে, ভাল ট্রেনারের তত্ত্বাবধানে৷ কী করবেন, কী ভাবে করবেন দেখে নিন৷ বয়সের সঙ্গে শরীরের নমনীয়তা কমে বলে ওয়ার্ম আপ না করলে চোট লেগে যেতে পারে৷ কাজেই ব্যায়াম শুরুর আগে স্ট্রেচিং করার পাশাপাশি, মিনিট পাঁচেক জোরে হেঁটে নিন৷

‘দ্য সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’-এর হিসাব অনুযায়ী, সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট মাঝারি ধরনের ঘাম ঝরানো ব্যায়াম করা দরকার৷ অর্থাৎ দ্রুত গতিতে হাঁটা, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো, নাচ ইত্যাদি৷ ফিটনেস বেশি থাকলে সপ্তাহে ৭৫ মিনিটের মতো জগিং, দৌড়োনো, কিক বক্সিং ইত্যাদি করতে পারেন৷ হার্ট ভাল থাকবে৷ চর্বিও গলবে৷

আরও পড়ুন

সন্তানের সঙ্গে টাকা-পয়সা সংক্রান্ত এ সব ভুল আপনিও করেন?

খাদ্যতালিকায় রাখুন ক্যালোরিসমৃদ্ধ খাবার। ছবির্ পিক্সঅ্যাবে।

‘আমেরিকান কলেজ অফ স্পোর্টস মেডিসিন’-এর মতে এক দিন অন্তর ওজন নিয়ে ব্যায়াম করলে বিপাক ক্রিয়া এত বাড়ে যে শুয়ে–বসে থাকার সময়ও চর্বি গলতে থাকে৷ উপরি পাওনা, পেশি ও হাড় শক্ত হওয়া৷ কাজেই হালকা ওজন নিয়ে বা ওয়েট ট্রেনিং মেশিনে ব্যায়াম করুন৷ খেয়াল রাখতে হবে যাতে সব পেশিরই যেন ব্যায়াম হয় ঘুরিয়ে–ফিরিয়ে৷

‘আমেরিকান কলেজ অফ স্পোর্টস মেডিসিন’-এর চিকিৎসকরা জানিয়েছেন সপ্তাহে অন্তত ২–৩ দিন যোগা, মেডিটেশন, প্রাণায়াম করা জরুরি৷ এতে নমনীয়তা বেড়ে বড় ধরনের ব্যায়াম করার সুবিধে হয়৷ কমে মানসিক চাপ৷

সব শেষে হালকা স্ট্রেচ বা ২–৫ মিনিট হেঁটে শরীরকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনুন৷

Health স্বাস্থ্য Health Tips Fitness Tips Metabolism বিপাক
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy