Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Heart Attack

ধূমপানে বাড়ে মহাধমনী ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা, দরকার দ্রুত চিকিৎসা

মহাধমনীর মোট ৩টি স্তর। বাইরের দিকের স্তর ফেটে গেলেই রোগী অত্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়েন। আর ৩টি স্তর একসঙ্গে ফেটে গেলে রোগীর জীবন বাঁচানো একপ্রকার অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।

মহাধমনীর সমস্যায় বাড়ে হৃদরোগের আশঙ্কাও।

মহাধমনীর সমস্যায় বাড়ে হৃদরোগের আশঙ্কাও। ছবি: সংগৃহীত

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১১:২১
Share: Save:

বুকে ব্যথা আর নিঃশ্বাসের কষ্ট বহু ক্ষেত্রেই হৃদরোগের লক্ষণ। এই বিষয়টা অনেকেরই জানা। মণিপুরের ৪৭ বছরের স্যামম বিরজিৎ সিং এই উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যান। যথারীতি হৃদরোগের চিকিৎসা শুরু হয়। কিন্তু উপসর্গ ফিরে আসে। তাই কোনও ঝুঁকি না নিয়ে তাঁকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। হৃদযন্ত্রের পরীক্ষা ও সিটি অ্যাঞ্জিওগ্রাম করে জানা যায়, তাঁর মহাধমনীর অসুখ হয়েছে। ডাক্তারি পরিভাষায় এর নাম ‘অ্যাওর্টিক ডিসেকশন স্ট্যানফোর্ড টাইপ বি’।

মহাধমনী বা অ্যাওর্টা শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন যুক্ত রক্ত সরবরাহ করে। তাই এই অসুখের দ্রুত চিকিৎসা না হলে রোগীর অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। তাই হয়েছিল বিরজিৎ সিংয়ের। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অতনু সাহা সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেননি। সম্পূর্ণ নতুন এক পদ্ধতি ‘ফ্রোজেন এলিফ্যান্ট ট্রাঙ্ক প্রসিডিওর’-এর সাহায্যে আক্রান্ত মহাধমনী মেরামত করে একই সঙ্গে ‘স্টেন্ট’ প্রতিস্থাপন করেন। মহাধমনীর আক্রান্ত অংশে যে গ্রাফটটি লাগানো হয়, তার আকার অনেকটা হাতির শুঁড়ের মতো বলেই, অস্ত্রোপচারের এমন নাম। অতনু সাহা ও তাঁর সহযোগীরা টানা ১৫ ঘণ্টা ধরে এই জটিল অস্ত্রোপচারটি করে রোগীর প্রাণ বাঁচান। পূর্ব ভারতে এই চিকিৎসা প্রথম।

তবে মহাধমনী ফেটে গেলে দ্রুত অস্ত্রোপচার করে রোগীকে জীবন ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনা প্রথম নয়। প্রায় ১০–১২ বছর ধরে বরিষ্ঠ কার্ডিয়াক সার্জন কুণাল সরকার এই পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার করে প্রচুর রোগীর প্রাণ বাঁচিয়েছেন। কুণাল জানালেন, ভবিষ্যতে এই পদ্ধিতে আরও বেশি রোগীকে সুস্থ করে তোলার বিষয়ে তিনি আশাবাদী। একই সঙ্গে এটাও আবার প্রমাণিত হল, কলকাতায় হৃদরোগের বিশ্বমানের চিকিৎসা সম্ভব।

‘ফ্রোজেন এলিফ্যান্ট ট্রাঙ্ক’ পদ্ধতিতে চিকিৎসা।

‘ফ্রোজেন এলিফ্যান্ট ট্রাঙ্ক’ পদ্ধতিতে চিকিৎসা।

অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপের কারণে রোগীদের মহাধমনী ফেটে গিয়ে মারাত্মক অসুখের ঝুঁকি অনেক বাড়ে। মহাধমনী হল সব থেকে বড় রক্তবাহী ধমনী। হৃৎপিণ্ডের বাঁদিকের ভেন্ট্রিকল থেকে বেরিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেনযুক্ত পরিশুদ্ধ রক্ত সরবরাহ করাই এর কাজ। এর স্থিতিস্থাপকতা অন্য ধমনীর থেকে বেশি। এই ধমনীর কোনও অংশ দূর্বল হয়ে গেলে রক্তের চাপে তা ফেটে যেতে পারে।

মহাধমনীর মোট ৩টি স্তর আছে। বাইরের দিকের স্তর ফেটে গেলেই রোগী অত্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়েন। আর ৩টি স্তর একসঙ্গে ফেটে গেলে রোগীর জীবন বাঁচানো একপ্রকার অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। ধূমপায়ী ও উচ্চ রক্তচাপ আছে এমন পুরুষদের মধ্যে এই অসুখের প্রবণতা বেশি। হবু মায়েদেরও এর আশঙ্কা থাকে। অতনু সাহা জানালেন, এই সমস্যায় বুকে ভয়ানক যন্ত্রণা হয়। ক্রমশ ব্যথা পিঠের দিকে ছড়িয়ে পড়তে পারে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে রোগীকে সারিয়ে তোলা মুশকিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Heart Attack
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE