প্রতীকী ছবি
কখনও মেঘ কখনও রোদ। এমন আবহাওয়ায় অসুখবিসুখের প্রকোপ বাড়ে। কেননা, ভ্যাপসা গরম আর রাতের ঠান্ডা মশা ও জীবাণুদের বাড়বাড়ন্তের জন্য একেবারে আদর্শ আবহাওয়া। সঙ্গে আছে ডেঙ্গি আর ম্যালেরিয়ার জীবাণুরাও। তাই শিশু থেকে বয়স্ক, ডায়াবিটিক— যাঁদেরই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলক ভাবে কম, তাঁদের জ্বর, সর্দি, হাঁচির ঝুঁকি বাড়ে।
ব্যস্ত জীবনে ছুটিছাটার অবকাশ কম। তাই অনেকেই শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে না বাড়তেই জ্বরের ওষুধ খাওয়া শুরু করেন। কিন্তু শরীরের তাপমাত্রা ১০১ ডিগ্রি না ছাড়ালে জ্বরের ওষুধ না খাওয়াই ভাল।
তবে যে সব শিশুর তড়কা বা কনভালশন হয় তাদের শরীরের তাপমাত্রা একটু বাড়লেই হলেই ওষুধ দিতে হতে পারে। আসলে সাধারণ ভাইরাল ফিভার নিজে থেকেই সেরে যাওয়ার কথা। প্রয়োজন কেবল বিশ্রাম আর পর্যাপ্ত জলীয় খাবার।
আরও পড়ুন: আজই শুরু করুন এ সব, তলপেটের মেদ সহজে ভ্যানিশ!
রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার প্রকাশ জ্বর
জ্বর আসলে কিন্তু নিজে কোনও অসুখ নয়, উপসর্গ। শরীরে কোনও জীবাণু প্রবেশ করলে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে জীবাণুদের বার করে দেওয়ার চেষ্টা করে। আর এই কারনেই শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এখনকার আবহাওয়ায় জ্বরের প্রবণতা বাড়ে। ‘এক্সট্রিম এজ গ্রুপ’ অর্থাৎ শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে জ্বরের ঝুঁকি বেশি। এ ছাড়া অন্যান্য ক্রনিক অসুখ যেমন ডায়বিটিস, ক্রনিক কিডনির অসুখ, অ্যানিমিয়া-সহ নানা রোগ আছে, তাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল বলে জ্বরের ঝুঁকি বেশি। রোজকার জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন এনে স্বাস্থ্যকর উপায়ে জীবন চালালে ইমিউনিটি সিস্টেমকে জোরদার করা যায়। তাহলেই ঘন ঘন জ্বরজারির ঝুঁকি কমবে।
জ্বর হলেও ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বাড়ে
আমাদের ধারণা ডায়রিয়া হলে ওআরএস দিতে হয় ডিহাইড্রেশনের জন্যে। কিন্তু শরীরের তাপমাত্রা বাড়লেও শরীরে জলের ঘাটতি দেখা যায়। তাই জ্বরে লিকুইড ডায়েটের উপর জোর দিতে হবে। বেশি জল খেলে অনেক সময় বমি পায়, তাই অল্প অল্প করে বারে বারে জল দিতে হবে। একই সঙ্গে স্যুপ, ফলের রস, সরবত, দইয়ের ঘোল বা গরম দুধ, ডাল এই ধরণের খাবার খেলে আর ডিহাইড্রেশনের ভয় থাকে না। প্রসঙ্গত কনকনে ঠান্ডা খাবার না খেলেই হল, দই বা কলা খেলে ঠান্ডা লেগে জ্বর বাড়ে না। কাজেই এই ভুল ধারণা ভাঙুন।
আরও পড়ুন: হঠাৎ ব্লাড প্রেশার কমে যাচ্ছে? এ সব করতে ভুলবেন না
জ্বর এলে তরল জাতীয় খাবারে আস্থা রাখুন। ছবি: পিক্সঅ্যাবে।
জ্বর এলেই ওষুধ খেয়ে স্কুল বা অফিসে যাবেন না
আজকাল সকলেই ব্যস্ত। তাই অসুখবিসুখ নিয়েও কাজ করে যেতে হয়। জ্বর হলেও মায়েরা বাচ্চাদের ওষুধ খাইয়ে স্কুলে পাঠান। এমন অভ্যাস অত্যন্ত ক্ষতিকর। জেনে রাখুন ইনফ্লুয়েঞ্জার সব চেয়ে বড় ওষুধ বিশ্রাম আর জলীয় খাবার। তাই দু’-এক দিন বাড়িতে বিশ্রাম নিলে ভাল হয়। তাপমাত্রা অল্প বাড়ুক অথবা অত্যধিক— সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা হলে মাথা ব্যথা-সহ শরীর জুড়ে ব্যথার প্রবণতা থাকে।
সাধারণ জ্বর হলে গা হাত পা ব্যথা কমাতে অনেকেই আইব্রুফেন বা অ্যাসপিরিন জাতীয় ব্যথার ওষুধ খান। কিন্তু প্রত্যেক বছর এই সময় ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্ত দেখা যায়। এমন সময় এই ধরনের ওষুধ ভুলেও খাবেন না। ডেঙ্গি হেমারেজিক ফিভার হলে অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মারাত্মক। এই ধরণের ওষুধ থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়ে।
অজানা জ্বর
ইদানীং প্রায়ই অজানা জ্বরের কথা শোনা যাচ্ছে। তার থেকে রোগীর অবস্থাও খারাপ হয়ে যেতে পারে। রোগ নির্ধারনের প্রয়োজনীয় পরীক্ষার ব্যবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। ব্যাকটিরিওলজি বা মাইক্রোবায়োলজির সাহায্যে জ্বরের জীবাণু চেনা খুব কঠিন নয়। নির্দিষ্ট জীবাণুকে চিহ্নিত করতে কিছুটা সময় লাগলেও ভাইরাস অথবা ক্ষতিকর ব্যাকটিরিয়াকে চেনা খুব অসুবিধে নয়। ডেঙ্গি-সহ অন্যান্য ভাইরাস প্রায়ই নিজেদের চরিত্র বদলে ফেলে, তখনই জীবাণুদের চিনতে সময় লাগে। তবে যে কোনও ভাইরাল জ্বরে যদি মায়োকার্ডাটিস বা হার্টে সংক্রমণ হয়, তখনই রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
আরও পড়ুন: সিগারেট ছাড়ার সমস্যা? এ সব উপায়ে আজই ছাড়ুন
মশারি টাঙানোর অভ্যাস তৈরি করে রাশ টানুন ডেঙ্গিতে। ছবি: পিক্সঅ্যাবে।
ডেঙ্গি বা ম্যালেরিয়া হলে?
তিন দিন হয়ে গেলেও যদি জ্বর না কমে, তা হলে ম্যালেরিয়া প্যারাসাইট টেস্ট ও এনএসওয়ান অ্যান্টিজেন টেস্ট করিয়ে নেওয়া উচিত। ভাইরাল জ্বর হলে দু’-তিন দিনের মধ্যেই রোগীর কষ্ট কমে যায়। তবে রোগী যদি নেতিয়ে পড়ে, কষ্ট বাড়ে তা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। অনেক সময় জ্বরের সঙ্গে পেটের গোলমাল ও বমি থাকতে পারে। তাই ডিহাইড্রেশনের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হতে পারে।
মশার সঙ্গে আড়ি
শহরে মশারি ব্যবহার প্রায় নেই বললেই চলে। ডেঙ্গি ম্যালেরিয়ার বাড়বাড়ন্তের এটা এক অন্যতম কারণ। তবে সব চেয়ে আগে প্রয়োজন মশা দমন করা। নিজেদের বাড়িতে তো বটেই,আশপাশে কোথাও জল জমতে দেখলে সতর্ক হতে হবে। বিশেষ করে, যে সব অঞ্চলে নতুন বাড়ি তৈরি হচ্ছে সেই অঞ্চলের পরিবেশের দিকে নজর রাখুন। সরকারের পক্ষে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মশার লার্ভা ধ্বংস করা সত্যিই সম্ভব নয়। নিজেদের সচেতনতা বাড়াতে হবে। মশার বংশ বিস্তার বন্ধ না করলে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার বাড়বাড়ন্ত আটকানো মুশকিল। মশার লার্ভা দেখলেই তা বিনাশের ব্যবস্থা করা ভীষণ ভাবে জরুরি। আমরা প্রত্যেকে এই ব্যাপারে সজাগ থাকলে তবেই সমস্যার সমাধান সম্ভব। বিকেল হলেই বাড়ির দরজা-জানলা বন্ধ করে দিলে মশার হাত থেকে কিছুটা রেহাই মেলে। আর মশারি টাঙিয়ে ঘুমনো বাধ্যতামূলক। তবেই ডেঙ্গি ম্যালেরিয়ার থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পাওয়া যাবে। আর ভাইরাল ফিভার রুখতে স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা মেনে চললেই সুস্থ থাকবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy